মুক্তচিন্তা আন্দোলনস্বতন্ত্র ব‍্যক্তিত্বসুফিয়া কামাল | হাতের কাছে স্বৈরাচার পেলে দু'ঘা বসিয়ে দিতেন

সুফিয়া কামাল | হাতের কাছে স্বৈরাচার পেলে দু’ঘা বসিয়ে দিতেন

বেগম রোকেয়ার যোগ্য উত্তরসূরী সুফিয়া কামাল। এখন সুফিয়া কামালের উত্তরসূরীরা বাংলাদেশ দেখে রাখছে। কিন্তু যেভাবে সবাই নিজেকে বন্ধক রাখতে শুরু করেছে, অগ্রযাত্রা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, দেখার বিষয়।

সুফিয়া কামাল | হাতের কাছে স্বৈরাচার পেলে দু’ঘা বসিয়ে দিতেন

বেগম রোকেয়ার যোগ্য উত্তরসূরী সুফিয়া কামাল। এখন সুফিয়া কামালের উত্তরসূরীরা বাংলাদেশ দেখে রাখছে। কিন্তু যেভাবে সবাই নিজেকে বন্ধক রাখতে শুরু করেছে, অগ্রযাত্রা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, দেখার বিষয়।

বেগম সুফিয়া খাতুন, সুফিয়া এন হোসেন, সুফিয়া কামাল, কবি সুফিয়া কামাল। এক জীবন তাকে এনে দিয়েছে একাধিক নাম। প্রতিটি নাম একেকটি অধ্যায়, ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ, আলাদা আলাদা জীবন। কিন্তু সব ক’টি নাম, অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ও জীবন এক জায়গায় মিলেমিশে একাকার। অদম্য প্রাণশক্তি আর হার না মানা লড়াই তার প্রতিটি জীবনকে এক সুতোয় গেঁথে বাংলাদেশের গলায় পরিয়ে দিয়েছে গৌরবের পুষ্পমাল্য। আজও সেই গৌরব আমাদেরকে মহিমান্বিত করে, কয়েক যুগ পরও করবে। বাংলাদেশ যাদেরকে সাথে নিয়ে বেড়ে ওঠেছে, সুফিয়া তাদের একজন; অবিচ্ছেদ্য একজন।

জন্মের কিছুদিন পর হতে তার লড়াই শুরু, সে লড়াই থামেনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এমন লড়াকু জীবন ক’জনের আছে, যে জীবন তার লড়াইয়ের যোগ্য উত্তরাধিকার রেখে যায়। আমি সুফিয়া কামালের কন্যা সুলতানা কামালের কথা বলছি। বর্তমান বাংলাদেশের বুকে বসে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ধর্মানুভূতি অস্ত্রের সামনে যখন প্রধানমন্ত্রীসহ নারী পুরুষ সবাই কুপোকাত, তখন ওই একজনই বলেছিলেন “আমি যা বলেছি, ঠিকই বলেছি।” যেমন সুফিয়া কামাল বলতেন তার সময়ের ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকে। বাংলাদেশে সাদা জুব্বা পরা শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ধর্মানুভূতিও তাদেরকে মচকাতে পারেনি, ভাঙাতো অনেক দূর।

সুফিয়া কামাল এই দেশের, এই সমাজের মানুষ। কিন্তু অসীম সাহস আর দৃঢ় ব্যক্তিত্ব তাকে দেশের মাঝে, সমাজের মাঝে বিশেষ একজন মানুষের মর্যাদা এনে দিয়েছে। সেই শিশুকালে যখন অবস্থাসম্পন্ন মুসলিম পরিবারের মেয়েরা ঘরের বাহিরে যাওয়ার অনুমতি পেত না, তখন তিনি পায়জামা-পাঞ্জাবি-টুপি পরে ছেলে সেজে স্কুলে গিয়েছেন। ধরা পড়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়, কিন্তু থেমে যায়নি তার লেখাপড়া। লুকিয়ে মামার গ্রন্থাগারে গিয়ে পড়েছেন। চাইলে বাড়িতে সবার সামনেই পড়তে পারতেন, কিন্তু তিনি যা পড়তে চান তা সবার সামনে পড়ার ব্যবস্থা ছিলো না। ওখানে ছিলো আরবি, ফারসি, উর্দু পড়ার ব্যবস্থা। তাই বাংলা পড়ার জন্য চুপি চুপি মামার পাঠাগারে পা রাখতেন।

বালিকা বয়সে বিয়ে, যৌবনের শুরুতে স্বামী মারা গেলেন। বর্তমান সমাজেও এরকম পরিস্থিতিতে একজন নারীকে থেমে যেতে হয় অথবা গতি হারাতে হয়। কিন্তু সুফিয়ার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, এমন কোন দুঃখ বা ব্যাধি এই পৃথিবীতে নেই। তার অফুরন্ত সাহস। সব দুঃখ, কষ্ট, বাধা, ব্যাধির ভান্ডার শেষ হয়ে যায়, সুফিয়ার সাহস শেষ হয় না। মহা প্রতাপশালী আইয়ুব খানের ঔদ্ধত্যপনার সামনে যখন বাঘা বাঘা বুদ্ধিজীবী কিংকর্তব্যবিমূঢ়, সভ্য আলোচনায় বাঙালিদের ‘জানোয়ার’ বলার জবাব খুঁজে পাচ্ছে না, তখন সুফিয়া কামাল জবাব দিলেন “আপনিতো সেই জানোয়ারদেরই প্রেসিডেন্ট!”

বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচে ব্যক্তিত্বহীন প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব বেহায়া এরশাদের সামনে যখন কোন বাধাই বাধা নয়, তখন তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন এই সুফিয়া। জীবনে যখনই হাতের কাছে স্বৈরাচার পেয়েছেন, দু’ঘা বসিয়েছেন। আসলে একটি গল্প আপনি কিভাবে পড়বেন, একজন মানুষকে কিভাবে দেখবেন তা একান্তই আপনার ব্যাপার। কিন্তু সুফিয়া কামালকে যদি কেবলই প্রাইমারি স্কুলে পড়া কবিতার কবি মনে করেন, তাহলে ভুল করবেন। তিনি রান্না ঘরে ছিলেন, লেখার টেবিলে ছিলেন, শিক্ষকের চেয়ারে, সম্পাদক লেখা স্টিকারযুক্ত দরজার কক্ষে, দুর্গত বাংলার পথে পথে, মিছিলে-স্লোগানে ছিলেন, ছিলেন ধর্মাস্ত্র হাতে ধরা রাক্ষসের সামনে আত্মা কাঁপানো আওয়াজ হয়ে। একটার দোহাই দিয়ে আরেকটা এড়িয়ে যাননি, একটার ব্যস্ততায় আরেকটা ভুলে যাননি। কারো কান কথায়, মুখ কথায় তার কিছু আসে যায়নি।

বেগম সুফিয়া খাতুন

বরিশালের শায়েস্তাবাদে ১৯১১ সালের ২০শে জুন সোমবার জন্মগ্রহণ করেন বেগম সুফিয়া খাতুন। বাবা সৈয়দ আবদুল বারি ছিলেন একজন আইনজীবী এবং মা সাবেরা খাতুন গৃহিনী। সুফিয়ার বয়স যখন সাত, সন্ন্যাসব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সাধকদের অনুসরণ করে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হন তার বাবা। এরপর কিছুটা কঠিন বাস্তবতার মাঝে মায়ের নিবিড় যত্নে বেড়ে ওঠেন তিনি। বেগম সুফিয়ার মাতামহ সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী হলেও তখনকার সমাজে স্বামীহীন সাবেরা খাতুনকে নানান ধরণের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সুফিয়া বেড়ে ওঠার সাথে সাথে গভীর মনযোগে মায়ের জীবন সংগ্রাম লক্ষ্য করেন এবং ধারণ করার চেষ্টা করেন। যার প্রভাব আমরা পরিণত সুফিয়ার মাঝে খুঁজে পাই।

নানার বাড়ির কথ্য ভাষা ছিলো উর্দু, বাংলা শেখার উপায় নেই। ঘরের বাইরে গিয়ে নারী শিক্ষার রীতি ছিলো না। সমাজেও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়া মন্দ দৃষ্টিতে দেখা হতো। কিন্তু সুফিয়া কামাল স্কুলে যাবেনই যাবেন। নাছোড়বান্দা সুফিয়াকে শেষমেষ পায়জামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরিয়ে ছেলে সাজিয়ে স্কুলে পাঠানো হয়। কিন্তু সুবিধা করতে পারলেন না। ধরা খাওয়ার পর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে ওস্তাদ রেখে শিক্ষার ব্যবস্থা আগেই ছিলো, তা কেবল আরবি ও ফারসির জন্য। আরবি ফারসি শিখতে আপত্তি নেই সুফিয়ার, কিন্তু বাংলার প্রতি বেশি আকর্ষণ। বরাবরের মত এবারও এগিয়ে এলেন মা সাবেরা খাতুন। মেয়েকে বাংলা শেখাতে শুরু করেন। তার মামার একটি সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরি ছিলো, যেখানে বাংলা বই পাওয়া যেত। সুফিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে মামার লাইব্রেরীতে বাংলা বই পড়তেন, ইংরেজিও। বাড়ির শিক্ষিত বড়দের সাহায্যে নকল স্কুল গড়ে তোলা হলো সুফিয়া ও অন্য শিশুদের জন্য। দেখা গেলো সুফিয়া বাংলার চেয়েও ইংরেজিতে বেশি দক্ষ। ইংরেজিতে দক্ষতার কারণে পুরস্কার স্বরূপ সুবিখ্যাত ‘সন্দেশ; পত্রিকার গ্রাহক হওয়ার সুযোগ পান।

কিন্তু আবারো সেই একই সমস্যা। একজন মেয়ে শিশু কিভাবে পত্রিকার গ্রাহক হবে? লোকজন জানলে কেলেংকারি হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যায় যেহেতু সুফিয়া পড়েছে, সমাধান সেহেতু দ্রুত হবে। জুবিলী স্কুলের পন্ডিত প্যারীলাল মহাশয় স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় একাধিক ডাকঘরে মাস্টারের দায়িত্বে ছিলেন। মেয়েটি বাংলা শিখছে, ইংরেজিতেও ভালো, এটা শুনে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। সুফিয়ার নামে ‘সন্দেশ’ আসে, প্যারিলাল বাবু গোপনে সেটা তার হাতে পৌঁছে দেন।

ছোটবেলা থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপ্রেমী ছিলেন বেগম সুফিয়া। বাংলার সবুজ চাদর, স্নিগ্ধ হাওয়া, স্বচ্ছ জলরাশি, পাখির কলতান, মাঝির গান তাকে আকৃষ্ট করতো। তিনি প্রকৃতির মত নির্মল থাকার চেষ্টা করতেন। আড়ম্বর জীবন যাপন, অহংকার, অহমিকা পছন্দ করতেন না। নানার বাড়ির নারী বিরুদ্ধ ঐতিহ্য গ্রহণ না করে সুফিয়া চাইতেন স্বাধীনচেতা জীবনযাপন করতে। ১৯১৮ সালে এই স্বাধীনতার দেখা পান মায়ের সঙ্গে কলকাতা যাওয়ার পর। কলকাতায় বেগম রোকেয়ার সাথে সাক্ষাৎ হয়, কথা হয়। কিছুদিন রোকেয়া সান্নিধ্যে থাকার পর বরিশালের শায়েস্তাবাদে ফিরে আসেন। কিন্তু সুফিয়ার মনে স্বাধীনতার মন্ত্র এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জোরালো, তার ডানায় নতুন নতুন পালক যুক্ত হচ্ছে, সেই পালকে ভর দিয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু করলেন।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিজ মেধা, মা-মামার সহযোগিতা এবং বেগম রোকেয়ার উৎসাহে সাহিত্য চার্চার শুরুটা মন্দ হয়নি। বাবা না থাকার অসুবিধা টের পাননি তিনি। বরং এক সুস্থ সুন্দর স্নেহ ডানার অভয়াশ্রমে বেড়ে ওঠেন তিনি। সমাজ ও ধর্মের রীতিনীতি তার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেও সেই কাঁটা সরিয়ে চলার পথ নির্বিঘ্ন করে দেয়ার মত মানুষের অভাব ছিলো না। জীবনের প্রতি বাঁকে তিনি তিনি সাহস ও সমর্থন পেয়েছেন।

সুফিয়া এন হোসেন

১৯২৩ সালে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে বিয়ের পর তার নাম হয় ‘সুফিয়া এন হোসেন’। বিয়ের সময় সুফিয়ার বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর। স্বামী নেহালের বয়ষ মাত্র ১৭ বছর। এক জোড়া কিশোর কিশোরীর বর-কনে খেলার মত। সময় ও সমাজ তাদেরকে খেলার বয়সে সংসারে আবদ্ধ করে দেয়। কিন্তু প্রাণে যদি ডানা থাকে, মনতো উড়বেই! সুফিয়া এবং নেহালও প্রাণের উচ্ছ্বাসে উড়ে বেড়িয়েছেন।

লেখাপড়া, সৃজনশীল কাজ ও সাহিত্যচর্চায় স্ত্রীর আগ্রহ দেখে সহযোগিতা করার প্রয়াস পান নেহাল হোসেন। স্বামীর উৎসাহ উদ্দীপনা ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সুফিয়া এন হোসেন এগিয়ে যেতে থাকেন। নারীবাদী, প্রগতিশীল নেহাল হোসেন তার স্ত্রীর স্বপ্নের ধাপ একটি একটি করে পূরণ করতে শুরু করেন। বিয়ের বছরই একদিন সুফিয়ার অনেকগুলো কাঁচা হাতের লেখা নিয়ে বসলেন। বসে দ্বিধায় পড়ে গেলেন, এগুলো কাঁচা হাতেরতো নয় বরং পাকা হাতের বলবেন নাকি পেকে ঝুনা হয়ে যাওয়া লেখা বলবেন! নিজ বিবেচনায় তিনটি লেখা বরিশাল থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত ‘তরুণ’ পত্রিকার সম্পাদক সরল কুমার দত্তের কাছে নিয়ে যান। একটু ভয়েই ছিলেন, যদি সম্পাদক মহাশয় লেখা পছন্দ না করেন! কিন্তু নেহাল হোসেনের ভয়কে মিথ্যা প্রমাণ করে সম্পাদক সরল কুমার দত্ত ‘সৈনিক বধূ’ নামের একটি ছোটগল্প এবং একটি কবিতা ছাপানোর উদ্দেশ্যে রেখে দেন। ‘তরুণ’ পত্রিকার প্রথম বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় ‘সৈনিক বধূ’ গল্পটি ‘মিসেস এন হোসেন’ নামে প্রকাশিত হয়। মুসলিম বালিকা বৌয়ের লেখা পত্রিকায় দেখে সমাজের চোখ তালগাছে উঠে যায়। চারদিকে নানান কানাঘুষা চলতে থাকে, অধিকাংশই সুফিয়ার পক্ষে ছিলো না। সমাজে বিব্রতকর সমালোচনার কারণে নেহাল হোসেনের পরিবার বেশ বিরক্ত হয় এবং তাকে ভৎর্সনা করে। যদিও স্ত্রীর সৃজনশীল লেখা পত্রিকায় দেখে যে আনন্দ তিনি পেয়েছেন, সে তুলনায় এসব বকাঝকা কিছুই না। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই স্বাধীনচেতা, অদম্য। এসব বিরোধিতায় তাদের কিছু আসে যায়নি।

১৯২৫ সালে বরিশালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সাথে দেখা হয় সুফিয়া এন হোসেনের। এরপর স্বামীর সাথে কলকাতা গেলে সেখানে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পান। নজরুলের সাথে সাক্ষাৎ নিঃসন্দেহে সুফিয়ার জীবনে আলাদা করে তুলে রাখার মত একটি ঘটনা। যদিও পরবর্তীতে এরকম আরো ‘তুলে রাখার’ মত মুহূর্ত তিনি অর্জন করেছেন। সুফিয়ার কবিতা পড়ে কবি নজরুল খুব প্রশংসা করেন। এমন প্রশংসায় ‘সওগাত’ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন সুফিয়ার লেখায় নিজ ভালোলাগার পক্ষে সমর্থন পান। ১৯২৬ সালে সুফিয়া রচিত ‘বাসন্তি’ কবিতাটি সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এটিই পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রথম কবিতা। ১৯২৯ সালে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত মুসলিম মহিলা সমিতি’র সাথে যুক্ত হন। এ সংগঠনটি নারীশিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারসহ নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতো। এর আগেও একবার রোকেয়ার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, কিন্তু এবার তার সাথে কাজ করতে গিয়ে বেগম রোকেয়ার সামাজিক আদর্শের খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পান। যা সুফিয়াকে আজীবন প্রভাবিত করেছে। ১৯৩১ সালে ‘ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন’-এর সদস্য নির্বাচিত হন। বেগম সুফিয়া এই সংগঠনের প্রথম মুসলিম মহিলা সদস্য।

এর মধ্যে ১৯২৯ সালে ঘটে এক মজার (মজার না বোধহয়) ঘটনা। তখন ছোট এরোপ্লেনে একজন যাত্রীকে নিয়ে ‘পাখির চোখে শহর দেখা’র ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু লোকজন খুব একটা প্লেনে চড়ে শহর দেখতেন না, ভয়ে। নারীরাতো নয়ই, মুসলিম নারীরা অবশ্যই নয়। প্লেনে উঠা গুনাহর বিষয় নয়, কিন্তু পুরুষ পাইলট চালিত প্লেনে একজন নারী একলা চড়াটা কেমন ব্যভিচার হয়ে যায় না! উপরে উঠে কী না কী করে বসে!! লোকজন চুলায় যাক। স্বামীর অনুপ্রেরণায় প্লেনে চড়লেন সুফিয়া কামাল। পাখির চোখে কলকাতা দেখলেন। সুফিয়ার প্লেনে চড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক কেলেংকারি হয়ে যায়। মুসলমান সমাজে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার মুখে সুফিয়াকে কলকাতা থেকে নিয়ে বরিশালের মামার বাড়িতে আটকে রাখেন তার বড় মামা। কিন্তু বরিশালের সম্ভ্রান্ত মুসলিম ব্যক্তিবর্গের একাংশ যখন সুফিয়ার বিমান ভ্রমণের প্রশংসা করতে লাগলেন, তখন তার মামাও সাহস পান। আসলে যত ভয় ওই সমাজে! সুফিয়া বন্দীদশা থেকে মুক্তি পান এবং এই ঘটনার পর তাদের পরিবারে বিধি নিষেধের অত্যাচার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসে।

একই বছর সওগাত পত্রিকার সম্পাদক নাসিরউদ্দিন, সুফিয়া কামাল ও তার স্বামী নেহাল হোসেনের হাত ধরে আরেকটি ছোটখাটো বিপ্লব ঘটে যায়। নাসিরউদ্দিন ঠিক করলেন এখন থেকে পত্রিকায় নারী লেখকদের লেখা তাদের ছবিসহ ছাপানো হবে। কিন্তু কাকে দিয়ে শুরু করবেন? এদিক সেদিক না ভেবে গেলেন নেহাল হোসেনের বাড়িতে। এই প্রথম সুফিয়ার স্বামীর সাথে সওগাত সম্পাদকের সাক্ষাত হয়। ছবির প্রস্তাব শুনে নেহাল কিছুটা বিস্মিত হন কিন্তু একবাক্যে অনুমতি দিয়ে দেন। কবিকে নিয়ে ছবি তোলার জন্য কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার সি. গুহের স্টুডিওতে যান সম্পাদক নাসিরউদ্দিন। জীবনে প্রথম ছবি তুলতে এলেন সুফিয়া, আবার সি. গুহ মহাশয়ও এর আগে কোন মুসলিম নারীর ছবি তোলেননি। সবার কাছেই বিষয়টা প্রথম ঘটছে। সেদিন ছবি তোলার জন্য কোন পারিশ্রমিক নেননি ফটোগ্রাফার সি. গুহ। বরং এক মুসলিম নারীর সাহস ও সংস্কার ইচ্ছে দেখে অত্যন্ত খুশি হন।

উৎসাহ, প্রশংসা আর সহযোগিতায় সুফিয়া যখন পাখির মত উড়ছিলেন তখন স্বামী নেহাল হোসেন এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার জন্য ভারতবর্ষের নানান জায়গায় গিয়ে ব্যর্থ হয়ে শেষে অসুস্থ নেহাল হোসেনকে নিয়ে বরিশালের শায়েস্তাবাদে ফিরে আসেন। ১৯৩২ সালে নেহাল হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। এসময় বেগম সুফিয়ার জীবন কিছুদিনের জন্য স্থবির হয়ে যায়। একমাত্র কন্যা সন্তান আলেয়া খাতুন দুলু’কে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। এবং বরাবরের মত এবারও বিফল হননি।

নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ১৯৩৩ সালে কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। এই স্কুলে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এখানে কর্মরত থাকা অবস্থায় পল্লী কবি জসিম উদ্দীন ও প্রাবন্ধিক আবদুল কাদিরের সাথে পরিচিত হন। সাহিত্য পরিমণ্ডলে থাকার কারণে স্বামীর মৃত্যু ও কর্ম জীবনে প্রবেশের পরও সুফিয়ার লেখালেখিতে ছেদ পড়েনি। এসময় তিনি ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন, যা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লিখিত ভূমিকাসহ ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয়। ‘সাঁঝের মায়া’ পড়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুগ্ধতা প্রকাশ করে বেগম সুফিয়ার প্রশংসা করেন। কবিগুরুর কাছ থেকে পাওয়া স্বীকৃতি সুফিয়ার হৃষ্ট ডানা আরো পুষ্ট করে, তাকে অধিকতর লক্ষ্যস্থির করে।

সুফিয়া কামাল

সেসময় চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের উঠতি লেখক, অনুবাদক কামালউদ্দিনের সাথে সুফিয়ার পূর্ব পরিচয় ছিলো। একজনের লেখালেখির সাথে অন্যজনের খুব ভালো পরিচয় আছে। কামালউদ্দিন ছিলেন একজন ভালো মানুষ। প্রগতিশীল, আধুনিক, মুক্তমনা। হয়তো একে অপরকে পছন্দ করতেন। পুনরায় বিয়ে করা নিয়ে দ্বিধার অবসান ঘটিয়ে ১৯৩৯ সালের ৮ই এপ্রিলে কামালউদ্দিনের সাথে সংসার শুরু করেন বেগম সুফিয়া। প্রথম স্বামী নেহাল হোসেনের মত কামালউদ্দিনও জীবনভর সুফিয়াকে সহযোগিতা ও সমর্থন যুগিয়ে গেছেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর সুফিয়া এন হোসেন ‘সুফিয়া কামাল’ নামে নতুনভাবে পরিচিত হন।

কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই শিক্ষকতার পর এবার সম্পাদক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৪৭ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন যখন ‘বেগম’ পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন, সুফিয়া তখন এর প্রথম সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। দেশ বিভাগের পর তিনি স্বপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের এক অসহ্য সময়ে তিনি সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িয়ে জাতিগত সম্প্রীতি রক্ষার উদ্দেশ্য গঠিত কমিটিতে যোগদান করেন। সেবছর ‘পূর্ব বাংলা মহিলা সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির পদে সম্মানিত হন। ১৯৪৯ সালে বেগম রোকেয়া রচিত ‘সুলতানার স্বপ্ন’ এর মূল চরিত্র সুলতানার নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়, যার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন সুফিয়া কামাল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে মুসলিম লীগ। পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষমতায় আসে যুক্তফ্রন্ট সরকার। সুফিয়া কামাল যুক্তফ্রন্টের সমর্থক ছিলেন, কিন্তু নিজ সমর্থিত সরকারকেও তিনি ছাড় দেননি। এসময় লবন ও তেলের দাম বাড়ানো হলে একদিন সমমনা নারীদের সংগঠিত করে রাস্তায় মন্ত্রী আতাউর রহমান খানকে ঘেরাও করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথ ছাত্রীনিবাসের নাম যেন ‘রোকেয়া হল’ রাখা হয়, এ জন্য দাবি আদায় করতে ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত স্মৃতি কমিটি’ গঠন করেন এবং দাবি আদায় করেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিরোধিতার ধুয়া তুলে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করে তৎকালীন সামরিক সরকার। কিন্তু স্বৈরাচার গোণার সময় কই! সরকারি ভয়ভীতি, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে রবীন্দ্র জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। সম্ভবত সুফিয়া কামাল যেন সরকার বিরোধিতা একটু কমিয়ে দেন, এই আশায় একই বছর পাকিস্তান সরকার তাকে ‘তঘমা-ই-পাকিস্তান’ নামক জাতীয় পুরষ্কারে ভূষিত করে। পরে ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং ছাত্র সমাজের উপর হত্যা ও নিপীড়নের অভিযোগে ওই পুরস্কার বর্জন করেন। এসময় ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হলে বেগম সুফিয়া এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।

সুফিয়া কামাল ততটা সৎসাহসী ছিলেন, যতটা আপনি এই মুহূর্তে ভাবতে পারছেন না। উচিত কথাটি মুখের উপর বলে দেয়ার কাজে তার জুড়ি ছিলো না। তা প্রেসিডেন্টের মুখের উপর হোক আর পরিবারের লোকের উপর হোক। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ছাত্রসমাজের মাঝে তীব্র সরকারবিরোধী মনোভাব দেখা দেয়। ভারতের সাথে সদ্য সমাপ্ত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান ছিলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। গাদাবন্দুক হাতে পুলিশ ছাড়া একটা প্রশিক্ষিত আধা সামরিক বাহিনীও ছিলো না। একদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য অন্যদিকে বাঙালির প্রাণকে তুচ্ছজ্ঞান করার অবজ্ঞটা ছাত্রসমাজ ঠিক মেনে নিতে পারেনি। এমন অবস্থায় আইয়ুব খান ঢাকায় আসেন ছাত্র সমাজের অসন্তোষ নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের সাথে আলোচনার জন্য। এই আলোচনা সভায় সুফিয়া কামালও উপস্থিত ছিলেন। তিনি আইয়ুব খানকে উর্দুতে বলেন, “আপনি পশ্চিমে এত বড় একটা যুদ্ধ শেষ করে এলেন, অথচ ঢাকার ছাত্র সমাজের অসন্তোষের সুরাহা করতে পারছেন না। আপনি সব শুনুন এবং এর একটা সমাধান করে দিয়ে যান।” জবাবে আইয়ুব খান বলেন, “পশ্চিম পাকিস্তানে মানুষ থাকে, আর এখানে তো (পূর্ব পাকিস্তান) সব জানোয়ার।” উপস্থিত লোকজন আইয়ুব খানের মুখ থেকে এতটা নোংরামি আশা করেনি। কিন্তু সুফিয়া কামাল সম্ভবত জানতেন আইয়ুব খান কতটা নোংরা হতে পারে। তাই জবাবও তৈরি ছিলো। তিনি আইয়ুব খানকে বললেন, “আপনিতো সেই জানোয়ারদেরই প্রেসিডেন্ট।” আইয়ুব খানসহ উপস্থিত সবার কাছে সুফিয়ার এই কথাটি ছিলো আকস্মিক বজ্রপাতের মত। এই ছোট্ট বাক্যটি এতই শক্তিশালী ছিলো যে, আইয়ুব খান আর একমুহূর্তও সেখানে ছিলেন না। আলোচনা সভাস্থল থেকে গিয়ে সোজা বিমানে উঠলেন, ঢাকা ছাড়লেন।

বিখ্যাত লেখক আবুল ফজল তার লেখকের রােজনামচা বইয়ে সুফিয়া কামাল সম্পর্কে লিখেছেন—

সুফিয়া কবি হিসেবে যত বড় না তার চেয়ে অনেক বড় মানুষ হিসেবে … ব্যক্তিত্ব আর চরিত্রের দিক দিয়ে । সুফিয়ার বৈশিষ্ট্য আর বড় আকর্ষণ এ ব্যক্তিত্ব আর চরিত্র যা সব দিক দিয়েই অনন্য আর অদ্বিতীয়। দৈহিক অবয়বে ছােটখাটো সুদর্শনা পরম স্নেহশীলা ও কোমল স্বভাবা সুফিয়া যে প্রয়ােজনের সময় কতখানি কঠিন হতে পারেন, পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবী আর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তা অজানা নয়। আয়ুবীয় সামরিক শাসনের জাঁতাকলে অনেক ডাকসাইটে বুদ্ধিজীবীকেও ভেঙে চুরমার হতে দেখেছি, দেখেছি বহু সংগ্রামী বিপ্লবীকে মাথা নুইয়ে মুচড়ে ত্রিভঙ্গ হতে প্রলােভনের ইন্দুরকলে ধরা দেয়নি এমন বান্দা কমই ছিল সেদিন, কিন্তু সুফিয়া কামাল ছিলেন চিরদিন উন্নতশির। ঘুষ বা ঘুষি কিছুতেই এই ক্ষুদ্ৰদেহী নম্র স্বভাবা মানুষটাকে নােয়াতে পারেনি।

এ-প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন আবুল ফজল। সামরিক শাসক আইয়ুব খান পাকিস্তানে বেসিক ডেমােক্রেসি বা বুনিয়াদি গণতন্ত্র প্রবর্তন করলে এদেশের লেখক-বুদ্ধিজীবীদের অনেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দেন। তারা একে এক অভিনব ব্যবস্থা, বৈপ্লবিক পদক্ষেপ ইত্যাদি বলে উল্লেখ করেন। সুফিয়া কামালের পরিচিত একজন তার কাছেও বিবৃতিটি সই করাবার জন্য নিয়ে যান। অভয় দাস লেনের শেষ মাথায় জীর্ণ-শীর্ণ একটি টিনের একতালা ঘরে তিনি তখন থাকেন। সংসারে তাদের তখন এক রকম অনটন চলছে। নুন আনতে পান্তা ফুরােয় এ রকম অবস্থা। আবুল ফজল লিখেছেন— যিনি এলেন তিনি সুফিয়া কামালকে চেনেন দীর্ঘদিন ধরে, আপা ডাকেন, সুফিয়া কামালের অনটনের কথাও জানেন। কাজেই আস্তে করে বললেন, “স্রেফ একটা সই দেবেন শুধু আর কিছু করতে হবে না আপনাকে। আপনি যত … চান। পাঁচ … সাত… দশ হাজার পর্যন্ত যাওয়ার নির্দেশ আছে আমার উপর। সরকার আপনার একটা সই চায় মাত্র। অনেকেই দিয়েছেন, নাম বলা বারণ … না হয় তারা কেউই আপনার অপরিচিত নয়।’ খারাপ ব্যবহার তাে তিনি করতে জানতেন না, শুধু দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে শান্ত কণ্ঠে বলেছিলেন—

তুমি যা বলছে তা যদি আমি করি কাল থেকে তুমিই আমাকে আপা ডাকা ছেড়ে দেবে। দেশের অগণিত ছেলেমেয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। কিছুরই বিনিময়ে ওদের চোখকে আমি ফাঁকি দিতে পারবাে না। তুমিই বলাে এ যদি আমি করি, কাল থেকে ওদের সামনে আমি মাথা তুলে কথা বলবাে কি করে? তােমার মতাে তারাও তাে আমাকে আপা ডাকে। এরপর ডাকবে কি?

এরকম দৃঢ় কঠিন সুফিয়া কামাল ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি নিপীড়িত মানুষের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতার দাঙ্গার সময় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ‘লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ’ এ আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ৭০ এর ঘুর্ণিঝড়সহ সকল প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে তাকে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে পাওয়া যেত।

পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলন এবং বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে সুফিয়া কামাল ছিলেন পূর্ণমাত্রায় সক্রিয়। ১৯৬৩ সালে ছাত্রনেতা আবদুল আজিজ বাগমারের উদ্যোগে ‘পূর্ব পাকিস্তান অস্থায়ী সরকার’ সংক্ষেপে ‘অপূর্ব সংসদ’ গঠিত হলে সুফিয়া কামাল সভাপতির দায়িত্ব নেন। সেবছর অপূর্ব সংসদের উদ্যোগে পূর্ব বঙ্গের স্বাধীনতার ইশতেহার প্রকাশিত হয়। লিখেন সংগঠনের উপদেষ্টা ড. আহমদ শরীফ। অপূর্ব সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইতিহাসের ধারায় বাঙালি’ প্রবন্ধে পূর্ব পাকিস্তানের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখার দাবি জানানো হয়। এসব উদ্যোগে সুফিয়া কামালের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও তিনি জড়িয়ে পড়লেন। তার দুই মেয়ে যখন যুদ্ধে যোগ দিতে চাইলেন, তিনি একবাক্যে সম্মতি দেন। তারা যুদ্ধাহত মুক্তি বাহিনীর চিকিৎসার জন্য ভারতের আগরতলায় একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। সুফিয়া কামাল ও তার স্বামী রয়ে গেলেন ঢাকা শহরে। যে বাড়িতে তারা থাকতেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনীর চব্বিশ ঘন্টা নজরদারি ছিলো। বাড়ির সামনে সেনাবাহিনী, তল্লাশি চৌকি, দূরে দূরবীন বাহিনী। কে আসে, কে যায়, কী আসে, কী যায়, তার সব তথ্য পাই টু পাই রাখা হতো। এমন নিশ্চিদ্র নজরদারির মাঝেও মুক্তিযোদ্ধারা তার সাথে যোগাযোগ রাখতেন।

এসময় গুজব রটে পাকিস্তানি বাহিনী সুফিয়া কামালকে হত্যা করেছে। এ খবর বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। সুফিয়া কামালের রাজনৈতিক গুরুত্ব বিশাল ও বেকায়দার। ইয়াহিয়া খান চাইলেই তাকে হত্যা করতে পারবে না। অবশ্য হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ইয়াহিয়াকে দিয়ে কী না সম্ভব! আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খবরটি বিশ্বাস করে নেয়। হত্যা না করেও হত্যার দায় নিতে চায়নি ইয়াহিয়া। তাই সুফিয়া কামালকে হত্যা করা হয়নি মর্মে একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য পিটিভির সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে আর্মি অফিসাররা বাসার সামনে বসে থাকে। সুফিয়া কামাল রাজি হন না। অনেক জোরাজুরির পর তিনি ক্যামেরার সামনে আসেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় “কেমন আছেন?” তিনি জবাব দেন “আমি মরিনি!” তারপর জিজ্ঞাসা করা হয় “লেখালেখি কেমন চলছে?” জবাবে তিনি বলেন “এ অবস্থায় যেমন চলে!” এরপর উঠে চলে যান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চালডাল জমিয়ে রাখতেন, মুক্তিযোদ্ধারা এসে নিয়ে যেতেন। প্রতিদিনের কথাগুলো লিখে রাখতেন যা পরবর্তীতে ‘একাত্তরের ডায়েরী’ নামে প্রকাশিত হয়। যুদ্ধের ৯ মাসে তিনি ৯টি কাঁথা সেলাই করেন। কাঁথার গায়ে সুঁইয়ের ফোটায় যুদ্ধকষ্ট গেঁথে রাখতেন। যেন যুদ্ধে যেতে না পারাটাই সুফিয়া কামালের কাছে আরেক যুদ্ধ। এক সময় রাশিয়া সরকার বিশেষ বিমানে করে তাকে মস্কো নিয়ে যেতে চাইলে তিনি সরাসরি ‘না’ বলে দেন। এমন সময় দেশ ছেড়ে মস্কোতো দূরে থাক বেহেশতে যেতেও রাজি নন বলে জানিয়ে দেন।

যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে পুনর্বাসন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নির্যাতিতা নারীদের পাশে দাঁড়ান। এক জীবনে অনেক আনন্দ দেখেছেন, কিন্তু গত নয় মাসের যুদ্ধের শেষে যে বেদনা তিনি দেখলেন, তাতে তার সকল আনন্দ মুছে যায়। দেখলেন যুদ্ধের সব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সবসময়ই পুরুষতান্ত্রিক, এই সমাজে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন আরেকটি যুদ্ধের মত। সেই যুদ্ধে তিনি, নীলিমা ইব্রাহিমরা সামনে থেকে লড়াই করেন, গড়ে তোলের ‘নারী পুনর্বাসন সংস্থা’।

সুফিয়া কামালের যুদ্ধ বেদনা শেষ হতে না হতে আরেক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেন, যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। স্বাধীন দেশের স্থপতি ও প্রেসিডেন্ট স্বপরিবারে খুন হলেন। বেঁচে থাকলেন কেবল প্রেসিডেন্টের দুই কন্যা, তারা দেশের বাইরে ছিলো। সুফিয়া কামালের কাছে এটি শুধু প্রেসিডেন্টের পরিবার হত্যা নয়, ওই পরিবারের সাথে তিনি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার দুই মেয়ে সুলতানা-সাইয়েদা মুজিবের দুই কন্যা হাসিনা-রেহানার সঙ্গে একত্রে বড় হয়েছে। শেখ মুজিবর রহমানকে পরিবারসহ হত্যার পর আর্মির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হাতেগোনা যে কয়জন ব্যক্তি প্রতিবাদ করেছিলেন, সুফিয়া কামাল তার মধ্যে অন্যতম।

পঁচাত্তরের ইতিহাস বদলানো ওই নির্মম হত্যাকান্ডের পর সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ সংযোজনসহ একের পর এক রাজনৈতিক পট পরিবর্তন দেখতে দেখতে অবশেষে ক্ষমতা দখল করেন ‘বিশ্ব বেহায়া’ খ্যাত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সুফিয়া কামাল বার্ধক্যে পা রেখেছেন, প্রাণে আগের মত বল নেই, কিন্তু আর কত সহ্য করা যায়! একটি বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের রূপরেখা ভেঙে দেশকে উল্টোদিকে পাকিস্তানের পথে নিয়ে যাওয়া আর কত মেনে নেয়া যায়? ১৯৮৮ সালে ধুরন্ধর এরশাদ টের পেলেন তার গদি টালমাটাল। তখন পূর্বসূরী জিয়ার মত তিনিও খেললেন ধর্মের চাল। ঘোষণা দিলেন “বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম!” এবার আর বসে থাকা যায় না। সুফিয়া কামালসহ ১৫ জন সূর্যসন্তান এই ঘোষণার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট আবেদন করেন। কিছুদিনের মধ্যে আদালত রুল জারি করলেও এর সুরাহা হতে হতে গণআন্দোলনে এরশাদের পতন হয়। এরপর খালেদা-হাসিনা-খালেদা-ফখরুদ্দিন-হাসিনা হয়ে ২৮ বছর পর শুনানী শুরু হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু হতাশার বিষয়, আদালত বললেন “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকছে!”

মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর দালালী করার মাস্টার মাইন্ড গোলাম আজমকে ১৯৯১ সালে যখন জামায়াতে ইসলামের আমীর করা হয়, তখন সচেতন প্রগতিশীল শ্রেণী গোলাম আজমের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হয়। এই কমিটির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গণ আদালত’। সুফিয়া কামাল গণ আদালতের সদস্য ছিলেন। প্রগতিশীলদের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে সরকারের আশ্রয়ে থেকে জামায়াত ইসলামের নেতারা আস্ফালন শুরু করে। বাংলার বুকে স্বাধীনতা বিরোধীদের দাপিয়ে চলা সহ্য করতে না পেরে একদিন তিনি বলেন, “ওরা সংখ্যায় কয়জন? চৌদ্দ কোটি বাঙালি এক হয়ে এগিয়ে আসলে মৌলবাদীদের পিষিয়ে ফেলা যায়।” তার এ কথার পর সবাইকে বাদ দিয়ে সুফিয়া কামালই মৌলবাদীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। কিন্তু লাভ কী? সুফিয়া কামাল এমনই।

সুফিয়া কামালের জীবদ্দশায় নারীর অগ্রগতি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ও জনগণের সাধারণ অধিকার নিয়ে যত আন্দোলন হয়েছে, কোনটিই তাকে বাদ রেখে হয়নি। তিনি ছিলেন সকল আন্দোলন সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কবি সুফিয়া কামাল

আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।

– আজকের শিশু, সুফিয়া কামাল

এরকম অসংখ্য হৃদয় ছোঁয়া কবিতার স্রষ্টা আমাদের সুফিয়া কামাল। তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন। শিশুদের জন্য লিখেছেন, কিশোর-যুবক-বৃদ্ধের জন্যও লিখেছেন। তার কবিতায় আশ্রয় নিয়েছে প্রকৃতি, সমাজ, রাজনীতি, দেশ ও বিশ্ব। সহজ, প্রাঞ্জল অথচ গভীর বোধ সম্পন্ন কবিতাগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাব্যতৃষ্ণা মিটিয়ে যাচ্ছে, যাবে। সমাজ পরিবর্তন করা কবিতার কাজ নয়, কিন্তু তার কবিতা আমাদের মাঝে সুন্দর চিন্তা, শুভ বোধ ও সমাজের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতার প্রেরণা নিয়ে উপস্থিত হয়।

সুফিয়া কামালের বেশিরভাগ রচনা কবিতা হলেও প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটি একটি গল্পগ্রন্থ, এমনকি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম লেখাটিও ছিলো একটি গল্প। কবিতা ও গল্প ছাড়াও তিনি শিশুতোষ রচনা করেছেন, লিখেছেন ভ্রমণকাহিনীও। খবরের কাগজের জন্য প্রবন্ধ লিখেছেন। কেবল উপন্যাস বাদ পড়েছে।

সুফিয়া কামালের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:

ক্র. ন. গ্রন্থের নাম সময় প্রকাশক
কেয়ার কাঁটা, গল্পগ্রন্থ ১৯৩৭ বেনজির আহমদ
সাঁঝের মায়া, কাব্যগ্রন্থ ১৯৩৮ বেনজির আহমদ
মায়া কাজল, কাব্যগ্রন্থ ১৯৫১ শাহেদ কামাল
মন ও জীবন, কাব্যগ্রন্থ ১৯৫৭ বায়েজীদ খান পন্নী
উদাত্ত পৃথিবী, কাব্যগ্রন্থ ১৯৬৪ মোঃ ওহিদউল্লাহ্
ইতল বিতল, শিশুতোষ ১৯৬৫ সৈয়দ মোঃ শফি
দীওয়ান, কাব্যগ্রন্থ ১৯৬৬ ফাহমিদা রশীদ চৌধুরী
সোভিয়েতের দিনগুলি, ভ্রমণকাহিনী ১৯৬৮ শাহাদাত হোসেন
প্রশস্তি ও প্রার্থনা, কাব্যগ্রন্থ ১৯৬৮ শাহাদাত হোসেন
১০ অভিযাত্রিক, কাব্যগ্রন্থ ১৯৬৯ শাহাদাত হোসেন
১১ মৃত্তিকার ঘ্রাণ, কাব্যগ্রন্থ ১৯৭০ এ. এ. চৌধুরী
১২ মোর যাদুদের সমাধি পরে, কাব্যগ্রন্থ ১৯৭২ শাহেদ কামাল
১৩ নওল কিশোরের দরবারে, শিশুতোষ ১৯৮১ আল কামাল আব্দুল ওহাব
১৪ একালে আমাদের কাল, আত্মকথা ১৯৮৮ জ্ঞান প্রকাশনী
১৫ একাত্তরের ডায়েরী, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ১৯৮৯ মালেকা বেগম
১৬ স্বনির্বাচিত কবিতা সংকলন ১৯৯০ চিত্তরঞ্জন সাহা

 

সাহিত্য রচনা, আন্দোলন সংগ্রাম ও সমাজ সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে ৩৬টি পুরস্কারের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এসব পুরস্কারের মধ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিন পুরস্কার (১৯৭০), চেকোস্লোভাকিয়ার ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামী নারী পুরস্কার (১৯৮১), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা পদক (১৯৯৮) অন্যতম।

হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।

– তাহারেই মনে পড়ে, সুফিয়া কামাল

সুফিয়া কামালের মত বর্ণাঢ্য, কর্মব্যস্ত ও সফলতা মুখর জীবন খুব কম মানুষের হয়। সারা জীবনে তিনি বিশ্রাম নেয়ার সময়ও পাননি। সেই শিশুকাল থেকে সংগ্রামের শুরু হয়ে ৮২ বছর বয়সেও রাজপথে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত লেখালেখি করেছেন। অবশেষে সকল মিছিল, মিটিং, আন্দোলন, সংগ্রাম, কাব্যচর্চার সমাপ্তি ঘটিয়ে ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর শনিবার বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২৮ নভেম্বর আজিমপুর কবরস্থানে তার সমাধি রচিত হয়।

তথ্যসূত্র
১. সুফিয়া কামাল -ড. সেলিম জাহাঙ্গীর
২. জননী সাহসিকা বেগম সুফিয়া কামাল শেষ প্রণতি -সৈয়দ শামসুল হক, সম্পাদক।
৩. সুলতানা কামাল -সুফিয়া কন্যা।

নতুন লেখার নোটিফিকেশন পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

কপিরাইট সংক্রান্ত

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা ভালো লাগলে, গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে, কিংবা অপছন্দ করলে নিজে বকা দিয়ে অন্যকে বকা দেয়ার সুযোগ করে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। লেখার শুরুতে এবং শেষে ফেসবুকসহ ডজনখানেক এপসে শেয়ার দেয়ার অপশন আছে। চাইলে কপি করেও শেয়ার দিতে পারেন। কিন্তু দয়া করে নিজের নামে অথবা জনাবা সংগৃহীত ভাইয়ের নামে, কিংবা মিস্টার কালেক্টেড এর নামে চালিয়ে দিবেন না। মূল লেখক এবং ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করবেন। এবং দোহাই লাগে, এখান থেকে কপি করে নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন না।

মন্তব্য করুন