ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দাদপুর গ্রামে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এক নববধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছেন এক যুবক। ধর্ষণের পর ওই নববধূকে মাথায় আঘাত করে হত্যার পর মরদেহ পুঁতে রাখেন ধর্ষকরা। ঘটনার তিন মাস পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

 

৪ জুন বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান মামলাটির তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, তিনমাস আগের এই ঘটনায় অভিযুক্ত তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-কালীগঞ্জের ত্রীলোচনপুর গ্রামের সলেমান হোসেনের ছেলে মিলন হোসেন (২৬), একই গ্রামের আসাদুল ইসলামের ছেলে ইসরাফিল (২৫) ও আজগর আলীর ছেলে আজিম (২৬)।

জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দাদপুর গ্রামের একটি রাস্তার পাশ থেকে চুলের ক্লিপ, মাথার চুল ও একটি স্যান্ডেল পাওয়া যায়। যার সূত্র ধরে ওই গ্রামের মাঠের মধ্যে থেকে কলাগাছ ও গাছের পাতার নিচে মাটিতে পুঁতে রাখা গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মৃতদেহটি কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রীলোচনপুর গ্রামের এক তরুণীর বলে শনাক্ত করেন তার স্বজনরা। সম্প্রতি বিয়ে হওয়া ওই তরুণী ১৭ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মৃতদেহ উদ্ধারের পর হত্যার মোটিভ উদ্ধার ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকারীদের কোনপ্রকার আলামত না পেয়ে ক্লু-লেস এ মামলার তদন্তে কিছুটা বেগ পেতে হয়। পরে কেয়ার বিয়ের আগে ও পরে নানা বিষয়ে পর্যালোচনা শুরু করা হয়।

তদন্তের বিবরণ দিয়ে তিনি জানা যায়, পর্যালোচনায় জানা যায়, নিহত মেয়েটির সাথে তিনবছর আগে থেকে একই গ্রামের সলেমানের ছেলে মিলন হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরিবার থেকে একই উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের মাইক্রো চালক সাবজাল হোসেনের সাথে মেয়েটিকে বিয়ে দেন।

বিয়ের পর মিলন হোসেন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে এমন সন্দেহে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর এলাকায় ছদ্দবেশে অভিযান শুরু করে পুলিশ। কয়েকদিনের অভিযানের এক পর্যায়ে ১৬ মার্চ জীবননগরের হাসাদাহ এলাকা থেকে মিলনকে আটক করা হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রশ্নবাণের এক পর্যায়ে মিলন হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন এবং তার সাথে ইসরাফিল ও আজিম জড়িত এমন তথ্য প্রদান করেন। মিলন গ্রেফতার হওয়ার পর আসামি ইসরাফিল ও আজিম গা ঢাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে থাকে।

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরাফিলকে ২৭ মার্চ গ্রেফতার করলে তিনিও হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে দুজনের বক্তব্যে মিল পাওয়ায় হত্যার সাথে ইসরাফিলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়। সেই সাথে আজিমও জড়িত সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যায়। দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও তৃতীয় আসামি আজিমকে গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না। দীর্ঘ প্রায় ৩ মাসের চেষ্টায় গত মঙ্গলবার (২ জুন) কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে আজিমকে গ্রেফতার করা হয়। তিনিও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

হত্যার দিনের ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে কেয়া খাতুনকে ‘ব্যর্থ প্রেমিক’ মিলন তার বাবার বাড়ি থেকে ফুসলিয়ে ডেকে নিয়ে যান। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে মাঠের মধ্যে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মিলন তাকে ধর্ষণ করেন। পরে একে একে আজিম ও ইসরাফিল তাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর মিলন বাঁশের লাঠি দিয়ে ওই তরুণীর মাথায় আঘাত করে তার হত্যা নিশ্চিত করেন।

সেখানে পাশের বাড়ি থেকে একটি কোদাল এনে রাস্তার পাশে মাটি চাপা দিয়ে কলাগাছ ও কলাগাছের পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে পালিয়ে যান। প্রেমে ব্যর্থ হয়েই মিলন অন্য সহযোগীদের নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

বণিক বার্তা

মন্তব্য করুন