কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পৌর এলাকায় পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে তিন মাস ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত যুবকের পরিবার স্থানীয় যুবলীগ নেতার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার শিশুটির পরিবারকে দিয়ে ২০ হাজার টাকা প্রদানের আশ্বাস ও হুমকি দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন সরানিপাড়া কলোনির বাসিন্দা আবু তালেবের ছোট ছেলে সোহেল (২৪) গত তিন মাস ধরে তার প্রতিবেশি ও কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করে আসছে। শিশুটি অভিযুক্ত সোহেলের স্ত্রীকে ঘটনাটি জানালেও সে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বরং ঘটনা কাউকে জানাতে নিষেধ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সোহেল শিশুটিকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকলে কয়েকজন প্রতিবেশি তা দেখে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে সোহেল ও তার পরিবার শিশুটির পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি দেয় এবং পুলিশের কাছে যেতে বাধা প্রদান করে। পরে অভিযুক্ত সোহেলের পরিবার কুড়িগ্রাম জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন দুলালের স্মরণাপন্ন হলে ওই যুবলীগ নেতা নির্যাতনের শিকার শিশুটির পরিবারকে তার নিজ বাড়িতে ডেকে দশ হাজার টাকায় ঘটনা মীমাংসা করার প্রস্তাব দেন। শিশুটির পরিবার এতে আপত্তি করলে ওই যুবলীগ নেতা শিশুটির পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে ২০ হাজার টাকা প্রদানের আশ্বাস দেন ও শিশুটিকে ৫/৬ মাসের জন্য তার নানার বাড়িতে রেখে আসার নির্দেশ প্রদান করেন। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নীরবে বাড়ি ফিরে আসে।

১৪ জুন, শুক্রবার সকালে সরানিপাড়ায় শিশুটির বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, শিশুটির পরিবার আতঙ্কিত হয়ে নির্যাতনে শিকার শিশুটিকে উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নে তার নানা বাড়িতে রেখে এসেছে। শিশুটির পিতা অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ হওয়ায় শিশুটির মা ও দাদি ওই যুবলীগ নেতা এবং অভিযুক্ত সোহেলের পরিবারের হুমকিতে আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন।

জানতে চাইলে শিশুটির মা ও দাদি জানান, তাদের অনুপস্থিতিতে প্রায় তিন মাস ধরে পাশের বাড়ির সোহেল তাদের পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশু সন্তানকে শারীরিক নির্যাতন করে আসছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) কয়েকজন প্রতিবেশি ঘটনা দেখে ফেলায় বিষয়টি তাদের নজরে আসে। তারা এ নিয়ে পুলিশের কাছে যেতে চাইলেও তাদের নানা ভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির দাদী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “হাজী দুলাল ( যুবলীগ আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলাল) ডাকি নিয়া যায়া কইছে, ২০ হাজার টাকা দেওয়া হইবে, এ নিয়া আর কোনও বাড়াবাড়ি করেন না। তোমার ছাওয়াক (নির্যাতনের শিকার শিশুটি) বাড়িত না থুইয়া ৫/৬ মাসের জন্যে তার নানার বাড়িত পাঠে দেও।”

শিশুটির দাদি প্রশ্ন করেন, “এটা কেমন বিচার, ট্যাকা দিয়া হামরা কী করমো? ওমরা হামার ছাওয়ার উপরা নির্যাতন করি যদি বাড়িত থাইকপার পায় তাইলে হামার ছাওয়া বাড়িত থাইকপার পাবার নয় ক্যা?”

পুলিশের কাছে কেন গেলেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে শিশুটির দাদি বলেন, “হামরা ওমার সাথে ( অভিযুক্ত সোহেলের পরিবার ও যুবলীগ নেতার সাথে) পাবার নই। গরীব মানুষ কোনো বিচার পায় না। পুলিশের কাছত গেইলে হামার বাড়িত থাকায় হবার নয়। আল্লায় ইয়ার (এর) বিচার করবে।”

সালিশ করে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা এখনও শিশুটির পরিবারকে দেওয়া হয়নি বলেও জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশুটির এক প্রতিবেশি বলেন, “ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে শিশুটির পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা ভয়ে কারও কাছে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।”

ঢাকা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন