ব্রাহ্ম সমাজ

বাংলার পূনর্জাগরণের পুরোধা বলা হয় রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনকে। ১৯ শতকে কলকাতায় আগস্ট ২০, ১৮২৮ সালে হিন্দুধর্ম সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) ও তার বন্ধুবর্গ মিলে এক সার্বজনীন উপাসনার মাধ্যমে ব্রাহ্মসমাজ শুরু করেন। তাঁদের উপাস্য ছিল "নিরাকার ব্রহ্ম", আর সে থেকেই নিজেদের ধর্মের নাম রাখেন ব্রাহ্ম।

ইয়ং বেঙ্গল

সমাজ উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর অবদান রেখেছে, এমন আন্দোলন ইয়ং বেঙ্গল ব্যতীত আর দ্বিতীয়টি নেই। ইয়ং বেঙ্গলই বাংলায় মুক্তচিন্তার অবারিত দুয়ার খুলে দিয়েছিলো। বর্তমানে এ অঞ্চলে মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির যে ঢেউ জেগেছে, তার সূচনা করেছিল ইয়ং বেঙ্গল। একজন ফিরিঙ্গি হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর হাত ধরে ১৮৩০ সালের দিকে ইয়ং বেঙ্গলের জন্ম।

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন

ঊনিশ শতকে কলকাতায় একদল হিন্দু তরুণ শক্ত হাতে ধর্মান্ধতার শিকল ভাঙায় অংশ নিয়েছিলেন। তার প্রায় শত বছর পর বিশ শতকে এসে ঢাকায় মুসলমান সমাজের একদল শিক্ষক ও ছাত্র ধর্মশাস্ত্রের পাথর সরাতে মাঠে নেমেছিলেন। গড়ে তুলেছিলেন সংগঠন, প্রকাশ করেছেন পত্রিকা, অকপটে আহবান ধর্মের শৃঙ্খল ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য, বলেছিলেন পর্দাপ্রথা নারী মুক্তির অন্তরায়।

আবুল হুসেন যার নাম দিয়েছিলেন বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। খুব বেশিদিন পরিবর্তনের এই হাওয়া উপভোগ করা যায়নি, কিন্তু সমাজে দৃশ্যত পরিবর্তন নিয়ে আসে মুসলিম লেখকদের এই সংগঠন।

মুক্তমনা

অভিজিৎ রায়ের উদ্যোগে ২০০১ সালে মুক্তমনা নামে একটি ওয়েবসাইট আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে যে ওয়েবসাইট অন্তর্জালে মুক্তচিন্তা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। মুক্তমনার হাত ধরে এ অঞ্চলের মুক্তচিন্তা আন্দোলন নতুন যুগে পা রাখে। বর্তমানে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ অনলাইনে নাস্তিকতা নিয়ে লেখালেখি করে, যার সূচনা হয় মুক্তমনার মাধ্যমে।

কিন্তু এই অর্জন এত সহজ ছিলো না। এর জন্য মুক্তমনা’র অভিজিৎ রায়সহ প্রাণ দিতে হয়েছে ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ সহ আরো অনেককে। দেশ ছাড়তে হয়েছে অর্ধশত ব্লগারকে এবং বাংলাদেশে কয়েকশ ব্লগার চরম অনিরাপত্তার মাঝে দিন পার করছে।

রক্তাক্ত বাংলা ব্লগ

মুক্তচিন্তা চর্চার জন্য অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে তীব্র, অপ্রতিরোধ্য এবং ভয়াবহ এক সময়। বাংলার ইতিহাসে এমন সময় এর আগে কখনো আসেনি। একদিকে উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীর চাপাতি অন্যদিকে সরকারি নিগ্রহ, মাঝখানে অপ্রতিরোধ্য একদল ব্লগার।

অজ্ঞতা, অক্ষমতা, ভীরুতা আর অনায্য অনিচ্ছার পাত্থুরে দেয়ালে ভাবনার বাইরে, ধারণার বাইরে এমন তীব্রতর আঘাত এর আগে কখনো হয়নি। বিনিময়ে মরেছে, অকাতরে মরেছে। দুই তিন বছরের মধ্যে এক ডজন ব্লগারের লাশ পড়েছে।

অভিজিৎ, বাবু, অনন্ত, নীলাদ্র নীলের লাশের সাথে পাল্লা দিয়ে নুইয়ে পড়েছে রাষ্ট্র, নেতিয়ে পড়েছে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। কেউ প্রকাশ্যে খুনীদের পক্ষ নিয়েছে, কেউ দূর হতে পক্ষে নিয়েছে, কেউ চুপ থেকেছে। আর যারা কথা বলেছে, তারা বিরতিহীন বলে যাচ্ছে। তারা বলছে - “কলম চলবে!”

স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব

ইয়ং বেঙ্গল, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন বা এ ধরনের সংগঠনের বাইরে থেকেও অসংখ্য মানুষ মুক্তচিন্তার প্রচার ও প্রসারে অবদান রেখেছেন। কেউ প্রত্যক্ষভাবে, কেউ পরোক্ষভাবে। এদের সকলেই যে নাস্তিকতার কথা বলেছেন, তা নয়। কিন্তু চিন্তার মুক্তি এবং স্বাধীন মত প্রকাশে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।