অবিশ্বাসের কথা

“বিশ্বাসে বিভ্রান্তি, যুক্তির আলোয় মুক্তি”

প্রতিদিন যে বিষয়ের কাছে মানুষ সবচে বেশি প্রতারিত হয়, তা হচ্ছে বিশ্বাস। মানুষের শত শত ঈশ্বর, হাজার হাজার বিশ্বাস। লৌকিক বিশ্বাস, অলৌকিক বিশ্বাস। এসব বিশ্বাসের মাঝে বড় বিশ্বাসের নাম ঈশ্বর। কিন্তু শুধু কাল্পনিক ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেই হয় না, তার প্রেরিত দূতেও বিশ্বাস করতে হয়। বিশ্বাস করতে হয় আরো অনেক অলীক প্রাণীতে। যেমন ফেরেশতা, জ্বিন, পরী, শয়তান ইত্যাদি।

এরপর আছে ভয়ংকর সব লৌকিক বিশ্বাস। মা বিশ্বাস, বাবা বিশ্বাস, ভাই বিশ্বাস, বোন বিশ্বাস, স্বামী বিশ্বাস, স্ত্রী বিশ্বাস, বন্ধু বিশ্বাস, স্বজন বিশ্বাস, ইমাম বিশ্বাস, পুরোহিত বিশ্বাস, তন্ত্র বিশ্বাস, মন্ত্র বিশ্বাস, বিজ্ঞান বিশ্বাস, গলির মোড়ের দোকানদার বিশ্বাস, মহল্লার বড়ভাই বিশ্বাস, এলাকার খালা বিশ্বাস, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বিশ্বাস, ক্লিক বিশ্বাস, নেতা বিশ্বাস, নেত্রী বিশ্বাসসহ অগণিত বিশ্বাস।

বিশ্বাসের কারণে একজন মানুষ আমাদের কাছে আর মানুষ থাকেন না, একটি সাধারণ বিষয় আর সাধারণ থাকে না, এর চেয়ে বেশি কিছু হয়ে যায়। বিশ্বাস মানুষের বোধ-বুদ্ধি-বিচার-বিবেচনা কেড়ে নেয়। বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেয়। একটা অবাস্তব, অযৌক্তিক, অলৌকিক আবরনে আবৃত করে দেয়।

নির্দিষ্ট একজন মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস দ্বারা সামষ্টিক ক্ষতি হয়। কারণ এর দ্বারা মিথ্যা কিংবা অর্ধসত্যগুলো সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ছড়ায় বিভ্রান্তি। ‘যুক্তি’ ‘প্রমাণ’ ‘তথ্য’ এর মত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা বিষয়গুলো কার্যকারিতা হারায়। এর দ্বারা দূষিত হয় সবাই।

হুজুরে বলেছেন, সুতরাং এটা সত্য। পুরোহিত বলেছেন, তার মানে এটা মিথ্যা হতে পারে না। পাদ্রী বলেছেন, সুতরাং এটা মানতেই করতে হবে। —একই দোষে তথাকথিত প্রগতিশীল মানুষরাও আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ বিশ্বাস একটি ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধি বা ব্যাধির মতো। স্টিফেন হকিং বলেছেন ঈশ্বর নেই, সুতরাং এ বিষয়ে না পড়েই এটা সত্য বলে ধরে নিলাম। কিংবা ডারউন বলেছেন বিবর্তনের কথা, সুতরাং এই বিষয়ে না জেনেই শুধু ভক্তি ভরসার উপর ভিত্তি করে কথাটি মেনে নিলাম। —এগুলোও বিশ্বাস। এবং এসব বিশ্বাস ক্ষতিকর।

সত্য কখনো বিশ্বাস করার দরকার হয় না। কারণ এর পক্ষে ‘যুক্তি’ ‘প্রমাণ’ ও ‘তথ্য’ থাকে। কিন্তু মিথ্যা বা অর্ধসত্যগুলোর বেলায় ‘বিশ্বাস করার’ প্রশ্ন আসে। আর এই বিশ্বাস কতটা ভয়াবহ, তা আমরা চারপাশে তাকালেই বুঝতে পারি।

তাই আমরা এসেছি অবিশ্বাসের কথা বলতে। বিশ্বাস ভেঙে দিতে। যদিও সারাদিন শুধু আপনার বিশ্বাস নিয়ে টানাটানি করবো, এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। কিন্তু আমরা যাই করি না কেন, তাতে যদি আপনার বিশ্বাসে টান লাগে, তাহলে কিছু করার নেই।

আমরা এই অঞ্চলে মুক্তচিন্তার ইতিহাস তুলে ধরবো। সেসব ইতিহাস নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করবো। আমরা তুলে আনবো ধর্মীয় সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের তথ্য। আমরা কথা বলবো বর্তমানের আলো ও আঁধার নিয়ে। আমরা কথা বলবো ধর্ম নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে। কথা বলবো মানুষের অধিকার নিয়ে। কথা বলতে গিয়ে আপনার আমার হাজার হাজার বিশ্বাসের কোন একটিতে টান লাগতে পারে। এবং আপনিও বলতে পারেন ‘আমার বিশ্বাস নিয়ে টানাটানি করো না।’ এই অধিকার আপনার আছে। কিন্তু তাকে কোন কিছু যাবে আসবে কিনা, নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না।

বিশ্বাস ভাঙতে হবে, বিশ্বাস ভেঙে দাও।