সম্পাদকীয় |
আমরা প্রথমে জেনেছি শাহনাজ নামে এক সংগ্রামী নারীর কথা। যিনি রাইড শেয়ার এপসের মাধ্যমে জীবিকার একমাত্র সম্বল স্কুটার দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। আমরা জেনেছি অনেক পুরুষ গ্রাহক যখন দেখেন তার ডেকে আনা স্কুটারের চালক নারী, তখন চুক্তি বাতিল করে দেন। আবার এও জেনেছি, এক পুরুষ গ্রাহক যখন দেখলেন তার ডেকে আনা স্কুটারের চালক একজন নারী, তখন তিনি সেই সংগ্রামী ও সাহসী নারীর প্রশংসা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
অবস্থা যখন এই, তার দুই একদিন আগে হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শফি বলেছেন মেয়েদেরকে যেন চতুর্থ অথবা পঞ্চম শ্রেণীর বেশি না পড়ায়। এরচে বেশি পড়ালে নাকি মেয়েরা আর অভিভাবকের (পুরুষের) বাধ্যগত থাকে না। শাহনাজের গল্পটা যেন শফির বক্তব্যের মোক্ষম জবাব ছিলো, উৎকৃষ্ট প্রতিবাদ ছিলো।
দু’দিন যেতে না যেতে শাহনাজের সেই গর্ব, সাহস, সংগ্রাম ও জীবিকার বাইকটি চুরি হয়ে যায়। আয়ের অবলম্বন হারানো শাহনাজের চোখে অশ্রু দেখেছি আমরা। আরো দেখেছি শাহনাজের সেই অশ্রু মুছতে চাওয়া সারি সারি মানুষ। শাহনাজের অশ্রু দেখে আমাদের ভেতরে প্রায় অকেজো হতে চলা শুভবোধ ঠিকরে বেরিয়ে আসে। শাহনাজ আমাদের সমসাময়িক আলো। সেই আলোর হাত ধরে জন্ম নিয়েছে আরো কিছু আলো।
হতাশা আর অন্ধকারের এই সময়ে শাহনাজকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া সম্ভাবনা আরো সমৃদ্ধ হয়, যখন পুলিশ অতি দ্রুত তার বাইকটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। বাইক উদ্ধারের পর দীর্ঘদিনের দুঃসংবাদের মিছিল, বহুদিনের বিষন্নতার জঞ্জাল এড়িয়ে নাগরিক মনে এক পশলা স্বস্তির বাতাস বয়ে যায়।
এই দেশটা শাহনাজের হোক। শাহনাজের বাংলাদেশে মেয়েরা ছেলেদের সাথে স্কুলে যাবে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, পুরুষের সাথে পাশাপাশি টেবিলে বসে চাকরি করবে, পুরুষের সাথে রাইড শেয়ার করবে। এই বাংলাদেশ হবে ডর, ভয় ও বাধাহীন শুভবোধের বাংলাদেশ।
অপরদিকে আল্লামা শফিদের বাংলাদেশে মেয়েরা ক্লাস ফোর ফাইভের পর স্কুলে যাবে না, কালো অন্ধকার কাপড়ের আড়ালে থাকবে, চাকরি করবে না, রাইড শেয়ার করবে না, ব্যবসা করবে না, খেলাধূলা করবে না। -এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না। বাংলাদেশকে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের দেশ বানানোর যে স্বপ্ন শফিরা দেখছে, তাকে দুঃস্বপ্নে রূপ দিতে হবে।
আল্লামা শফিদেরকে প্রতিরোধ করার পথে যত বাধা আসবে, সব বাধা সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে। এই দেশকে এমন দেশে পরিণত করতে হবে, যে দেশে শাহনাজের বাইক চলবে, শফির কথা নয়।