রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে দুই সন্তানের এক জননীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা স্থানীয়ভাবে সালিশে মিমাংসা করা হয়েছে। ঘটনার পর ওই নারী আত্মগোপনে চলে গেছেন।
১ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি দোকানে এই ঘটনা ঘটলেও রোববার (৩ জানুয়ারি) বিষয়টি জানাজানি হয়।
অভিযুক্তরা হলেন- মুদি দোকানি আজিবর ও জয়নাল। তাদের বাড়ি উপজেলার পৃথক গ্রামে। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বাসিন্দা। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে তার।
জানা গেছে, বালিয়াকান্দি হাসপাতালে ভর্তি থাকা আত্মীয় এক শিশুকে দেখতে বালিয়াকান্দি এসেছিলেন ওই নারী। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে হাসপাতাল গেটের কাছে পানি আনতে গেলে মুদি দোকানি আজিবর ও জয়নাল ফুঁসলিয়ে দোকানের ভেতর নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে তিনি তার স্বজনকে (শিশুটির মা) ঘটনাটি জানান। বিষয়টি জানাজানি হতে থাকলে শনিবার রাতে বাজার ব্যবসায়ীরা মাসুদ মোল্লার ঘরে সালিশের আয়োজন করেন। সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ী মাসুদ মোল্লা, মো. বাবলু, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ অনেকেই ছিলেন। ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় মাতবররা অভিযুক্ত দু’জনকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেন। এরপর থেকে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ওই নারী আত্মীয় শিশুটির মা বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর সে আমাকে বিষয়টি জানায়। সামাজিক লোকলজ্জা এবং মানসম্মানের কথা চিন্তা করে থানা পুলিশকে জানাইনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সালিশ করে বিষয়টির মিমাংশা করেছেন। তবে জরিমানার কোনো টাকা ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে দেওয়া হয়নি। সালিশের পর তাকে মধুখালী পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আমি সোমবার তাকে খুঁজতে মধুখালী গিয়েছিলাম, কিন্তু তাকে পাইনি।
বালিয়াকান্দি বাজারের ব্যবসায়ী মাসুদ মোল্লা বলেন, কয়েকজন তাকে বিষয়টি বলার পর তাদেরকে বলি দু’পক্ষকে এক জায়গায় করে ঘটনাটা শুনি। গত শনিবার রাতে সালিশে সবকিছু শোনার পর প্রমাণ হয় ঘটনা সঠিক। আজিবর ও জয়নাল ওই নারীকে দোকানের ভেতর নিয়ে এই অপকর্ম করেছে। সালিশে তারা দোষ স্বীকারও করেছে। এ কারণে তাদের ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সব টাকা তারা দিতে পারে নাই। পরে শুনেছি, ওই নারী সঙ্গে ওদের আপস হয়ে গেছে।
এমন ঘটনায় আইনের আশ্রয় না নিয়ে সালিশ আয়োজনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত লোক দু‘টি গরিব। ওদের ছেলেমেয়ে আছে। এসব বিবেচনা করে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
বালিয়াকান্দি থানার ওসি তারেকুজ্জামান জানান, ধর্ষণের ঘটনার কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।