গত ১২ মার্চ (২০০৩) জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘প্রসঙ্গ ইসলাম’ কলামে অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ুমের নিবন্ধ ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার’ পড়লাম। তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে ইসলামই সর্বপ্রথম নারীদের সম্মানের মসনদে অধিষ্ঠিত করেছে।’ ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে নারীদের বলা হত ‘শয়তানের ফাঁদ’, নারীদের সঙ্গে ব্যবহার করা হত গৃহপালিত পশুর মতো, আসবাবপত্রের মতো, পণ্যসামগ্রীর মতো। নারীরা পুরুষের সেবা করতো। ইসলাম নারীদের এই করুণ অমানবিক হাল থেকে উদ্ধার করে তাদের মানুষ হিসেবে যথাযোগ্য ন্যায্য অধিকার এবং সম্মানজনক মর্যাদা নিশ্চিত করে; বহু বিবাহ প্রথা ও অসংখ্য উপপত্নী রাখার বিপক্ষে ও সম্মানজনক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে।
কুরআনের বাণী (১৬ : ৫৮-৫৯) উল্লেখ করে প্রফেসর সাহেব বলেছেন, কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে খুশি হওয়া উচিত। হাদিসের কথা ব্যক্ত করে বলেছেন, যে স্ত্রীলোকের গর্ভে প্রথম কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে সেই স্ত্রীলোক পুণ্যময়ী।
তিনি উল্লেখ করেছেন (কুরআনের বাণীসহ) যে, নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের এবং নারী পুরুষের পরিচ্ছদ, যেমন পুরুষ নারীর পরিচ্ছদ। উপপত্নী ও রক্ষিতা রাখার কুপ্রথাকে উৎখাতের সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। স্ত্রীকে স্বামীর সংসারে সম্রাজ্ঞীর মর্যাদা ইসলাম দিয়েছে- নারী হচ্ছে তার স্বামী ও সন্তানদের শাসক, সুতরাং স্বামী যেমন পরিবারের শাসক, নারী তেমনি স্বামী ও সন্তানদের শাসক (বোখারী)।
তালাক সম্পর্কে প্রফেসর সাহেব সূরা নিসার আয়াত উল্লেখ করেছেন। মায়ের খিদমত করার কথা বলেছেন হাদিস উল্লেখ করে।
ইসলামের পূর্বে নারীদের ধন সম্পত্তির উত্তরাধিকার ছিলো না। ইসলামই নারীকে পুরুশের সহশরিকানা স্বত্ব স্থির করে দেয়।
নারী স্বাধীনতা, নারী মুক্তি, নারীর অধিকার ইসলামই দিয়েছে।
প্রফেসর সাহেব এরশাদ করেছেন- ইসলাম নারীকে ‘অবরোধবাসিনী’ হতে বলে না; তবে নারী যাতে লোলুপ দৃষ্টির শিকার না হয়, তার সম্ভ্রম যাতে বজায় থাকে, সেজন্য যথাযথ পর্দার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ হল- মুমিন পুরুষদের বল তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। … মুমিন নারীদের বল তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। তারা যেন, যা সাধারণত প্রকাশ থাকে, তা ছাড়া, তাদের সৌন্দর্য শোভা প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বাহুদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। (২৪:৩০-৩১)।
পরিশেষে, প্রফেসর সাহেব বলেছেন, ইসলামের পথ ধরেই নারীর মান-মর্যাদা ও অধিকার যেমন নিশ্চিত হয়, তেমনি নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতার পথ পরিক্রম করার দিশা পাওয়া যায়।
কিন্তু বাস্তবে মুসলিম বিশ্বের নারী জাতি যে বেদিশা। কারণ, ইসলাম-পূর্বকালে আরবে মেয়েদের যে স্বাধীনতা ও অধিকার ছিলো তার অবদমন হয়েছে। আরবে প্রাথমিক ইসলাম যুগে বিবাহ ও যৌনাচারে প্রাক-ইসলামী আরবীয় প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারেনি। এর কারণ নির্ধারণ করতে গিয়ে ঐতিহাসিকরা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, সে সময়ে আরবে মাতৃতান্ত্রিক না পিতৃতান্ত্রিক সমাজ পদ্ধতির কোনটা বেশি প্রবল ছিলো? আসল প্রশ্ন ছিলো, এই প্রথার মাঝে ইসলাম কোনটাকে নিষিদ্ধ করে আর কোনটাকে উৎসাহ জোগায়। এই প্রশ্নে ইতিহাসবিদদের মাঝে তীব্র মতভেদ দেখা দেয় যারা ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেছেন। বোখারীর শহীদ হাদিস, ইবনে হাবিব আল বাগদাদীর ‘কিতাবুল মুহাব্বর’ এবং ইবনে সাদ- এর ‘কিতাবুল তাবাকাত’ কিছু খোলামেলা কথা বলেছে। এরা স্বীকার করেছেন যে, ইসলাম কর্তৃক গৃহীত পিতৃতান্ত্রিক বিবাহ প্রথা অনেক ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিকতা বিরোধী ছিলো। কারণ অনেক বিবাহ বন্ধনের সন্তান শারীরিকভাবে পিতৃপ্রদত্ত ছিলো না, যেহেতু পূর্ব প্রথায় নারী স্বাধীনতা যৌন ক্ষেত্রে বজায় ছিলো এবং বিবাহিত রমণীরা ইচ্ছা করলে তাঁবুর দ্বারপ্রান্তে পর্দা ঝুলিয়ে স্বামীকে বুঝিয়ে দিত যে তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। মেয়েদের এ ধরনের পূর্ন স্বাধীনতা প্রাক-ইসলামিক। আধুনিক যুগেও আরবীয় রমণীদের যে যৌন স্বাধীনতা বিরাজ করছে তার প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন সালাহ আহমদ আল-আলী। তিনি মনে করেন, বেদুইন সমাজ পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠিত হলেও নারীর স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়নি। তিনি দাবি করেন, মূতা এবং সুবাদা বিবাহ পদ্ধতি, প্রাক-ইসলামিক যুদে ‘সাদাহ’ (deviant practice) হিসেবে প্রচলিত ছিলো। (সূত্র: মুহাদারাত ফিল- তারিখ আল আরব, বাগদাদ, ১৯৬০; পৃষ্ঠা ১৩৬, ১৪১)। এ প্রসঙ্গে বোখারী বলেন, মূতা হচ্ছে অস্থায়ী বিবাহ পদ্ধিত (প্রাক-ইসলামী যুগে ‘সাদাহ’)- পুরুষ মেয়েটিকে বলবে, আমি তোমাকে কিছুদিনের জন্য ভোগ করব অর্থের বিনিয়ে। ‘মূতা’ অর্থ ভোগের আনন্দ, কারণ এর মূখ্য উদ্দেশ্য যৌন সম্ভোগ, সন্তান উৎপাদন বা সংসার পালনের জন্য নয় (দ্র. আল জাসী আল-সহি পৃ. ১৩০-৩১)।
ইবনে সাদের পুস্তক থেকে যেসব জীবনী তথ্য পাওয়া যায়, তাতে বাণিজ্য কেন্দ্র মক্কা নগরী কিংবা কৃষি কেন্দ্র মদিনা শহরে বহু বিবাহ প্রচলিত ছিলো না। এ বিষয়ে গার্ট্রুড স্টার্নও একমত। মক্কার পুরুষরা যদিও গোত্রের বাইরে বিবাহ করতো, কিন্তু মেয়েরা বাপের বাড়ি ছেড়ে স্বামীর ঘরে আসত না। কিন্তু মদিনার লোকেরা এ ব্যবস্থাও অনুসরণ করেনি। স্টার্ন বলেন, প্রাক-ইসলামিক যুগে মদিনাতে বহুবিবাহ প্রথা সম্বন্ধে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং তখন আরব দেশে নিয়মবদ্ধ বহুবিবাহের প্রচলন ছিলো না। (সূত্র: Marriage in Early Islam পৃষ্ঠা ৬২)। উহাদরণস্বরূপ বলা যায় প্রফেটের প্রপিতামত হাশিম বিবাহ করেন স্থান বহির্ভূত মদিনায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা সালামা বিনতে আমরকে। এই বিবাহের ফলে প্রফেটের দাদা আবদুল মোত্তালেবের জন্ম হয় এবং তিনি মায়ের কাছেই মদিনাতে লালিত পালিত হন। কারণ সালামা বাপের বাড়ি ছেড়ে মক্কায় স্বামীর ঘর করতে আসেননি (সিরাতুন নবী, ইবনে হিশাম)। সালামা বিবাহ করেছিলেন এই শর্তে যে, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব তারই, তার স্বামীর নয়; এবং পছন্দ না হলে যে কোন মুহূর্তে স্বামীকে ত্যাগ করার অধিকার তারই; স্বামীর কোনো বক্তব্য নেই। (ইবনে হিশাম)।
প্রফেটের পিতা আবদুল্লাহও মাতৃতান্ত্রিক প্রথায় বিবাহ করেছিলেন, অন্য গোত্রে, আমিনা বিনত ওয়াহাবকে। আবদুল্লাহ যখন মারা যান, প্রফেট তখন মায়ের গর্ভে। শিশু প্রফেট মায়ের সঙ্গেই ছিলেন মায়ের মৃত্যুকাল পর্যন্ত। তখন তার বয়স ছ’বছর। মায়ের মৃত্যুর পরেই তার পিতৃবংশ অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, যে সাকিনা বিনতে হোসেন (আলীর দৌহিত্রী) ইসলামী যুগেও একাধিক বিয়ে করে স্বামী ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে আসতেন। (সূত্র: আল বাগদাদী আল মুহারর, পৃষ্ঠা ৪৩৮)।
সে সময় আরবের মেয়েরা দাসী-বাঁদী ছিল না, তাদের স্বামীদের। তাদের ব্যক্তি ও যৌন-স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছিলো এই কারণে যে, ঐ সময় পর্যন্ত মেয়েদের পেছনে নিজ গোত্রের মানুষদের পূর্ণ সমর্থন ছিলো।
ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় বহুবিবাহের বিরুদ্ধে মেয়েদের বিদ্রোহ এবং যৌন স্বাধীনতার ঐতিহাসিক উদাহরণ পাওয়া যায় প্রফেটের মৃত্যুর পর যখন সারা আরব পেনিনসুলায় ধর্ম বিরুদ্ধ আন্দোলন শুরু হয়। তখন আবু বকর খলিফা। অনকে কর দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং অনেক ‘ভুয়া’ প্রফেটও গজিয়ে ওঠে। ইবনে হাবিব আল বাগদাদী বলেছেন, এই নারী আন্দোলনের সঙ্গে হাদ্রামতের ও কিন্দার ছয়জন স্বাধীনচেতা নারী হাতে মেহেদী রং লাগিয়ে ও তাম্বুরা বাজিয়ে আন্দোলনে নামে। খলিফার নির্দেশে কিন্দার গভর্নর কঠোরভাবে এ আন্দোলন দমন করেন। আন্দোলনে শামিল নারীদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের উচ্চবংশীয় মর্যাদাসম্পন্ন মহিলা ছিলেন। এর থেকে পরিষ্কার হচ্ছে মেয়েরা নববিধানের বিরুদ্ধে ছিলো, কারণ তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার খর্ব হয়েছে। ইসলামী ব্যবস্থায় মেয়েরা পুরুষের দাসী-বাঁদীতে পরিণত হয়েছে। ইসলামে বহুবিবাহ প্রথা ও অসংখ্য উপপত্নী রাখার পদ্ধতি চালু হয়েছে।
বহুবিবাহ কুরআন সিদ্ধ করেছে (৪:৩) চারজন পর্যন্ত এবং অসংখ্য দাসী (তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের)। মেয়েদের শষ্যক্ষেত্র বলা হয়েছে। যেভাবে পার চাষ কর; ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করিতে পার। (২:২২৩)। স্বামীর ইচ্ছামত শয্যাসঙ্গিনী না হলে প্রহার কর। পুরুষকে নারীর উপর স্থান দেয়া হয়েছে, শ্রেষ্ঠ করা হয়েছে। কোরান বলছে- পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ, আল্লাহ তাহাদের এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্যই যে পুরুষ তাহাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহর হিফাজতে উহারা হিফাজত করে। স্ত্রীদের মধ্যে যাহাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাহাদিগকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাহাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাহাদিগকে প্রহার কর। (৪:৩৪)। স্ত্রীলোকের গর্ভে কন্যা সন্তান জন্মালে, সে স্ত্রীলোকের স্বামীগৃহে ঠাঁই হয় না। পুরুষটি দ্বিতীয় বিবাহ করে। হাদিসের কথা মেনে কেউ সেই স্ত্রীকে ‘পুণ্যময়ী’ বলে না, বলে ‘পোড়াকপালী অলক্ষুণে।’
বাস্তব ক্ষেত্রে নারীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার পুরুষশাসিত সমাজে নেই, যদি তাই হতো, তাহলে ‘বিশ্ব নারী দি্স’, ‘নারী অধিকার’ আইনের জন্য রোল উঠতো না। পুরুষের কাছে নারী ছেঁড়া পরিচ্ছদ- ময়লা, জীর্ণ হলে ফেলে দেয়া হয়; কিন্তু নারীরা কোন অবস্থায় (আইনের আশ্রয় ছাড়া) স্বামীদের ত্যাগ করতে পারে না। নারী কোনো দিনই সন্তান ও স্বামীর শাসক হতে পারে না। বোখারী কেতাব শুধু অলঙ্কৃত গ্রন্থ।
১৯৬১ সালের পূর্বে নারী কোনকালেই স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার পায়নি। এমনকি আইনেও তালাক দেয়া সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই স্বামীদের, শুধু মুখের কথা, তালাক হয়ে যেতো। ধন-সম্পত্তির উত্তরাধিকারে কুরআনিক আইনে পুরুষের অর্ধেক, তাও বাস্তবক্ষেত্রে তারা বঞ্চনার শিকার হয়।
ইসলাম নারীকে অবরোধবাসিনী করেছে। অবরুদ্ধ করেছে ঘরের মধ্যে। নারীকে কালো বোরখার মধ্যে আপাদমস্তক মুড়ে দিয়েছে; দৃষ্টিকে সংযতন করা, লজ্জাস্থানের হিফাজত করা তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করা (২৪; ৩০-৩১)। এখানে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে মুড়ে শুধু চোখ দুটি বের করে জাপানি নিনজা হওয়ার আদেশ নেই। উল্লেখ্য যে, সূরা ৩৩:৩৩ শুধু প্রফেটের স্ত্রীগণের জন্য প্রযোজ্য, মুসলিম নারীকুলের জন্য নয়। বলা হয়েছে ‘হে নবীপত্নীগণ, তোমরা অন্য নারীদের মত নহ, তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করিবে, এবং প্রাচীন যুগের মত নিজেদের প্রদর্শন করিয়া বেড়াইবে না…’। কিন্তু আমাদের রক্ষণশীল ইসলামী পন্ডিতরা সব মুসলিম নারীদের জন্য এটা বেঁধে দিয়েছেন।
হাদিসে নারীর অবস্থা আরো হীন হয়ে গেছে। বলা হয়েছে নৈতিকভাবে, বুদ্ধিগতভাবে ও শারিরীকভাবে পুরুষের চেয়ে নারী নিম্নতর। মেয়েদের যুক্তি ও বিশ্বাস কম। ঋতুকালে নারী অপবিত্র। মেয়েদের স্পর্শ পুরুষের স্পর্শ থেকে নিকৃষ্ট। অনুমতি ছাড়া নারীর স্পর্শের চেয়ে মাথায় গজলি বসানো ভাল। অবৈধভাবে নারীর হস্তধারণ করলে, শেষ বিচারের দিন হাতে জ্বলন্ত অগ্নিখন্ড ধরতে হবে। তিনটি বস্তুতে নামাজ নষ্ট হয়- সামনে দিয়ে কালো কুত্তা, নারী ও গাধা অতিক্রম করলে। …আরো উদ্ধৃতি আছে হাদিসে, স্থানাভাবে উল্লেখ করা গেলো না। (মৎকৃত ‘হাদিস সাহিত্যের ইতিহাস’ পড়ুন)।
উপরোক্ত বর্ণনা ছাড়া আরো আছে। যেমন দুজন নারী একজন পুরুষের সমান সাক্ষ্য হয় আদালতে। এখনো আফ্রিকায় মুসলিম সমাজে মেয়েদের খাৎনা দেওয়ার মতো নিকৃষ্ট প্রথার প্রচলন আছে। মিসরে ও সৌদি আরবের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই প্রথা বিদ্যমান। নারী পুরুষকে অস্বীকার করতে পারে না ঘোড়ার জিনের উপর ও জ্বলন্ত চুলোর উপর।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার কতোটুকু সংরক্ষিত হচ্ছে। বক্তব্য বাড়িয়ে লাভ নেই, বিদগ্ধ পাঠক-পাঠিকাদের জন্য আপাতত বর্ণিত বক্তব্যই যথেষ্ট। ইসলামের পথ ধরেই নারীর মান মর্যাদা নিশ্চিত হবে না, নারীমুক্তি ও নারী স্বাধীনতার পথ পরিক্রম করার দিশাও পাওয়া যাবে না। তবে এটা সত্যি, ইসলামে অনেক ভালো ব্যবস্থা আছে কিন্তু আদতে তা পালন করা হয় না অনেক ক্ষেত্রে বিকৃত ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। নারী স্বাধীনতা ও অধিকার নারীকেই পুনরুদ্ধার করতে হবে, অন্য কেউ তা তাদের হাতে তুলে দিবে না।
– ভোরের কগজ ০৪.০৪.২০০৩