প্রবন্ধদর্শনমানবতাবাদ ও অস্তিত্ববাদ | সা'দ উল্লাহ

মানবতাবাদ ও অস্তিত্ববাদ | সা’দ উল্লাহ

প্রকৃতির কাছে অসহায় মানুষ তার সীমাবদ্ধ জ্ঞানে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি আর অনিশ্চিত জীবনের দুর্ঘটনাবলীর পিছনে কারণ খুজতে গিয়ে ধারনায় এনেছে এক কাল্পনিক ক্ষমতার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের, ভগবানের।

মানবতাবাদ ও অস্তিত্ববাদ | সা’দ উল্লাহ

প্রকৃতির কাছে অসহায় মানুষ তার সীমাবদ্ধ জ্ঞানে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি আর অনিশ্চিত জীবনের দুর্ঘটনাবলীর পিছনে কারণ খুজতে গিয়ে ধারনায় এনেছে এক কাল্পনিক ক্ষমতার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের, ভগবানের।

মানবতাবাদ ও অস্তিত্ববাদের প্রবক্তা ফ্রান্সের দার্শনিক জা পল সার্তে (১৯০৫-১৯৮০)। ১৯৪৬ সালে এ সম্বন্ধে তার এক পুস্তক প্রকাশিত হয় ফরাসি ভাষায় যার অনুবাদ হয় ১৯৪৮ সালে Existentialism and Humanism। এই পুস্তকে সার্তে শুধু অস্তিত্ববাদ বিরোধী মতবাদকে খণ্ডন করেননি, একে নতুনভাবে ব্যাখা করে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। এই কারনে সার্তে অস্তিত্ববাদ দর্শনের একজন প্রবক্তা, হয়তো মৌলিক চিন্তাধারার অধিকারী নন। তবে এটা সত্য যে, সার্তের মাধ্যমেই অস্তিত্ববাদ জীবন্ত দর্শনে ঠাই পেয়ে গেছে পণ্ডিত মহলে।

অনেকে সমালোচনা করে অবশ্য বলে থাকেন সার্তের অস্তিত্ববাদ আত্মকেন্দ্রিক, তাই মানবতা বিরোধী। এই সমালচনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য সার্তে উক্ত পুস্তকের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, অস্তিত্ববাদ মানবতা বিরোধী নয়, বরং মানবতাবাদী। এই বক্তব্য প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি যেসব যুক্তির অবতারনা করেন তা হলোঃ

১. অস্তিত্ববাদ এমন এক মতবাদ যা মানব জীবনের অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। পিছনে ঠেলে দেয় না। সত্য, কর্ম পরিবেশ ও মানবিক চেতনার ক্ষেত্রে এ মতবাদ প্রযোজ্য।

২. মানুষ তার প্রত্যেক কর্মের জন্য দায়ী, কারণ প্রত্যেক মানুষের সাধারণ সত্তার ওপর বিশিষ্ট সত্তা আছে। এই বিশিষ্ট সত্তা মানুষকে তার নিজের অবস্থানে সংস্থাপিত করে এবং নিজের অস্তিত্বের সমগ্র দায়িত্ব নিজের ওপরেই অর্পণ করে। আমরা যখন বলি, মানুষ তার নিজের জন্য দায়ী, তখন আমরা একথা বলি না যে সে শুধু তার নিজের জন্যই দায়ী; বরং আমরা বলি সে সমগ্র মানবজাতির জন্য দায়ী। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, পরকে আপন করিতে প্রতিভার প্রয়োজন। অন্যের মধ্যে প্রবেশ করিবার শক্তি এবং অন্যকে সম্পূর্ণ আপনার করিয়া লইবার ইন্দ্রজাল, ইহাই প্রতিভার স্বাক্ষর। এই প্রতিভাই হচ্ছে ‘মানুষের বিশিষ্ট সত্তা।’ ‘আত্মকেন্দ্রিকতা’ শব্দটিকে দুটি অর্থে বিচার করা দরকার, এক অর্থে নয়। একটি অর্থ হলো ‘ব্যক্তিসত্তার স্বাধীনতা’, অপর অর্থে মানুষ মানবিক আত্মকেন্দ্রিকতার বাইরে যেতে পারে না, কিন্তু নিজের সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আসলে সে সমগ্র মানব জাতির জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে, কারণ মানুষ কখনো মন্দটা পছন্দ করে সিদ্ধান্ত নেয় না, অপেক্ষাকৃত ভালো বস্তু পছন্দ করে কিংবা ভালো ফল চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এবং সেই ‘ভালো’ টা সকলের জন্যই ভালো।

৩. মানুষের বিশিষ্ট সত্তা সাধারণ সত্তার পূর্বগামী বলেই, মানুষ দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হয়, যা সাধারণভাবে সমগ্র মানবজাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন। এক ব্যক্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো সে বিয়ে করবে এবং সন্তান লাভ করবে। এ ইচ্ছাটা তার ব্যক্তিগত আশা বা প্রত্যাশার বিষয়। কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের মাধ্যমে সে একাই একটি কাজ সম্পাদন করছে না, বরং সমগ্র মানবজাতির প্রতিনিধিত্ব এক বিয়ের অভ্যাস ও সন্তান লাভের জন্য অনুপ্রাণিত করছে, বহু বিবাহ নয়। এ দৃষ্টান্ত বা সিদ্ধান্ত দিয়ে শুধু নিজেকে প্রকাশ করলো না অন্য সবাইকে প্রকাশ করার জন্য রাস্তা তৈরি করে দিল। তাই আমরা নিজের স্বরুপ নির্ধারণের মাধ্যমে আসলে মানবজাতির স্বরুপ নির্ধারণ করার চেষ্টা করি।

৪. অস্তিত্ববাদীরা স্বীকার করেন যে প্রত্যেক মানুষ উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষ টেনশনে ভুগছে। কারণ, বিশিষ্ট সত্তার প্রভাবে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সমগ্র মানবজাতির জন্য দায়িত্ববোধ এড়াতে পারে না। তাই এই দ্বিধান্বিত উদ্বেগ বা টেনশন। এই জন্য অস্তিত্ববাদী দর্শন মানবতাবাদী হয়ে দাঁড়ায়।

অস্তিত্ববাদী দর্শনের মূল বিষয় আলোচনা করতে গিয়ে সার্তে বলেন আমরা যখন ঈশ্বরকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করি, তখন তাকে একজন অতীন্দ্রিয় কারিগররুপে কল্পনা করি। কিন্তু নাস্তিক অস্তিত্ববাদ বলে যে, ঈশ্বর না থাকলে এমন কোনো কিছুর অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল, যার অস্তিত্ব সাধারন সত্তার পূর্বেই ছিল। দস্তয়েভস্কির বক্তব্য টেনে সার্তে বলেন ঈশ্বর না থাকলে সব কাজই নির্বিঘ্নে করা যেতো। কোনো কাজে কেউ বাগড়া দিতে আসতো না। কিন্তু মানুষের কাজের মধ্যে কোনো সাধারণ মানদণ্ড নেই, তাই কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ কাজ তা নির্ধারণ করা খুব শক্ত। এ বিষয়ে সার্তে একটি উদাহরণ দেন। এক তরুণ ও তার মা ছিল; বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আলাদা বাস করে। বড় ভাই ১৯৪০ সালে জার্মান আক্রমণে মারা যায়। তার মা স্বামীর আচরন ও বড়ো ভাইয়ের মৃত্যুতে বেশ ভেঙে পড়ে। এই তরুণই ছিল তার মায়ের একমাত্র ভরসা। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ‘স্বাধীন ফরাসি বাহিনী’ তে সে যোগদান করবে না, মায়ের কাছে থাকবে। এই দ্বন্দ্ব নিয়ে সার্তের পরামর্শ চাইলে সার্তে কোনো পরামর্শ দিতে পারেনি। কারণ মানুষের কাজের কোনো সাধারণ মানদণ্ড নেই।

অনেকে মনে করেন সার্তের অস্তিত্ববাদ দর্শন আত্মকেন্দ্রিক। যদিও সার্তে এর মাঝে মানবতাবাদী চরিত্রের প্রলেপ দিতে চেষ্টা করেছেন। বিরুদ্ধবাদীরা বলেন, যে দর্শন আত্মকেন্দ্রিকতার গর্ভে ভ্রূণ হয়ে জন্মাচ্ছে সে মানবতাবাদী হয়ে আত্মকেন্দ্রিকতার জরায়ু থেকে প্রকাশ পাবে কিভাবে? কিন্তু সার্তে যে মানুষের কল্যান প্রত্যাশী দার্শনিক এর প্রমাণ দিতে তিনি চেষ্টা করতে কসুর করেননি।

অনেক পণ্ডিত বলেন, সার্তের বক্তব্যের ধরণ দার্শনিক নয়, অনেকটা আধ্যাত্মবাদী সমাজ সংস্কারক বা ‘প্রফেটিক ধরনের।’ সার্তের চিন্তাধারাকে সত্যিকারভাবে বিচার করলে দেখা যায় তার চিন্তাধারায় দর্শন থাকলেও বিজ্ঞান এবং যুক্তি কম। তবে তিনি যে একজন মানবকল্যাণকামী লেখক ছিলেন তা কেউ অস্বীকার করেন না। সার্তে অনন্য, তার মতো কল্যাণকামী দার্শনিকের আরো বেঁচে থাকা বিশ্বের জন্য মঙ্গল ছিল।

মহাকালের ঘূর্ণিপাকে

যিশু নাকি বলেছেন আমার মাধ্যম ছাড়া কেউ পিতৃসদনে যাবে না। তিনি যে পিতার কথা বলেছেন তা নতুন নিয়মের নিউ টেস্টামেন্ট। তেমনি শ্রীকৃষ্ণও বলেছেনঃ মামেকং শরনম ব্রজ। আমার শরণাপন্ন হও মুক্তিলাভের জন্য। আবার কেউ যদি দেবীর মাধ্যমে স্বর্গবাসের ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে দুর্গাদেবী কিংবা কালিমাতার পূজা দিলেই হলো। হিন্দুধর্মের আকর গ্রন্থ চতুর্বেদ হলেও সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত গ্রন্থ হচ্ছে গীতা। এই রকম বৌদ্ধ ধর্মের আকর গ্রন্থ ত্রিপিটক। তার মধ্যে সুত্র পিটক পাঁচটি নিকায়ে বিভক্ত যার অন্যতম খুদ্দক নিকায়। এই নিকায়টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থের সমাহার, যার মধ্যে দ্বিতীয়টি ধম্মপদ। ধর্মাহার মহাস্থবির বলেছেন যে সুপ্রাচিন বুদ্ধদেবের নির্ভেজাল উপদেশাবলি সংকলিত হয়েছে এই গ্রন্থে। তিনি বলেছেন যে ‘ধম্ম’ ও ‘পদ’ এই দুটি শব্দের বিভিন্ন অর্থ বৌদ্ধ সাহিত্যে প্রচলিত আছে, যা অনুসরণ করলে ‘ধম্মপদ’ নামটি দাঁড়ায়, ধর্মোপলব্ধির পথ বা পুণ্যের পথ। ‘ধম্মপদ’ এর অর্থ হল ধর্ম অর্থাৎ বুদ্ধদেবের প্রচারিত ধর্ম সম্পর্কীয় পদ বা কবিতা। গীতার ধর্ম আস্তিকতা, বৌদ্ধধর্ম বেদবিরোধী বা নাস্তিকতা। গীতার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল অর্জুনকে যুদ্ধে বা হিংসায় প্রণোদিত করা, ধম্মপদ হচ্ছে হিংসায় উন্মুক্ত পৃথিবীকে অহিংসার বানী প্রচারের উপদেশ। গীতার শ্রীকৃষ্ণের স্মরণাপন্ন হলে মুক্তি, বৌদ্ধবাদে সম্যক জ্ঞানের সঙ্গে দর্শন করলে সর্ব দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অন্যত্র বলেছেন যে, এই দুঃখ মুক্তিই নির্বাণ।

একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছেন, ধর্ম হলো এক প্রকারের সফটওয়্যার যার আছে নিজস্ব ধরনের সংকেত। এই সংকেতের নির্দেশেই কেবল সে তাই করে যাচ্ছে আপন লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। যদি কেউ ধর্মে জড়িয়ে পড়ে এবং সত্যি নিজের জীবন ধর্মের অনুশাসনে পড়তে চায় তা হলে তার জন্য এই ধর্মের সফটওয়ারেই লেগে থাকা ভালো। আবার অনেকে ঐ সফটওয়ারে ভিডিও গেম খেলে, ছবি দেখে, গান শুনে মনকে এদিক ওদিক ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায়, শুধু পারে না একজন সাধকের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে।

অবশ্য অনেক সাধুসন্ত বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার মাঝে নিজেই তার মুক্তির মার্গ বা সফটওয়্যার তৈরি করে নেয় এবং এভাবেই সাধকের সাধনার বা তপস্যা ও ধ্যানের দ্বারা ধর্ম গড়ে উঠেছে। প্রায় ধর্মগ্রন্থে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আদিতে ঈশ্বর ছিল এক, পরে বহু দেবতার মাঝে ঈশ্বর হলো সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা। তিনি ছিলেন আঞ্চলিক গোত্রীয় দেবতা। এরপর ইহুদিরা যখন ব্যাবিলনে একক বিশ্বত্রাতার মতবাদ পেলো এবং বাইবেলে বর্ণিত দেবগণ লাভ করলেন নতুন অর্থ, নতুন মাত্রা। জোসেফ ক্যাম্পেবেল তাই বলেছেন। একটা পুরানো ঐতিহ্যকে চালু রাখা যায় একটা উপায়ে, আবার সমসাময়িক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বারবার নবায়ন করাও যায়। ওল্ড টেস্টামেন্টের যুগে নিকট প্রাচ্যের কয়েকশ মাইল জায়গা নিয়ে বিশ্ব ভাবা হতো জর্ডন নদী, টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস, নীল নদ ইত্যাদির আশপাশকে ঘিরে। সে সময় অ্যাজটেকের কথা কেউ জানতো না, চীন দেশকেও চিনতো না। তাই বিশ্বের পরিধি পরিবর্তন হলে ধর্মের পরিধিও বেড়ে যায়।

নিটশের ঈশ্বর

জার্মান দার্শনিক নিটশে লোকদের ডেকে চিৎকার করে বলেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ অনন্ত শূন্যতা বিরাজ করছে। তোমরা বলছো ঐ শূন্যের মাঝে ঈশ্বর আছেন। কিন্তু কোথায় ঈশ্বর? যদি কখনো থাকতো এখন কই? এখন নেই, শূন্য। ঈশ্বরের আর অস্তিত্ব নেই। গড ইজ ডেড।

নিটশে ঘোষণা করলেন ‘ঈশ্বর মৃত’। তাই এই ঘোষণার সঙ্গে যে শুন্যতার সৃষ্টি তার মধ্যেই তিনি আর একজন ঈশ্বর সৃষ্টির ধারনা দিলেন। কারণ মানুষ শূন্যতার মাঝে বাস করতে পারে না। একজন সঙ্গী চাই, যে তার সুখে-দুঃখে, আপদে বিপদে সাহস যোগাতে পারে। সান্তনা দিতে পারে। নিঃসঙ্গতার মাঝে মানুষ ধুকতে ধুকতে মরে যায়-এই শূন্যতার মাঝে তাকে কিছু তৈরি করতে হয়- An abyss upon which man must construct the structure of his meaningfulness বলেছেন জর্জ ব্রাস্টেল।

মুর্তি পূজার উৎসই হলো শূন্যতার মাঝে। মানুষের সঙ্গী সৃষ্টির যে ধারনা সে সঙ্গী তারই অবয়বে চিন্তিত, পরিকল্পিত, গথিত। তাই আরনেস্ত শর্ট বলেছেন, ‘The idea of those who make divine images in human form is entirely reasonable, since of all things, the spirit of man is nearest to the gods and most godlike। এই কারনে বাইবেল বলতে পেরেছে- Man is created after the image of god.’

ঈশ্বর নিজের আকৃতিতে মানুষ তৈরি করলেন। এটা আর কিছু নয়, শুধু উল্টে বর্ণনা করা। আপনাকে প্রকাশ করা।

নিটশের নাস্তিকতাবাদের মুলকথা হলো ধর্ম বা ঈশ্বর চিন্তা মানুষকে তার সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং তার সব স্বাধীনতা হরণ করে। যদি ঈশ্বর থাকে, তাহলে মানুষ মুক্ত নয়। আর মানুষ মুক্তচিন্তা করতে গেলে ঈশ্বর থাকে না। জা পল সার্তে তাই বলেছেন। সার্তে কামু আর হেজার নিটশের ‘সুপার ম্যানের’ ধারনাকে অনুমোদন করে বলেছেন মানুষ যদি তার স্বাধীনতা ভোগের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করতে চায় তাহলে সেখানে বাগড়া দেওয়ার জন্য তৃতীয় সত্তার অস্তিত্ব থাকার প্রয়োজন নেই। কামু তার পুস্তক দ্যা রেবেল এ বলেছেন One must learn to live and to die in order to be a man, to refuse to be a god – একজনকে বাঁচতে ও মরতে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং মানুষের মতো বাঁচতে হলে ঈশ্বরকে অস্বীকার করতে হবে। দস্তয়েভস্কি একবার বলেছিলেন ‘যদি ঈশ্বর না থাকতো তাহলে লাগামহীন ভাবে আমরা যা খুশি তাই করতে পারতাম।’ আমরা সবকিছুই করতে পারতাম যদি ঈশ্বরভীতি না থাকতো।

অনেকে বলে থাকেন মানুষ নিজের প্রয়োজনেই ভগবানের জন্ম দিয়েছে। আর এই জন্ম আদিকালের। প্রকৃতির কাছে অসহায় মানুষ তার সীমাবদ্ধ জ্ঞানে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি আর অনিশ্চিত জীবনের দুর্ঘটনাবলীর পিছনে কারণ খুজতে গিয়ে ধারনায় এনেছে এক কাল্পনিক ক্ষমতার সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের, ভগবানের। তার কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। নির্ভর করার জন্য। তাই ঈশ্বর নির্ভর। নিটশের ‘ঈশ্বর নেই’ এই শূন্যতার মাঝে আর একটা ঈশ্বরের তিনি সৃষ্টি করে দিলেন নির্ভর করার জন্য। কারণ মানুষের প্রকৃতিই দুর্বল।

– ২৮ জানুয়ারি ২০০২ সালে ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত।

লেখাটি সংগ্রহ, নির্বাচন ও কম্পোজ করেছেন – আঁধারের যাত্রী

নতুন লেখার নোটিফিকেশন পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

কপিরাইট সংক্রান্ত

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা ভালো লাগলে, গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে, কিংবা অপছন্দ করলে নিজে বকা দিয়ে অন্যকে বকা দেয়ার সুযোগ করে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। লেখার শুরুতে এবং শেষে ফেসবুকসহ ডজনখানেক এপসে শেয়ার দেয়ার অপশন আছে। চাইলে কপি করেও শেয়ার দিতে পারেন। কিন্তু দয়া করে নিজের নামে অথবা জনাবা সংগৃহীত ভাইয়ের নামে, কিংবা মিস্টার কালেক্টেড এর নামে চালিয়ে দিবেন না। মূল লেখক এবং ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করবেন। এবং দোহাই লাগে, এখান থেকে কপি করে নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন না।

মন্তব্য করুন