(তৃতীয় ও শেষ অংশ)
অবিশ্বাস: বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচনের পূর্বে ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগে সাধারণত মাদ্রাসা ভিত্তিক ওয়াজ বা ইসলামিক জলসা অনুষ্ঠিত হতো। এখন নানানভাবে, এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওয়াজের আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে আপনি কী ভাবছেন? ওয়াজ কি তথাকথিত সেকুলার রাজনীতির নতুন অস্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে?
সুষুপ্ত পাঠক: এটা একটা বাস্তবতা বাংলাদেশ দেখিয়ে দিলো যে, ওয়াজ নির্বাচনের পূর্বে নিষিদ্ধ করেও নির্বাচন কমিশন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে হাটহাজারীর এক মোল্লার হুমকিতে! এদেশের কাঠামো কতখানি নতজানু মাদ্রাসার হুজুরদের কাছে, ইসলাম এখানে কতখানি জেঁকে বসেছে, রাষ্ট্র এখানে ধর্মের হাতে গ্রাস হয়েছে সেটা দেখিয়ে দিলো। আমার এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের প্রত্যেক বছর ওয়াজ আয়োজন করতে দেখতাম। নির্বাচন করবে ঢাকার কোন শিল্পপতি নিজ গ্রামে, তিনি চার পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে গ্রামে ওয়াজ করে নিজে প্রধান অতিথি হন। জনগণ এসব পছন্দ করে। কে নামাজ পড়ে, কে ইসলামি অনুষ্ঠানে টাকা খরচ করে এটাই তাদের কাছে বড়। যে কারণে ধনীদের এখন স্কুলের চাইতে মাদ্রাসা আর মসজিদ নির্মাণে বেশি আগ্রহী দেখা যায়। আগে স্কুল লাইব্রেরি করতে দেখা যেতো। স্কুল লাইব্রেরি কিছুই যেহেতু পরকালে যাবে না মসজিদ মাদ্রাসা ছাড়া তাই পাবলিক মসজিদ মাদ্রাসা হতে দেখলে খুশি হয়। রাজনীতি করতে গেলে ধর্মান্ধ জনগণ ও তাদের ধর্মীয় নেতাদের খুশি রাখতে হবে। এ কারণেই লীগের নেতাদের এখন ওয়াজের মাহফিলে চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে হয়। শামীম ওসমান এখন সব সময় বলেন তিনি আল্লাহকে খুশি করতে রাজনীতি করেন। তিনি জনগণের কাছে ভোট চাইবেন না। যদি আল্লাহ চায় তিনি আবার এমপি হবেন তাহলে কেউ ঠেকায় রাখতে পারবে না। মজা হচ্ছে জনগণ তার এই কথার সঙ্গে দ্বিমত করতে পারে না! এভাবে চলতে থাকলে বামপন্থিরাও ওয়াজের ময়দানে যাওয়া শুরু করবে।
অবিশ্বাস: বর্তমানে ওয়াজ মাহফিল মূলত ফেসবুক ও ইউটিউব কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। ছোট ছোট ঘরোয়া মাহফিল রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় কোন শ্রোতা নেই, বক্তা একা একা চিৎকার চেঁচামেচি করে যাচ্ছে। আপনার কি মনে হয়, তারা ফেসবুককে প্রচারের টুল হিসেবে ব্যবহার করছে, নাকি ফেসবুক ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে?
সুষুপ্ত পাঠক: আমরা যখন ব্লগে লিখতাম, তখনো ফেইসবুক এতোখানি জনপ্রিয় হয়নি, তখন দেখতাম আমাদের সঙ্গে লাগতে আসা ইসলামিস্টদের সবাই শিবির করত। এরা শিক্ষিত ও আইটিতে বেশ দক্ষ ছিলো। তখনো কওমি গ্রুপ অনলাইনে কেউ আসেনি। একজনকে চিনতাম যে কওমি হুজুর আমাদের সঙ্গে আমার ব্লগে ব্লগিং করত। তবে আশ্চর্য যে এই কয়েক বছরে কওমি হুজুরদের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে ফেইসবুক কেন্দ্রিক। তাদের নতুন প্রজন্ম দেখেছে যুগের এই শক্তিশালী মাধ্যমে বাদ দিয়ে পড়ে থাকলে পিছিয়ে পড়তে হবে। মানুষ এখন ফেইসবুকে দেখে। টিভিও দেখে না। খবরের কাগজও পড়ে না। নিউজ যতটুকু পড়ে সবটাই ফেইসবুকের মাধ্যমে। তাই কওমি নিউজ পোর্টাল তারা খুলেছে অনেকগুলো। ওয়াজের পেইজ, হুজুরদের নিজেদের নামে পেইজ। এগুলো রীতিমত একটা টিম হিসেবে কাজ করে। তারা ফেইসবুককে প্রচারের একটা মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহার করছে। আবার বাধ্য হয়েছে বলাও শ্রেয়। কারণ যুগকে তারা অস্বীকার করতে পারেনি। যে কারণে শুক্রবারে জুম্মার নামাজের খুৎবার বক্তব্য ইমাম তার পেইজের টিমকে দিয়ে ভিডিও করিয়ে আপলোড করাচ্ছে। এগুলো দেখে ওয়াজ আয়োজনকারী হুজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। ভিডিওতে হুজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করার ফোন নাম্বার থাকে। ফেইসবুক ছাড়া বিজনেসের এমন সহজ বিজ্ঞাপন আর কোথায় পাবে?
অবিশ্বাস: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ওয়াজের ভিডিওতে বেশ সহিংস, ঘৃণাশ্রয়ী ও অশ্লীল বক্তব্যের ব্যবহার দেখা যায়। ইসলামী বক্তাদের এমন উগ্র থেকে উগ্রতর হয়ে ওঠাকে আপনি কিভাবে দেখেন? উত্থান নাকি পতন?
সুষুপ্ত পাঠক: ওয়াজের প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে নারী। সব ধর্মের টার্গেটই হচ্ছে নারীরা। ইসলামে পর্দার নাম করে তাকে প্রথমে ঘরে বন্দী করেছে। দ্বিতীয় পুরুষকে চার বিয়ে ও দাসী গমনের অনুমতি দিয়ে তাকে চরমভাবে অপমানিত করেছে। কিন্তু এটি যখন সে অনুধাবন করতে শুরু করবে তখন বিদ্রোহ করা ছাড়া পথ থাকবে না। যে কারণে হাদিসে নারীদের নবী সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, জাহান্নামে শুধু নারী আর নারী কিছু পুরুষ…। তার কারণ হচ্ছে তারা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হয়েছে, পর্দা করেনি ইত্যাদি। ওয়াজে এগুলোই আসে। আপনি অনলাইনে নারীর পর্দা বিষয়ক যত ওয়াজ পাবেন তার মধ্যে চটির ফ্লেবার থাকবেই। নারী শরীর নিয়ে আদি রসাত্মক বর্ণনা দিয়ে বক্তা আজকের বেপর্দা নারীদের চলাফেরার উপর শ্রোতাদের পর্ণগ্রাফির বিনোদন দেন। ওয়াজে নারীকে নিয়ে অশ্লিল ইঙ্গিত ইদানিং বেড়েছে আগে ছিলো না- এরকম মতামতে আমি একমত নই। তবে রাজনৈতিক ইসলাম, অর্থ্যাৎ খিলাফত কায়েম করার জন্য মুসলমানদের জন্য জিহাদ ফরজ, সেক্যুলার রাষ্ট্র ধারণা কুফরি, গণতন্ত্র হারাম এরকম ওয়াজ এখন বেড়েছে। তার কারণ হচ্ছে ইসলামিক দল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবার পর নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার পরই তাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক লক্ষ নিশ্চিত করতেই ইসলামে মূল দর্শন খিলাফতকে যে যার পার্টির জন্য ব্যবহার করছে। দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পূর্বে উপমহাদেশের ওলামারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এখন জিহাদ করার সময় নয় কারণ মুসলমান এখন বিধ্বস্ত, খর্বশক্তির। তাদের এখন নিজেদের গুছিয়ে নিতে, নিজেদের ঘেরাটোপে সুস্থির হবার পর মুসলমানদের উচিত হবে সশস্ত্র খিলাফত আন্দোলন শুরু করা। তখনই দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকেই ওলামাদের ওয়াজ জলসা মাহফিলে ইসলামী শিক্ষা, মুসলিম আত্মপরিচয় ইত্যাদি বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছিলো বেশি। জিহাদ কতল করার মত পরিস্থিতি ছিলো না। কারণ আধুনিক যন্ত্র প্রযুক্তি হাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা বোকামীর নামান্তর। যে কারণে একটা বড় সময় পর্যন্ত ওলামারা কেবল ইসলামী শিক্ষা আদব হারাম হালালের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলেন। আপনি দেখবেন এ কারণে আজকের ওলামারা মনে করেন দেওবন্দ, আলীয়া মাদ্রাসা ছিলো ইংরেজদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। মুসলমানদের জিহাদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য তখনকার ওলামাদের দিয়ে এ দুটো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিলো। আজকের দেওবন্দ ওলামাদের মুখের কথা এগুলোই। তাই এটাকে উত্থান বা পতন কিছুই বলছি না। ইসলাম ১৪০০ বছর ধরে তার হাদিস, তাফসির, সীরাত, কুরআন নিয়ে চলছে। জিহাদের কৌশল হিসেবে কখনো কখনো কোনটায় জোর বেশি দেয়া হয় কোনটায় জোর বেশি দেয়া হয় না। এখন ওয়াজে ভায়োলেন্স বেড়ে গেছে কারণ দেশে তাদের শক্তিমত্তা ও জনগণের সমর্থন দুটোই বেড়েছে।
অবিশ্বাস: ওয়াজের সংস্কৃতি আমাদের আবহমানকাল ধরে গড়ে ওঠা বাঙালি ও আদিবাসী সংস্কৃতিকে গ্রাস করেছে কিনা? আমাদের জারী-সারী-বাউল গানের আসর, নাটক, যাত্রা প্রভৃতির জায়গা দখল করে নিচ্ছে কিনা? উত্তরযদি হ্যাঁ হয়, তবে আমাদের সংস্কৃতির স্বরূপ রক্ষায় কার কেমন ভূমিকা রাখা উচিত?
সুষুপ্ত পাঠক: সোজা কথা বললে, কোন রাখঢাক রেখে কথা না বললে, বাঙালী সংস্কৃতি বলতে অতীতে যা ছিলো, এখন যা পরিবর্তিত রূপে আছে তার সঙ্গে ইসলামের সরাসরি সাংঘর্ষিক। দেখেন আদিবাসীদের বড় একটা অংশ খ্রিস্টান হয়েছে মিশনারীদের কাছ থেকে, তাদের কেউ তাদের সংস্কৃতিকে ত্যাগ করেনি। নামটা পর্যন্ত পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করলে তার সংস্কৃতি, খাদ্যাভাস, ইতিহাস ঐতিহ্য এমনকি পৈতৃক নামটা পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হতো। ভিএস নাইপাল এসব প্রত্যক্ষ করেছিলেন। মন্তব্য করেছিলেন, ইসলাম ভাষা ও সংস্কৃতির উপনিবেশ চালায়। আমি এ কথার প্রয়োগ দেখতে পাই। বাঙালী মুসলমানের দ্বিধা, স্ববিরোধীতার মূলেই এই উপনিবেশিকতা। সে তার জাতির অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে উত্তরাধিকার স্বীকার করতে পারে না। মধ্যযুগের যত মুসলমান কবি পাবেন তারা সবাই মক্কা মদিনার কাহিনী নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। মুসলিম হিসেব হয়ত ইসলাম ধর্ম নিয়ে কাব্য করতেই পারে যেহেতু সেটা ছিলো ধর্মীয় মিথ নিয়ে মহাকাব্য রচনার যুগ। কিন্তু স্পেনে মুসলিম বিজয়ে পূর্বপুরুষের গৌরববোধকে আমি কি বলব? আমাদের বাউলদের মোল্লাদের হাতে নাজেহাল হবার ইতিহাস অনেক পুরোনো। তিন-চারশো বছর আগেও তাদের হাতে বাউলদের নাজেহাল হবার ইতিহাস গ্রামের লোকগানে পাওয়া যায়। বাউলদের ধরে চুল কেটে দেয়া, তাদের আশ্রমে আগুন ধরিয়ে দেয়া। কারণ তারা আল্লাহ রসূল নিয়ে মনগড়া বক্তব্য দেয় ইত্যাদি। তবু গ্রামের যাত্রা, পালাগান, বাউল গানের আসরে উপচে পড়ত মানুষ। হুজুরদের একটা অস্তিত্ব সংকট এরকম দৃশ্যে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় বলে মনে করি। বিগত ৫০ বছর ধরে ক্রমাগত যাত্রা, নাটক, গান, সার্কাস, বাউল, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদির বিরুদ্ধে ওয়াজ করে তারা গ্রামের মানুষদের মাঝে এগুলো জাহান্নামে যাবার রাস্তা এটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারপর নিজেরা প্রশাসনের উপর প্রভাব সৃষ্টি করার পর আইন দিয়ে মেলা, যাত্রা, গানের আসর বন্ধ করিয়েছে। বৈশাখী মেলা ছিলো গ্রামবাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব মানুষের কাছে। এটা এখন বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে বিগত কয়েক বছর সরকার থেকে অনুমতি না দেয়ার কারণে। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে শতবছরের পুরোনো বৈশাখী মেলাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রাপালা, লালন উৎসব, বাউল উৎসব এরকম অনুষ্ঠান করতে দেয়া হচ্ছে না। তার জায়গায় ওয়াজ মাহফিল খালি মাঠে গোল দিচ্ছে। আমি এখনো মনে করি, ওয়াজ আর গানের আসর একসময় অনুষ্ঠিত হলে মানুষ গানের অনুষ্ঠানেই বেশি যাবে। এ কারণেই বারবার সরকারের কথা বলি। সরকার যদি এধরণের সংস্কৃতি ও প্রগতিশীলতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করত তাহলে মানুষ হয়ত এতখানি মৌলবাদী চরিত্র পেতো না। আমাদের সংস্কৃতি মৌলবাদীরা সবাই ঢাকায় থাকে। মহিলা সমিতিতে নাটক করে একটা শ্রেণীকে শিক্ষিত করে তুললে কোন লাভ হবে না। ব্যান্ডের গান নিয়ে এক সময় বুদ্ধিজীবীরা নাক সিটকাতো। বাঙালী সংস্কৃতি বিরোধী একটা ব্যাপার তারা মনে করত। এই সংস্কৃতি মৌলবাদীরা কি করেছে তরুণদের জন্য বলেন? ৯০ দশকে তুঙ্গে থাকা ব্যান্ড সংগীত কনসার্ট করতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। যে প্রজন্ম আইয়ু্ব বাচ্চু মারা যাবার পর তার জান্নাত জাহান্নাম নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল বা একটা পাপীষ্ঠ মরেছে বলে উল্লাস করেছে তারা এই মাঝখানের ফাকা সময়টাতে বেড়ে উঠেছে যখন একতরফা ইসলামিক প্রচারেই দেখেছে। এটা আরো বাড়বে। কারণ আমাদের রাষ্ট্র গানবাজনা সংস্কৃতি নাটক এরকম বিষয়গুলো সারাদেশে পৃষ্ঠপোষকতা করছে না। ৫৬০টি মসজিদ করা হবে। এর ফল যা হবে নিশ্চয় ৫৬০টি শিল্পকলা একাডেমি গড়ে তুললে এক রকম হবে না? সোজা হিসাব। কাজেই আগামী ৩০ বছরের বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলেই তো ভীত হতে হয়!
অবিশ্বাস: এবার জানতে চাইবো বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলের ভবিষ্যত কী? নিকট ভবিষ্যতে ওয়াজ মাহফিলে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে?
সুষুপ্ত পাঠক: আমাদের কেন, পুরো পৃথিবীই অনলাইন নির্ভর হয়ে গেছে। তাই আমার নিজের মনে হয় ওয়াজ মাহফিল ময়দানের চেয়ে মসজিদে বা হুজুরের ঘরের মধ্যে ধারণ করে ইউটিউব চ্যানেল আর ফেইসবুকে আপলোড কেন্দ্রিক হয়ে পড়বে। অনলাইনে ফতোয়া দিবে ওলামারা। তবে শুক্রবার যেহেতু আমাদের দেশের ছুটি উঠাবে না কেউ তাই এইদিন মসজিদেই ‘ওয়াজ মাহফিল’ সম্পন্ন হতে থাকবে। তারমানে এই না ওয়াজ মাহফিল এখনকার মত করে হবে না। প্রত্যেকটা মাদ্রাসায় এরকম ওয়াজ মাহফিল হয় সেটা তো তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে থাকতেই। যদি বলেন ওয়াজের ধরণের কোন পরিবর্তন ঘটবে কিনা। সে ব্যাপারে বলতে পারি, ওয়াজ থেকে এখনই দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ধরে বিষেদাগার করা হয়। দিনকে দিন দেখা যাবে এখান থেকেই মুরতাদ, বিদাতী, শিরকি হিসেবে ট্যাগ মেরে দিবে আর মানুষ ভিকটিমে পরিণত হবে। কারণ তাদের প্রভাব বাড়বে বই কমবে না। এককভাবে ওয়াজ মাহফিল তো কোন অপশন নয়, এমন তো নয় ওয়াজ বন্ধ করে দিলেই কোন ফল আসবে। আছে জুম্মার খুতবা। সেটা বন্ধ করে দিলো ফেইসবুক ইউটিউব আছে। মানে এর শেষ কোথায়? আপনাকে গোড়ায় হাত দিতে হবে। কোথা থেকে ওয়াজের মাল মশলা আসে? শেষ পর্যন্ত আমাদের কথা কি থাকে, উৎসে হাত দিন। কোন আইডিওলজিতে এরকম ওয়াজকারীর জন্ম হয় সেখানে হাত দিন। তাই ওয়াজ মাহফিল আদলে যেমনই পরিবর্তন ঘটুক- যদি রাষ্ট্র ধর্মকে এভাবেই পৃষ্ঠপোষকতা করে চলে তাহলে ওয়াজের ভয়াবহ জঙ্গি চেহারা আরো বাড়বে।
অবিশ্বাস: সর্বশেষ প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে ওয়াজ মাহফিলে বক্তাদের মূল নিশানা মুক্তচিন্তার মানুষজন। ওয়াজকারীদের সমস্ত আক্রোশ মুক্তচিন্তকদের প্রতি। এই আক্রোশ, এই আক্রমণ প্রতিহত করার প্রয়োজন আছে কিনা, থাকলে তা কিভাবে?
সুষুপ্ত পাঠক: এটাকে মুক্তিচিন্তুকদের ইনজয় করা শিখতে হবে। এটা আশান্বিত হবার মত ব্যাপার। প্রতিহত করার জন্যই আমরা লিখি বা ভিডিও বানাই বা লাইফ প্রোগাম করি। তবে সেটা ওয়াজ বন্ধ করে নয়, দমন কখনই ভালো ফল আনে না। তাদের প্রতিহত করা হবে আমাদের বেশি করে অনলাইনে ভূমিকা রাখা। ওয়াজগুলোকে কাউন্টার করা। কারণ সাধারণ যে ধর্মীয় বলয়ে থাকে সেখান থেকে জীবনেও ধর্মের বিষ চোখে দেখবে না। আমরা কি পৃথিবীতে থেকে বুঝতে পারি পৃথিবী ঘুরছে? পারি না কারণ পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে আমরাও ঘুরছি। তেমনি আজন্ম বিশ্বাস করা ঈশ্বর ধারণা আর নবী, অবতার ইত্যাদি জিনিসগুলো অসাড়তা তারা মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারে না। তখনই পারে যখন আপনি তা ধরিয়ে দিবেন। আমাদের সেই কাজটা করতে হয় এবং অবিরাম করে যেতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুক্তচিন্তার প্রসারের জন্য লড়তে হয়। আমাদের প্রতি মোল্লা পুরোহিতদের ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। এটা তো তাদের রুটিরুজির বিষয়। আপনি সেই জিনিস হাটে হাড়ি ভাঙ্গছেন তারা কি বসে থাকবে?
অবিশ্বাস: আপনার যদি বিশেষ কিছু বলার থাকে।
সুষুপ্ত পাঠক: আপাতত বিশেষ কিছু বলার নেই।
অবিশ্বাস: এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ব্যস্ত জীবনের মূল্যবান সময় থেকে কিছু সময় আমাদেরকে দিয়েছেন, আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। ভালো থাকবেন। শুভকামনা।
সুষুপ্ত পাঠক: আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।