Site icon অবিশ্বাস

নাটোরে খ্রিষ্টান ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৫ জুন রোববার দুপুরে সুনীল গোমেজ (৬০) নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার বনপাড়া খ্রিষ্টানপাড়ায় দুপুর ১২টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

 

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ আইএসের সংবাদ সংস্থা আমাকের বরাত দিয়ে এক টুইটার বার্তায় এ খবর প্রচার করছে। হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দায় স্বীকার করার দাবি জানাল আইএস। একই বার্তায় গত মাসে বান্দরবানে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যার দায়ও স্বীকার করেছে আইএস।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) শ্যামল কুমার মুখার্জি  বলেন, নিহত সুনীল গোমেজ বনপাড়ায় নিজের বাড়ির সাথের দোকানে মুদি ব্যবসা করতেন। তিনি নিজের মুদিদোকানে বসে ছিলেন। সেখানেই হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তাঁর ঘাড়ের পেছনে ধারালো অস্ত্রের তিনটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
খ্রিষ্টানপাড়ার বাসিন্দারা জানান, সুনীল সকালে বাড়ির পাশের গির্জায় সাপ্তাহিক প্রার্থনায় যোগ দেন। প্রার্থনা শেষে বনপাড়া বাজারে কিছু জিনিসপত্র কেনার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া মুদিদোকানে বসেন। দুপুর ১২টার কিছু পর দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দুজন ভ্যানচালক দোকানে তাঁর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন সেখানে ছুটে যায়।
বেলা দেড়টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সুনীলের শরীরের ওপরের অংশ দোকানের বাইরের দিকে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতের মুঠোয় কিছু টাকা তখনো ধরা।
দোকানটি আধা পাকা বসতবাড়ির একটি কক্ষে হলেও বাড়ির ভেতরের কেউ এ ঘটনা বুঝতে পারেনি বলে জানান ওই বাড়িতে ভাড়া থাকা রিজিয়া বেগম।
সুনীলের মেয়ে স্বপ্না গোমেজের বিয়ে হয়েছে কয়েক বাড়ি পরেই। ছেলে স্বপন বছর খানেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। খবর পেয়ে স্বপ্না ছুটে আসেন বাবার বাড়িতে। তিনি জানান, ওই বাড়িতে তাঁর বাবা ও মা থাকতেন। দুটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া ছিল। মা জাসিনতা গোমেজ তাঁর অসুস্থ নানিকে দেখতে গত শনিবার পাবনার চাটমোহরে গেছেন।
স্বপ্না বলেন, তাঁর বাবা আগে বিভিন্ন গির্জায় মালির কাজ করতেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় মালির কাজ ছেড়ে বাড়ির একটি কক্ষে মুদিদোকান খুলে বসেন। তাঁর কোনো শত্রু ছিল বলে তাঁদের জানা নেই।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিন হওয়ায় প্রতিবেশীরাও ওই সময় নিজ নিজ বাড়িতে বা গির্জায় সময় কাটাচ্ছিলেন। তাই কেউ কিছু বুঝতে পারেননি।
বনপাড়া ধর্মপল্লির সহসভাপতি ব্যানেডিক গোমেজ জানান, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে দুর্বৃত্তরা ক্রেতা সেজে দোকানে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
প্রথম আলোর দিনাজপুর অফিস জানায়, সুনীল গোমেজের ছোট ভাই প্রশান্ত গোমেজ রংপুর জেলার খাইলশা মিশনের ফাদার। এর আগে তিনি দিনাজপুরের মরিয়ামপুর চার্চের ফাদার ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারে ছয় ভাইয়ের মধ্যে নিহত সুনীল সবার বড়। ধার্মিক ও নিরীহ প্রকৃতির মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর কোনো শত্রু ছিল না।
প্রশান্ত গোমেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনাজপুরে ধর্মযাজক পিয়েরো পিচমের ওপর আক্রমণের পর থেকে বিভিন্ন মিশনে কর্মরত যাজকেরা উদ্বিগ্ন আছেন। অথচ আমরা সব সময় সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। কিন্তু এবার আক্রমণ হলো খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের ওপর। এটা অপ্রত্যাশিত।’
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক ইনাম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে রাজশাহী ও এই অঞ্চলের জেলাগুলোতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে যে হামলাগুলো চালানো হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে এই হামলার মিল রয়েছে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দিনাজপুরে খ্রিষ্টান ধর্মযাজক পিয়েরো পিচম, হোমিও চিকিৎসক এবং ঈশ্বরদীতে খ্রিষ্টান যাজক লুক সরকারকে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা।
সুনীল গোমেজ হত্যার প্রতিবাদে বনপাড়া ধর্মপল্লির পক্ষ থেকে গতকাল বিকেলে বনপাড়া চার্চের সামনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন সমবেত হয় এবং বনপাড়া বাজারে নাটোর-পাবনা সড়কে মানববন্ধন করে।

প্রথম আলো । The daily star

Exit mobile version