বাংলায় নারী শিক্ষার প্রসারে অবদান রাখা ব্যক্তিদের মাঝে যে বাঙালি ব্যক্তির নাম প্রথম দিকে উচ্চারিত হবে তিনি রামগোপাল ঘোষ। শুধু নারী শিক্ষা নয়, শিক্ষার সার্বিক প্রসারে অবদান রাখা ডেভিড হেয়ার, মিস্টার বীটনদের সাথে রামগোপাল ঘোষ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তৎকালীন বঙ্গে জোঁকের মত কামড়ে থাকা অমানবিক ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের অচলায়তন ভাঙ্গতে তরুণদের যে দল কার্যকর লড়াইয়ের সূচনা করে, রামগোপাল ঘোষ তাদেরও একজন। তিনি বিশেষ একজন, কারণ শুধু বক্তৃতা বিবৃতির মাঝে তার কাজ সীমাবদ্ধ ছিলো না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অকাতরে অর্থ ব্যয় করেছেন। তার কাছে সাহায্য চাওয়ার আগেই তিনি টাকা নিয়ে বিপদগ্রস্থ বন্ধুর দুয়ারে হাজির হয়েছেন।
ইতিহাসের পাতায় গুরুত্বের সাথে ঠাঁই করে নেয়া এই মহান ব্যক্তির জন্ম ১৮১৫ সালে বর্তমান কলকাতার বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রীটে, মাতামহ দেওয়ান রামপ্রসাদ সিংহের গৃহে। রামগোপালের পিতার নাম গোবিন্দচন্ত্র ঘোষ। পৈত্রিক নিবাস হুগলী জেলার বিখ্যাত ত্রিবেণী তীর্থের নিকটবর্তী বাগাটী গ্রামে। পিতা ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শহরের চায়নাবাজের তার একটি দোকান ছিলো। কোনমতে দিন কেটে যেত, একটু এদিক সেদিক হলে পকেটে টান পড়তো। অর্থাৎ বলার মত স্বচ্ছলতা ছিলো না।
রামগোপালের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় শেরবোর্নস (Sherburnes) স্কুলে। ইংরেজি শিক্ষার উদ্দেশ্যে রামগোপালের বাবা তার ছেলেকে এই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এসময় তার এক দূর সম্পর্কের বোনের সাথে হিন্দু কলেজের নামকরা ছাত্র ও পরবর্তী সময়ে ডিরোজিও’র অন্যতম শিষ্য হরচন্দ্র ঘোষের বিয়ে হয়। পরিচয় পরবর্তী আলাপচারিতায় নতুন আত্মীয়ের মুখে হিন্দু কলেজের ভূয়সী প্রশংসা শুনে সেই কলেজে ভর্তি হবেন বলে মনস্থির করেন। (উল্লেখ্য তখন হিন্দু কলেজে প্রথম শ্রেণী থেকে ক্লাস শুরু হতো।) হিন্দু কলেজে ভর্তি হবার আশা নিয়ে পিতার কাছে গেলেন। সঙ্গত কারণে পিতা দুঃখ পেলেন। ছেলেকে এত বড় কলেজে লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য তার ছিলো না।
কিন্তু রামগোপালের ইচ্ছে অপূর্ণ রইলো না। বিখ্যাত কিং হ্যামিল্টন কম্পানিতে কর্মরত মিস্টার রজার্স অর্থ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসলেন। হরচন্দ্র ঘোষ মারফতে বালক রামগোপালের সাথে পরিচিত হওয়ার পর তার বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হন মিস্টার রজার্স। সেই মুগ্ধতার সূত্র ধরে হিন্দু কলেজের শ্রেণীকক্ষে পা রাখেন রামগোপাল ঘোষ। যদিও বেশিদিন রজার্স নির্ভর থাকতে হয়নি তাকে। হিন্দু কলেজে ভর্তি হয়ে স্বীয় মেধা ও গুণের কারণে অল্পদিনে শিক্ষকদের দৃষ্টিগোচর হলে বিখ্যাত ডেভিড হেয়ারের স্কুল ইনস্টিটিউট থেকে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন রামগোপাল।
তার জীবন গল্পের এই অংশটি ইয়ং বেঙ্গলের অপরাপর সদস্যদের মত। শিক্ষক ডিরোজিও’র সান্নিধ্যে এসে রামগোপালও জ্ঞানচর্চায় শামিল হন। ডিরোজিও সমান গুরুত্বে তার সকল শিষ্যের যত্ন নিতেন। একেক শিষ্যের একেক গুণ। গুণবিচারে তাদের মনোজগতে বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করতেন। রামগোপাল ছিলেন বিচক্ষণ। তার দেখা ও বুঝার চোখ অসামান্য তীক্ষ্ণ ছিলো। একদিন রামগোপালকে সাথে নিয়ে সুবিখ্যাত দার্শনিক লক (Locke) এর বই পড়ছিলেন ডিরোজিও। কিছুক্ষণ পড়ার পর বালক রামগোপাল বলে উঠলেন, “লক মহাশয়ের মস্তিস্ক প্রবীণ হলেও তার রচনা শিশুর মত সরল।” শিষ্যের মুখে দার্শনিক লক এর রচনার এমন মূল্যায়ন শুনে ভীষণ খুশি হন ডিরোজিও। পরে পাশ্চাত্যের অপরাপর দার্শনিকের রচনার সাথে রামগোপালের পরিচয় করিয়ে দেন। রামগোপালের চিন্তার জগত দ্রুত সমৃদ্ধ হতে থাকে, বদলে যেতে থাকে চিন্তা ধারা।
ডিরোজিও’র প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনে রামগোপাল ছিলেন নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। কখনো মনযোগী শ্রোতা হিসেবে, কখনো চৌকষ বক্তা হিসেবে। এসব গুণের মাঝেও তার নৈতিক গুণাবলী স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলো। তিনি ছিলেন সত্যবাদী। কোন প্রকার ভয় বা লোভের বশবর্তী হয়েও মিথ্যার আশ্রয় নিতেন না। তেমনই দু’টি ঘটনার উল্লেখ না করলেই নয়।
অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনে বক্তা হিসেবে সকলের নজর কাড়লে শহরে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। যেহেতু তৎকালীন হিন্দু সমাজ ইয়ং বেঙ্গলদের ভালো চোখে দেখতো না, সেহেতু সুনামের চেয়ে বদনাম ছড়িয়েছে বেশি। এই বদনামের দৌড় শেষ হয় রামগোপালের পিতার কানে গিয়ে। কেউ বলে ছেলে নাস্তিক হয়ে গেছে, কেউ বলে খ্রিস্টান হয়ে গেছে। এসব বলাবলির মাঝে পিতা গোবিন্দচন্দ্র ঘোষ ঠিকই বুঝলেন তার ছেলে আসলে কী থেকে কী হয়েছে। কিন্তু সমাজের লোকতো পিছু ছাড়ছে না। তারা এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে। বিচার নিয়ে এসে তারা সহজে গোবিন্দচন্দ্রের গৃহ ত্যাগ করে না। ছেলের কী বিচার করলেন তা দেখে যাওয়ার খুব ইচ্ছে তাদের। তাই তিনি রামগোপালকে বললেন চোখে জল এনে হাত জোড় করে যেন বিচারপ্রার্থীদের বলেন তিনি হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার কাজের সাথে সম্পৃক্ত নন। কিন্তু রামগোপাল কোনমতেই রাজি হন না। পিতা যখন পীড়াপীড়ি শুরু করলেন, তখন অসহায় রামগোপাল পিতার সামনে কান্না জুড়ে দেন। বলেন, “আপনার অনুরোধে আমি সর্ববিধ কার্য্য করিতে এবং সকল ক্লেশ সহিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু মিথ্যা বলিতে পারিব না।
আরেকবার ব্যবসায়িক জটিলতার প্রচুর দেনা শোধ করার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। দেনার পরিমান এত বেশি যে, পরিশোধের পর ব্যবসা টিকে থাকার কোন সম্ভাবনা ছিলো না। তখন কয়েকজন বন্ধু বুদ্ধি দেন কিছু সম্পত্তি অন্যের নামে করে রেখে দেনা এড়ানোর জন্য। স্বাভাবিকভাবে রামগোপাল ঘোষ এমন প্রস্তাব স্বগর্বে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “আমার সর্বস্ব যায় সেও ভালো, কিন্তু উত্তমর্ণদিগকে প্রতারণা করিতে পারিব না।”
দু’টি ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এবং উভয় ঘটনা লোক মারফত শহুরে বলয়ে ছড়িয়ে পড়লে শত্রুরাও রামগোপালের স্তুতি গাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেনি। এমনিতেই বিদেশি বুদ্ধিশীল ব্যক্তিরা তার জানার পরিধি ও ভাবনার গভীরতা দেখে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন, তার উপর সততা ও নিষ্ঠতার এমন গল্প শুনে সত্যিকার অর্থে রামগোপালকে বিশেষ শ্রদ্ধার চোখে দেখতে শুরু করেন।
যশ ও খ্যাতির এমন প্রভাবের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন তিনি। কলেজের পাঠ শেষ করার আগেই কর্মজীবনে পা রাখেন। মিস্টার জোসেফ নামে এক ধনী ব্যবসায়ী ভারত আসেন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। তার একজন ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় দক্ষ সহকারী প্রয়োজন। অনেকেই রামগোপালের নাম প্রস্তাব করলে তিনি তাকে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। এর কিছুদিন পর কেলসল নামে আরেক ব্যবসায়ী এসে জোসেফের সাথে যৌথ বাণিজ্যে অংশ নেন। তাদের যৌথ বাণিজ্যের প্রধান কারবারি হন রামগোপাল। অত্যন্ত দক্ষ ও ন্যায়নিষ্ঠ রামগোপালের কাজে খুশি হয়ে উভয় অংশীদার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেতনের ব্যবস্থা করেন। সাথে আছে দামী দামী সব উপহার। রামগোপাল বড়লোক হিসেবে দ্রুত প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেন।
কিন্তু মিস্টার জোসেফ ও কেলসলের মৈত্রী বেশিদিন টিকেনি। এসময় কেলসলের সাথে রামগোপালেরও বিবাদ হয়। বিবাদের জেরে কেলসল প্রদত্ত সমুদয় উপহারসামগ্রী ফেরত দিয়ে নিজেই ব্যবসা শুরু করেন রামগোপাল। আশার কথা এই যে, রামগোপাল তার নিজস্ব ব্যবসায় প্রত্যাশাতীত মুনাফা লাভ করতে শুরু করেন। যেসব মুনাফার প্রায় পুরোটা সমাজসেবার কাজে ব্যয় করতেন তিনি।
এদিকে ১৮৩১ সালে ডিরোজিওর মৃত্যুর পর অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম হেয়ারের স্কুলে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু পূর্বের সেই প্রভাব, চঞ্চলতায় ভাটা পড়ে। রামগোপালসহ অন্য শিষ্যরা সংগঠনটি জিইয়ে রাখার চেষ্টা করলেও ১৮৩৯ সালে এসে একেবারে ক্ষুদ্র তৎপরতাও বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক ভিত্তি পুরোপুরি নিভে যায়। ইতিমধ্যে শিষ্যগণ সমবেত হয়ে ‘লিপি-লিখন সভা’ নামে আরেকটি সভা প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত বিভিন্ন বিষয়ে একে অপরের সাথে চিঠি পত্রের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেয়া ছিলো এই সভার মূল কাজ। ১৮৩৮ সালে ‘সাধারণ জ্ঞানার্জন সভা’ নামে আরেকটি সভা গঠন করা হয়। বরাবরের মত যার নেপথ্যেও ডিরোজি’র শিষ্যগণ। এই সভার সদস্যরা ‘জ্ঞানান্বেষন’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। যে পত্রিকার প্রধান লেখকদের মাঝে রামগোপাল ঘোষ অন্যতম।
১৮৪২ সালের দিকে রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু দ্বারাকানাথ ঠাকুর ইংল্যান্ড সফর থেকে ফিরে আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসেন বিখ্যাক্ত চিন্তাবিদ ও সুবক্তা জর্জ টমসনকে। টমসনের আগমন সংবাদ শুনে তার সাথে দেখা করতে যান রামগোপাল ঘোষ ও অপরাপর বন্ধুরা। তারা টমসনকে প্রায় দখল করে নেন। টমসন তখন ইয়ং বেঙ্গলসহ স্থানীয় প্রগতিশীল বাঙালিদের সাথে নিয়ে কলকাতায় গড়ে তুললেন ‘ব্রিটিশ বেঙ্গল সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। শহরের ফৌজদারী বালাখানা নাম স্থানে এই সোসাইটির সভা অনুষ্ঠিত হতো। সভায় মিস্টার টমসন ও রামগোপালের বক্তৃতা চলতো পাল্লা দিয়ে। সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে তাদের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা শুনতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে ভিড় জমাতেন ফৌজদারি বালাখানায়।
এসময় ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হন রামগোপাল ঘোষ। ভারতের সাবেক গভর্নর জেনারেল হেনরি হার্ডিঞ্জ বঙ্গে শিক্ষাদীক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তার স্মরণে স্মৃতিস্মারক নির্মাণের লক্ষ্যে ১৮৪৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর কলকাতার টাউনহলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় রামগোপাল ঘোষ ও কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাঁদরেল ব্রিটিশ ব্যারিস্টার টর্টন, হিউম ও কলভিল মহাশয়। রামগোপাল ঘোষসহ স্থানীয়দের প্রস্তাব ছিলো মিস্টার হার্ডিঞ্জের নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা। কিন্তু ব্যারিস্টার টর্টন ও তার দল আঁতকে উঠে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। কে জানে, তারা হয়তো ভয় পেয়েছেন ভারতের মানুষ এবার হার্ডিঞ্জ সাহেবের মূর্তিকে পূজা করতে শুরু করে দিবে। কোনভাবেই তারা রাজি নয়। এমতাবস্থায় প্রস্তাব কিছুটা সংশোধন করে রামগোপাল ঘোষ তার যুক্তি উপস্থাপন করলেন। শিল্প, সংস্কৃতি, স্মরণ ও সম্মান বিষয়ে দেয়া টানা বক্তৃতা শেষে ব্রিটিশ ব্যারিস্টারগণ আর দ্বিমত করার সুযোগ পেলেন না। পরদিন ইংরেজদের মুখপত্র পত্রিকা গুরুত্বের সাথে একটি সংবাদ প্রকাশ করে, যার শিরোনাম “ভারতবর্ষে একজন ডিমন্থিনিস দেখা দিয়েছে, একজন বাঙালি যুবক তিনজন ইংরেজ ব্যারিস্টারকে ধরাশায়ী করেছেন।” পরে গভর্নর হাউসের সামনের আঙিনায় হেনরি হার্ডিঞ্জের অশ্বারোহী মূর্তি স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ডেভিড হেয়ারের ভাস্কর্য স্থাপনেরও উদ্যোগ নেন তিনি।
শুধু বাংলা নয়, বরং সারা ভারতবর্ষে রামগোপাল ঘোষের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও ইংরেজদের বদ মতলবকে ধরাশায়ী করা অথবা কোন ইংরেজ উদ্যোগে ভারতীয়দের স্বার্থ দেখার প্রয়োজন হলেই রামগোপাল হাজির। একবার স্যার ফ্রেডেরিক হলিডে যিনি পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর হয়েছিলেন, তিনি ব্রিটিশ সংসদীয় কমিটির কাছে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে নালিশ ও সাক্ষ্য দেন। রামগোপাল ঘোষ তার বক্তৃতায় হলিডে মহাশয়কে শুধু ধরাশায়ী করেই ক্ষান্ত হননি, বরং হলিডে’র সাক্ষ্যকে সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন প্রমাণ করে ছাড়েন।
১৮৫০ সালে ভারতীয়দের সাথে বিরোধের নিয়ন্ত্রণ নিতে কিছু আইন প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়, ভারতীয়রা যার নাম দেয় ‘কালা কানুন।’ এ নিয়ে তখন শহর সরগরম। চারদিকে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। এমতাবস্থায় রামগোপাল ঘোষ একটি বই লিখেন যার নাম ‘A few remarks on certain Draft Acts, commonly called Black Acts.’ বইটি লেখার পর ভারতবাসী ইংরেজরা তার উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়। ক্ষ্যাপা ইংরেজরা রামগোপালকে Agri-Horticultural Society এর সহ-সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে আবার আরেক ইংরেজ ব্যক্তি সিসিল বীডন সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে মিস্টার বীডন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হয়েছিলেন।
রামগোপালের বক্তৃতা বিবৃতি, লেখালেখি নিয়ে এরকম অসংখ্য গল্প আছে। এর পাশাপাশি তার মানবিক মূল্যবোধ ও পরোপকারের গল্পগুলোও মানুষ ভোলেনি। সহকর্মী রসিককৃষ্ণ মল্লিকের অসুস্থার সময় কিংবা রামতনু লাহিড়ির অর্থ সংকটে, অথবা নারী শিক্ষার জন্য স্কুল স্থাপনে – সবখানে রামগোপাল ঘোষ। বৃদ্ধকালে তিনি বক্তৃতা বিবৃতি ও লেখালেখি বাদ দিয়ে অব্যস্ত জীবনযাপন করেন। এ সময় মূলত স্বজন বন্ধুদের বিপদে আপদে সাহায্য করার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। অনুদানের বাইরে অনেককে ঋণ দিয়েও সহযোগিতা করতেন তিনি। শেষ বয়সে তিনি বন্ধুদের কাছে ৪০ হাজার টাকার বেশি পাওনা ছিলেন।
১৮৬৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে বন্ধুদের কাছে পাওয়া ঋণের সব কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেন এবং তাদেরকে অঋণী ঘোষণা করেন।