Site icon অবিশ্বাস

২০১৮ সা‌লে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪৪৩৯ জনের

সড়ক দুর্ঘটনা টাইমলাইন | অবিশ্বাস

গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৩৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ওই বছর সারাদেশে মোট ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংগঠনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন।

মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রতিবেদন প্রকাশ আনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।

এর আগে ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১৮ সালে সড়কে ৫ হাজার ৫১৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২২১ জন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৮টি। এসব দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৬ জন। আহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮০।

লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪৩৯ জন মানুষের প্রাণ গেলেও ৭ হাজার ৪২৫ জন আহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর ৭৪০ জন মারা গেছেন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা ২০১৭ সালের চাইতে ২৪৬ জন কমেছে।’ ছয়টি জাতীয় দৈনিক, শাখা সংগঠনগুলোর রিপোর্ট, টেলিভিশন, অনলাইন পত্রিকার তথ্য ও অপ্রকাশিত ঘটনা থেকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘গত বছর গাড়িচাপায় ১ হাজার ৫৩৫ জন, মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮৭৩ জন, উল্টোপথে চলতে গিয়ে ২৭১ জন, গাড়ি খাদে পড়ে ১৫৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫৬৬ জন চালকও রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬০ জন মোটরসাইকেল চালক, ৬৪ জন বাসচালক ও ৫৯ জন ট্রাক চালক রয়েছেন।’

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত বছরের জুন মাসে সবচেয়ে বেশি ৩৮১ জন দুর্ঘটনায় নিহত হন আর সবচেয়ে কম নিহত হন নভেম্বরে ২৪৫ জন।’

জেলাভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর সবচেয়ে বেশি ঢাকা মহানগর ও আশপাশের ৩৩৯টি দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জন নিহত হয়েছেন। গত বছর নিহতের সংখ্যা ২০১৭ সালের মৃত্যু সংখ্যা থেকে কম ছিল। ২০১৭ সালে মারা যান ৫ হাজার ৬৪৫ জন আর ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৫২ জন।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘২০১৮ সালে বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বড় বড় শহর ও হাইওয়েতে। ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন : ভ্যান, রিকশা, নসিমন, অটোরিকশা ইত্যাদি বেশি দায়ী বলে প্রতীয়মান হয়।’

‘আইন অমান্য করে ধীর গতির বাহন মহাসড়কে এখনও চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। অবৈধ যানবাহন চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাও আছে। তাছাড়া এ সমস্ত ধীর গতির গাড়ির হেডলাইট না থাকার কারণে ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টিতে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থকে।’

‘দুর্ঘটনারোধে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি স্কুলের পাঠ্যসূচিতে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়গুলো অন্তুর্ভূক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।’

সড়ক দুর্ঘটনারোধে পরামর্শও দিয়েছেন চিত্রনায়ক। তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, নিদির্ষ্ট স্থান ছাড়া যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানো, ওভারটেকিং, পাল্টাপাল্টি ও বেপরোয়াগতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল বোঝাই করা, ওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস বা জেব্রা ক্রসিং থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ব্যবহার না করার প্রবণতাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

‘সকল মহাসড়কে এবং প্রধান সড়কে একমুখী চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘ এবং উচ্চতা সম্পন্ন সড়ক বিভাজন তথা রোড ডিভাইডারের ব্যবস্থা করতে হবে। মহাসড়ক ও প্রধান সড়ককে অবশ্যই নূন্যতম চার লেনে উন্নীত করতে হবে। পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করে যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে ফুটপাত তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় যেন ফুটপাত দখল না হয়-এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’

সড়কের ত্রুটিগুলো অচিরেই দূর করতে হবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ত্রুটিগুলো দূর করার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে গেছে। রাজনৈতিক ইশতেহারে বর্তমান সরকার যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল আন্তরিকতার সঙ্গে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ২০১১ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ইলিয়াস কাঞ্চন।

বিভিন্ন সংস্থার নিহতের সংখ্যার তারতম্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এজন্য সরকারকে একটা প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে। তারা (সরকার) না পারলে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হোক।’

‘চালকের বিচারের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিচার হচ্ছে না, কারণটা হচ্ছে আমাদের দেশের সরকাররা, আপনারা (সাংবাদিক) জানেন… পরিবহন সেক্টরের লোকজনদেরকে, সংগঠনকে….নেতাদেরকে খুবই ভয় পায়। এই ভয় পাওয়ার জন্যই তারা (সরকার) সেভাবে ব্যবস্থা নেন না এবং আমাদের দেশের মানুষও কিন্তু….। যখনই পরিবহন বন্ধ হয়ে যায় তখনই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় এবং মানুষ উত্তেজিত হয়ে যায় এবং সরকার মনে করে এই বুঝি আমার গদি চলে গেল… ভোট মনে হয় সামনে পাইলাম না।’

‘আমি বলবো আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পরপর তিনবারসহ চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। উনার জীবনের আর কিছু পাওয়ার আছে বলে মনে করি না। এখন অন্তত এই সড়কের মড়ক থেকে এ দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য এখন অন্তত এটাকে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়ে …..। আমি মনে করি আমার যে সাজেশনগুলো তা বাস্তবায়ন করা যায়’-যোগ করেন ইলিয়াস কাঞ্চন।

Exit mobile version