বিশেষমুসলিম সাহিত্য সমাজ | বাঙালি মুসলমানের হাতছাড়া গৌরব

মুসলিম সাহিত্য সমাজ | বাঙালি মুসলমানের হাতছাড়া গৌরব

১৯২৬ সালে একদল আলোকিত মানুষ মুসলিম মননে বুদ্ধির মুক্তির লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করেন। পদে পদে বাধা ডিঙিয়ে তারা এগিয়েছিলেন অনেক দূর। আজ প্রায় শত বছর পরে এসেও তাদের সেই সংগ্রাম আমাদেরকে মুগ্ধ করে, প্রেরণা যোগায়।

মুসলিম সাহিত্য সমাজ | বাঙালি মুসলমানের হাতছাড়া গৌরব

১৯২৬ সালে একদল আলোকিত মানুষ মুসলিম মননে বুদ্ধির মুক্তির লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করেন। পদে পদে বাধা ডিঙিয়ে তারা এগিয়েছিলেন অনেক দূর। আজ প্রায় শত বছর পরে এসেও তাদের সেই সংগ্রাম আমাদেরকে মুগ্ধ করে, প্রেরণা যোগায়।

বিশ শতক ছিলো বাঙালি মুসলমান সমাজের প্রগতিশীল শ্রেণীর কর্মতৎপরতার শতক। এ সময় মুসলিম লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা প্রগতির মিছিলে পিছিয়ে থাকা মুসলমানদের এগিয়ে নেয়ার লড়াইয়ে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেন। এই লড়াইয়ের যৌক্তিক পরিপ্রেক্ষিত ছিলো, ছিলো যথাযথ কারণ। আলোচিত শতকের প্রবন্ধকার, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদুল হকের মতে –

যে-কারণে বাঙালি মুসলমান তার প্রতিবেশী হিন্দুর তুলনায় পশ্চাদগামী সেই একই কারণে জ্ঞান-চর্চা থেকে পিছিয়ে পড়ে তারা হিন্দুবিদ্বেষী। বাঙালি হিন্দু যেমন প্রতিবেশী মুসলমানকে না জেনে মুসলমানবিরোধী – অনুরূপভাবে বাঙালি মুসলমান জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে প্রতিবেশীর হৃদয়ে প্রবেশ করতে না পেরে বঞ্চিত। এভাবেই শিক্ষা-সাহিত্য-রাজনীতি-অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্যের পরিণতি হয়েছে সাম্প্রদায়িকতা।

 

আবদুল হক ছিলেন মুসলিম সাহিত‍্য সমাজের অন‍্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী আবদুল ওদুদের বিশেষ স্নেহভাজন। তিনি নিকটে থেকে এই সংগঠন এবং সংগঠকদের দেখেছেন। এই সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন। তার অনুধাবন এবং উপলব্ধির কথা অনেক প্রবন্ধ ও নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন।

ব্রিটিশ শাসনামলে পাশ্চাত‍্য শিল্প সাহিত‍্য ও সংস্কৃতির সাথে সেতুবন্ধনে হিন্দুরা এগিয়ে ছিলো। আর মুসলিমরা নানান ধরণের ধর্মীয় বিধি নিষেধ প্রসূত দ্বিধাদ্বন্ধের কারণে এই দৌড়ে উল্লেখযোগ‍্য দূরত্বে পিছিয়ে পড়ে। ফলে ঊনিশ শতকে তৎকালীন হিন্দু সমাজের প্রগতিশীল শ্রেণীর হাত ধরে নবজাগরণ সৃষ্টি হলেও মুসলমানরা তাতে অংশ নিতে পারেনি। তখন শুরু হওয়া এই জাগরণের ধারাবাহিকতায় মুসলমান শিক্ষিত সমাজ সংস্কার সংগ্রামে কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিশ শতকে এসে।

রাজা রামমোহন রায়ের সৃষ্ট জাগরণের প্রায় একশ বছর পর ১৯২৬ সালে ঢাকায় মুসলিম সাহিত‍্য সমাজ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মানে এই না যে হিন্দু প্রগতিশীল সমাজের চেয়ে মুসলিম প্রগতিশীল সমাজ গুনে গুনে একশ বছর পিছিয়ে ছিল, তবুও এই ব্যবধান একেবারে কম নয়। ব্যবধানসৃষ্ট বিদ্বেষ থেকে জন্ম নেয়া বৈষম‍্যসৃষ্ট সাম্প্রদায়িক মনোভাব উচ্ছেদের উদ্দেশ‍্যে শুরু হয় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। যার মূল আওয়াজ ছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা স্বদেশপ্রেম।

বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজ্জ্বল এই সংগঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন বাংলার অন্যতম যুক্তিবাদী, চিন্তাবিদ আবুল হুসেন। আর তার স্বপ্ন সারথী ছিলেন আরেক উজ্জ্বলতর অগ্রগামী কাজী আবদুল ওদুদ। আবুল হুসেন ইশ্বরে বিশ্বাস করতেন না, কিন্তু এটি তার মূল পরিচয় নয়। তিনি ছিলেন একজন বিশেষ লেখক, সংগঠক ও সম্পাদক যিনি এই অঞ্চলের সার্বিকভাবে অনুন্নত মুসলমানদের উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে যারপরনাই চেষ্টা করেছেন। এর আগেও মুসলমানদের মন ও মননের উন্নতিকল্পে বিভিন্ন সভা সমিতি করেছেন। যার মধ্যে আল-মামুন তরুণ সঙ্ঘ অন্যতম। আবুল হুসেন এবং আব্দুল ওদুদ ছিলেন প্রখর আত্ম-মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব্যের অধিকারী। তারা মনে করতেন দানে, দয়ায় ও জাতিগত কোটায় মুসলমানদের উন্নতি ঘটবে না। যতক্ষণ না জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, দর্শনে সম্পৃক্ত না হবে, ততদিন তাদের পিছিয়ে থাকা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার সূচনায় কাউকে না কাউকে নেতৃত্বে দিতে হবে, নিশ্চয় শিক্ষিত সমাজের দায়িত্ব সবার আগে। আর এই দায়িত্বটাই কাঁধে তুলে নিলেন প্রগতির প্রশ্নে সমমনা দুই মননশীল ব্যক্তি। এ যাত্রায় তারা কর্মযোগী হিসেবে সাথে নিলেন কয়েকজন মুসলিমকে যাদের কেউ শিক্ষক এবং কেউ ছাত্র। এবং প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কৃতি, সফল, আলোচিত ও পরিচিত মুখ।

১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হল ইউনিয়ন কক্ষে এক বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়। বাংলা ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন। আর এই সভায় জন্ম নেয় আমাদের অহংকারের সংগঠন মুসলিম সাহিত্য সমাজ। এই মহতি উদ্যোগের সাথে আরো যুক্ত হন মুসলিম হলের ছাত্র এ.এফ.এম আবদুল হক, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র আবদুল কাদির প্রমুখ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল ফজল সহ আরো কয়েকজন। নেপথ্যে থেকে যারা দায়িত্ব পালন করতেন তাদের মাঝে যুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক কাজী আনোয়ারুল কাদীর অন্যতম।

আমরা চাই সমাজের চিন্তাধারাকে কুটিল ও পঙ্কিল পথ হইতে ফিরাইয়া প্রেম ও সৌন্দর্য্যের সহজ সত্য পথে চালিত করিয়া আমাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে। এক কথায় আমরা বুদ্ধিকে মুক্ত রাখিয়া প্রশান্ত জ্ঞানদৃষ্টি দ্বারা বস্তু জগত ও ভাবজগতের ব্যাপারাদি প্রত্যক্ষ ও করিতে ও করাইতে চাই।

– কাজী মোতাহার হোসেনের  সভাপতিত্বে দ্বিতীয় বর্ষের কার্য বিবরণী হতে

 

সংগঠনের মুখপত্র হিসেবে একটি পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পত্রিকার নাম রাখা হয় ‘শিখা’। নামকরণের কী সুন্দর সার্থকতা! কারণ শাস্ত্রের অন্ধকারে নিমজ্জিত মুসলমান সমাজকে আলোয় উদ্ভাসিত করার লক্ষ্যে এই পত্রিকার জন্ম। পত্রিকার মুখবাণীটি তার নামের মতই উজ্জ্বল। ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। ভারতবর্ষে ইসলামের যাত্রা শুরু হয় ধর্মান্তকরণের মাধ্যমে। সঙ্গত কারণে নতুন ধর্ম গ্রহণকারীদের পথচলা অত সহজ ছিলো না। সৈন্য সামন্ত নিয়ে ঘোড়া দাবড়িয়ে এসে রাজ্য দখল করে শাসনকার্যে মুসলমানিত্ব প্রতিষ্ঠাকারীরা বহাল তবিয়তে ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় নব মুসলিম সমাজকে হাজার বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ স্থানীয় সংস্কৃতি ও সমাজের সাথে লড়তে হয়েছে, লড়তে হয়েছে নিজেদের গ্রহণ করা নতুন ধর্মের সাথেও। হাজার হাজার মাইল দূর হতে উড়ে আসা ধর্মীয় শাস্ত্র, নিয়ম ও বাণীর সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে তাদের কম সময় লাগেনি। এসময় সমাজ সভ্যতার দৌড়ে তারা সর্বশক্তিতে দৌড়ানোর সুযোগ পায়নি। নতুন ধর্মের সাথে খাপ খাওয়ানোর পর তাদের পিছিয়ে পড়া আরো ত্বরান্বিত হয়। হারাম হালালের ঘোরপ্যাঁচে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে একসময় তারা দৌড়াতে ভুলে যায়। তাদের জ্ঞান ও জ্ঞানগ্রহণের ইচ্ছে এবং ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, সীমাবদ্ধ জ্ঞানে তাদের বুদ্ধি আড়ষ্ট হয়, অথচ মুক্তির জন্য ছটফট করে গেছে, কিন্তু তা অসম্ভব। মুসলিম সাহিত্য সমাজের সংগঠকরা তা স্পষ্টতই বুঝতে পেরেছিলেন এবং সমস্যা নির্ধারণ করে সমাধানের পথে পা বাড়িয়েছেন। এরচে সুষম উদ্যোগ আর কী হতে পারে?

শিখা পত্রিকার প্রথম বর্ষের সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালের মার্চ-এপ্রিলে। প্রথম সংখ্যার সম্পাদক ছিলেন আবুল হুসেন এবং প্রকাশক আবদুল কাদির। এ সংখ্যায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম খোশ আমদেদ নামে একটি শুভেচ্ছা নিবন্ধ লিখেন। অন্যান্য প্রবন্ধ ও নিবন্ধগুলো: অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতির অতিভাষণ -এ.এফ. রহমান, সভাপতির অতিভাষণ -খান বাহাদুর তসদ্দুক আহমদ, বাঙালি-মুসলমানের সাহিত্য-সমস্যা -কাজী আবদুল ওদুদ, বাংলার লোক-সংগীত -আবদুল কাদির, বাঙালি মুসলমানের সামাজিক গলদ -কাজী আনোয়ারুল কাদির, সংগীত চর্চায় মুসলমান -কাজী মোতাহার হোসেন এবং সম্পাদক আবুল হুসেনের বাঙালি-মুসলমানের শিক্ষা-সমস্যা।  তখনকার শিক্ষিত সমাজ শিখা পত্রিকার লেখকদের একত্রে ‘শিখাগোষ্ঠী’ নামে ডাকতো। নিবন্ধগুলোর শিরোনাম পড়েই বুঝা যাচ্ছে শিখাগোষ্ঠীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিলো, বাঙালি-মুসলমানের অগ্রগতির পথে সমস্যাগুলোর কতটা গভীরে তারা দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন।

(শিখা পত্রিকার মোট পাঁচ সংখ্যায় প্রকাশিত নিবন্ধগুলো পড়তে চাইলে আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত নির্বাচিত শিখা: মুসলিম সাহিত্য সমাজের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের দলিল বইটি সংগ্রহ করুন।)

মুসলিম সাহিত্য সমাজ তাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নাম দেয় ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’। যেকোন আন্দোলনের ইশতেহার অথবা প্রস্তাবনা থাকা উচিত। তাই ১৯২৯ সালে মুসলিম সাহিত্য সমাজের তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশনে সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে পাঁচ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়।

১. এই সভা বাংলার মুসলমান নর-নারীকে বিশেষভাবে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সমস্ত বাংগালী কোরানের সহিত পরিচিত হইবার অনুরোধ জানাইতেছে।

২. এই সভা বাংলার পল্লীর বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠাগার ও গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে উদ্যোগী হইবার জন্য দেশের কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানাইতেছে।

৩. এই সভা বাংলার বিভিন্ন মক্তব ও মাদ্রাসায় যাহাতে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যায়াম শিক্ষার ব্যবস্থা হয় তজ্জন্য গভর্নমেন্টকে অনুরোধ জানাইতেছে।

৪. এই সভা বাংগালী মুসলমান সমাজের নেতৃবৃন্দকে পর্দাপ্রথা দূরীকরণার্থে আদর্শ স্থাপন করিতে অনুরোধ জানাইতেছে।

৫. এই সভা সাহিত্য সমাজের কর্মীবৃন্দকে মুসলিম ইতিহাস, দর্শন ও ধর্মবিষয়ক আরবী ও ফার্সি গ্রন্থ সমূহ অনুবাদ করিবার জন্য একটি অনুবাদ কমিটি গঠন করিতে অনুরোধ জানাইতেছে।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আবুল হুসেন মুসলিম নারী-পুরুষের সম্মান, জ্ঞান-বুদ্ধির মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে প্রায়ই কথা বলতেন। নারীর পর্দা প্রথাকে তিনি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক মনে করতেন। এজন্য তিনি ‘এন্টি পর্দালীগ’ নামে একটি আন্দোলনেরও সূচনা করেন। অবোধগম্য আরবি ফারসি ভাষায় ধর্মগ্রন্থ না পড়ে বাংলা ভাষায় পড়ার উপর গুরুত্বারোপ করতেন। নিজ ধর্মের পাশাপাশি অন্য ধর্মের ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলতেন। মুসলিম সাহিত্য সমাজের পাঁচ দফা দাবিতে তার চিন্তা চেতনার পরিষ্কার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। না, এসব যে তিনি ভিন্ন আর কেউ ভাবতেন না, মোটেও তা নয়। বরং অন্য সংগঠকদের মনোভাবও একইরকম ছিলো। আবদুল ওদুদ, আবুল ফজল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও পর্দা নিয়ে তাদের লেখা ও বক্তৃতাসমূহে আলোচনা করতেন, সংস্কারের কথা বলতেন।

মুসলিম সাহিত্য-সমাজের সদস্যদের প্রেরণার উৎসে ছিলো ঊনিশ শতকের নবজাগরণ। তারা চিন্তার সীমিত গণ্ডি এবং অন্ধ বিশ্বাস থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। শাস্ত্র সঙ্কীর্ণতা, সাম্প্রদায়িক আত্মপীড়া, হীনমন্যতা ও অনিচ্ছার বিষকুন্ড থেকে বের করে এনে উন্মুক্ত বিশ্বচিন্তার সাথে সংযুক্ত করতে চেয়েছেন। শিখাগোষ্ঠীর শিখাবৃন্দ ছিলেন অসীম স্বপ্নসীমার অভিযাত্রী। তারা মুসলমানদের মনের ভেতর এক কোণায় লুকিয়ে থাকা ‘মানুষ’টিকে বের করে আনতে চেয়েছেন, চেয়েছেন মানবিক মূলব্যবোধ ও আত্ম-মর্যাদার মৃতপ্রায় চেতনাকে জাগ্রত করতে। কিন্তু ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মগ্রন্থজীবী মৌলবীদের বর্ণিত প্রতি পায়ে বাধা ডিঙিয়ে উদ্দেশ্য সাধন করা অত সহজ ছিলো না। সবচে কঠিন ছিলো ধর্মজীবীদের অপতৎপরতার সাথে লড়াই করা। এ যে এক অসীম লড়াই। আরব থেকে আমদানিকৃত ‘সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম’ বিক্রি করে খাওয়া নিকৃষ্টমনা মানুষরা যে অনেক বেশি শক্তিশালী। এই লড়াইয়ে তাদের অস্ত্র হিসেবে আছে ‘পবিত্র’ ধর্মগ্রন্থ, পাপ, পুণ্য, বেহেশত, দোযখ। অপরদিকে শিখাগোষ্ঠীর হাতে আছে কলম, মাথায় আছে চিন্তা, চোখভরা স্বপ্ন। স্বপ্নের সাথে স্বপ্নের লড়াই হয়, চিন্তার সাথে চিন্তার। কিন্তু ‘হে মানুষ, এসো সংস্কার করি’ এর সাথে ‘হে মুসলিম, তোমরা দোযখে যাবে’ এর লড়াই আসলেই বর্ণনাতীত জটিল। আর এই জটিলতার মুখোমুখি হতে খুব বেশি সময় লাগেনি।

প্রতিষ্ঠার মাত্র এক বছরের মাথায় ১৯২৭ সালে মুসলিম সাহিত্য সমাজের ওপর প্রথম আক্রমণ হয়। এ বছর সাপ্তাহিক মোহাম্মদীতে ‘শতকরা পঁয়তাল্লিশ’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেন শিখাগোষ্ঠীর প্রধান শিখা আবুল হুসেন। এই প্রবন্ধে তিনি সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের জন্য শতকরা ৪৫ ভাগ কোটা রাখার তীব্র সমালোচনা করেন।

এই কোটার ফলে আমাদের নবীন সম্প্রদায়ের আকাঙ্খা ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হবে, কর্মস্রোতে ভাটা পড়বে, মন সঙ্কীর্ণ হবে, মস্তিষ্ক শ্রমবিমুখ হবে।

– শতকরা পঁয়তাল্লিশ, আবুল হুসেন

কিন্তু তৎকালীন মুসলমান বুদ্ধিজীবী শ্রেণী তার এই আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন বক্তব্য বিদ্রুপের সাথে প্রত্যাখ্যান করে। অবমাননাকর ভাষায় কটাক্ষ, এমনকি ব‍্যক্তি আক্রমণ করতেও পিছপা হয়নি তথাকথিত শিক্ষিত গোষ্ঠী। এর মধ্যে কবি গোলাম মোস্তফার ব্যক্তি আক্রমণ আবুল হুসেনের মনে গেঁথে যায়। জনাব মোস্তফা একই পত্রিকায় ফিরতি প্রবন্ধে বিদ্রুপ করে বলেন, “এই পঁয়তাল্লিশ ভাগ কোটায় আবুল হুসেনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন।” গোলাম মোস্তফার এমন নির্বোধ বিরোধিতা পড়ে আবুল হোসেন হতাশ হয়েছিলেন কিনা জানি না, কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের চাকরি ছাড়তে দুইবার চিন্তা করেননি। তার পদত্যাগের পর বিশেষ কোটা বাতিলের দাবি আরো যৌক্তিকতা পায়। কারণ নিজ যোগ্যতাবলে আবুল হোসেন এই চাকরি পাওয়ার দাবি রাখেন। অথচ তাকেও কোটাভুক্ত হতে হয়েছে।

আবুল হুসেনের উপর থেকে শিক্ষিত সমাজের মৌলবাদী অংশ তখনও দৃষ্টি সরায়নি। বরং তাকে আরো মোক্ষমভাবে হেনস্থা করার উপায় খুঁজতে থাকে। যেন বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পথরোধ করাই তাদের পবিত্র দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বে আক্রমণের মোক্ষম নিশানা জনাব আবুল হুসেন। ১৯২৭ সালে সংগঠনের প্রথম বার্ষিক অধিবেশনে তিনি ‘আদেশের নিগ্রহ’ নামে একটি নিবন্ধ পাঠ করেন। যে নিবন্ধে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন আদেশ নিষেধের স্পষ্ট সমালোচনা করেন। তিনি বলেন হাজার বছর আগের ধর্মীয় বিধান মানতে বাধ্য করা নিগ্রহ ব্যতীত অন্য কিছু নয়। এসব আদেশের যুগোপযোগী সংস্কার দাবি করেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে ঢাকার ‘শান্তি’ পত্রিকায় এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হলে সনাতনবাদী শিক্ষিত মুসলমানদের নজর কাড়ে। পূর্ব হতে তাদের বিশেষ নজরে থাকা আবুল হুসেনকে এবার ধরা যাবে- এই খুশিতে নিজ উদ্যোগে পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধটি মুসলমানদের মাঝে বিতরণ এবং মসলা মাখিয়ে ব্যাখ্যা করতে থাকেন। এমনকি নিবন্ধটির উর্দু সংস্করণ লিখে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানী প্রভুদেরকেও পড়তে দেন। ফলে এক ধর্মীয় উন্মাদনার সৃষ্টি হয়।

এমন উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে খান বাহাদুর আবদুল হাফিজ নামে ঢাকার এক সমাজপতি পিস্তল নিয়ে আবুল হোসেনের বাসায় হাজির হন। তিনি প্রথমে ইসলাম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ লেখার জন্য আবুল হোসেনকে তিরষ্কার করেন। এবং বলেন, এ জাতীয় লেখা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি না দিলে তাকে গুলি করা হবে। আবুল হোসেনের ছোট ছোট সন্তানরা তখন পিতার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের মুখের দিকে চেয়ে অবশেষে তিনি প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হন। এখানেই ঘটনা থেমে থাকেনি। ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আহসান মঞ্জিলে আবুল হুসেনের বিরুদ্ধে বিচার সভা বসে। যে বিচারের রায় আগেই আন্দাজ করতে পারেন তিনি। বিচারে তার বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহ এবং মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ এনে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। একই সাথে এই ক্ষমাপত্র জনসাধারণকে অবগত করার উদ্দেশ্যে অনুমতি প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। সহযোগী সংগঠকদের অনুরোধে এবং পরিবারের কথা ভেবে আবুল হোসেন অভিযোগ স্বীকার করে ক্ষমা চান এবং তা মুদ্রণের অনুমতি দেন।

এ ঘটনার পর তিনি মনে করেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের কার্য নির্বাহী সদস্য হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকার নৈতিক ভিত্তি নষ্ট হয়েছে, এই বলে তিনি পদত্যাগ করেন। অবশ্য পদত্যাগ করলেও সংগঠনের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা বজায় রাখেন। সাংগঠনিক কাজকর্মে সাধ্যমত সহযোগিতা করতেন। ফলে তার অব্যাহতির কারণে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। কিন্তু আবুল হুসেন সম্ভবত কিছুটা ক্লান্তি অনুভব করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়েছেন, এবার নিজ হাতে গড়া সংগঠনও ছাড়লেন। রাগে অথবা ক্ষোভে অথবা হতাশায় তিনি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৩২ সালে কলকাতা চলে যান।

এরপর ধীরে ধীরে মুসলিম সাহিত্য সমাজ স্তিমিত হতে থাকে। ১৯৩২ সালে আর শিখা পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। অর্থাৎ শিখা নিভে যায় ১৯৩১ সালে। হয়তো অন্যতম দায়িত্বশীল ব্যক্তির শূন্যতায় অথবা উপর্যুপরি আক্রমণের সাথে টিকতে না পেরে, অথবা নতুন কিছু করার স্বপ্নে সংগঠনের সদস্যদের মাঝে এক ধরণের অনীহা জন্ম নেয়। আগের সেই উৎসাহ, উদ্দীপনা, কর্মচঞ্চলতা আর থাকেনি। ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত তারা সক্রিয় ছিলেন। ১৯৩৭ সালে পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে সংগঠনের কার্যক্রম। এই বছরের কার্যবিবরণীর হদিস পাওয়া যায়নি। সংগঠনের সাথে পাল্লা দিয়ে আবুল হুসেনের প্রাণশক্তিও নিঃশেষ হতে শুরু করে। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন। কিছুদিন মরণব্যাধির সাথে লড়াই করে ১৯৩৮ সালে মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা গেলেন। এর ফলে সংগঠন ও সংগঠকের একসাথে মৃত্যু ঘটার বেদনাদায়ক ইতিহাস রচিত হয়।

যে বছর আবুল হুসেন মারা গেলেন সেবছরই ছিলো মুসলিম সাহিত্য সমাজের সর্বশেষ বার্ষিক অধিবেশন। আগেই বলেছি নিভু নিভু সংগঠনটি ১৯৩৬ সালে একেবারে নিভে যায়। ১৯৩৮ সালে কিছু স্বপ্নোৎসাহী ব্যক্তি কাজী আবদুল ওদুদ ও কাজী মোতাহার হোসেনকে সামনে রেখে মুসলিম সাহিত্য-সমাজকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন। সে বছর ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ বর্ষের দ্বিতীয় অধিবেশনের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, প্রায় ১০-১১ মাস পূর্বে কাজী আবদুল ওদুদের সেগুন বাগানের বাসায় মাহবুব-উল আলমের সভাপতিত্বে দ্বাদশ বর্ষের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বাদশ বর্ষের দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন সমিতির তৎকালীন সম্পাদক আজহারুল ইসলাম। এটিই ছিল মুসলিম সাহিত্য-সমাজের শেষ অধিবেশন। বছরের শুরুতে ও শেষে প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশনের ব্যবস্থা করা গেলেও মুসলিম সাহিত্য-সমাজকে আর সক্রিয় করে তোলা সম্ভব হয়নি।

সংগঠন নেই, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নেই, তাতে কী, অন্য সংগঠকরাতো আছেন। নিশ্চয় তারা ব্যক্তিগতভাবে তাদের কর্মতৎপরতা জারি রাখার চেষ্টা করেছেন। হ্যাঁ করেছেন। কিন্তু সেই গতিধারায় আর নতুন স্রোত আসেনি, নতুন ঢেউ সৃষ্টি হয়নি; বরং অনাসৃষ্টি হয়েছে। যত দিন যেতে থাকে তরুণ সংগঠকরা কে কার চেয়ে বড় মুসলমান, তা জাহিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রবীণদের কেউ কেউও। নতুন নতুন আত্মসৃষ্ট সীমাবদ্ধতার মাঝে সমাজ সংস্কারের ‘বাধ্যগত’ প্রচেষ্টা চালিয়ে যান তারা। কিন্তু দেশ ভাগের পর এই চেষ্টায় আর জল পড়েনি, শুকিয়ে যায় একটি আত্মপ্রত্যয়ী সাহসী সংগ্রামের সব ইচ্ছেরস। আবদুল ওদুদও চলে গেলেন ভারতের অংশ কলকাতায়, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আবুল ফজল প্রমুখ রইলেন পাকিস্তান অংশ ঢাকায়। তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সাধের পাকিস্তানবাদের দ্বিধাক্রান্ত হলেন। এক পা বাঙালি জাতীয়তাবাদে, যার কোন রাষ্ট্র নেই। আরেক পা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদে, যার পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্র আছে। বিশাল ব্যবধানে দুই পা রেখে তারা জড়িয়ে পড়েন ব্যক্তি বিবাদে।

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সিলেবাস প্রণয়নকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যক্তিবিবাদ নোংরা ব্যক্তি আক্রমণে রূপ নেয়। যে কলহের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। প্রতিপক্ষ ছিলেন কবি গোলাম মুস্তফা, আবুল ফজল প্রমুখ। সিলেবাসে হিন্দু লেখকের লেখা থাকায় শহীদুল্লাহকে ভারতপ্রেমী, ইসলামের শত্রু বলতেও দ্বিধা করেননি মুসলিম সাহিত্য সমাজের সহযোদ্ধা আবুল ফজল। এসব কলহে তারা ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। জবাবে মুহম্মদ শহীদুল্লাহও নিজেকে তাদের চেয়ে বড় মুসলমান হিসেবে দাবি করেন এবং তিনিও ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন।

কে ভেবেছিলো বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সক্রিয় সদস্যরা এমন নির্বুদ্ধির জঞ্জালে জড়িয়ে নিজেদের সমস্ত অর্জন ও গৌরবকে পায়ে ঠেলে সরিয়ে দিবেন, ধর্মের শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে বিশ্বচিন্তা মঞ্চে নিজ সমাজকে উজ্জ্বল আসনে বসানোর চেষ্টা ভুলে স্ব-হস্তে সে শৃঙ্খল পায়ে বেঁধে নিবেন! অথচ তাই ঘটলো।

এত কিছুর পরও মুসলিম সাহিত্য সমাজের অবদানের ঔজ্জ্বল্যতা একটুও কমেনি। বাঙালি মুসলমান সমাজে পরিবর্তনের এমন তীব্র আওয়াজ আর কখনো শোনা যায়নি, যে আওয়াজ আজও আমাদের শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের স্পর্শ নেয়। সেই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আবুল ফজলদের সামনে রেখেই বাঙালি মুসলমান শিক্ষিত হওয়ার তাগিদ পেয়েছেন, যার ফলে সদা উন্মুক্ত চিন্তাচর্চার বিশালতায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে পরিবর্তনের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। আজ এই কঠিন বর্তমানে, মুক্তচিন্তার পথে রক্ত আর খুনের সময়ে মুসলমান সমাজ থেকে যতটুকু প্রতিবাদ আসে তার প্রেরণার উৎসে মুসলিম সাহিত্য সমাজের সেই শিখাগোষ্ঠীকেই পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র
১. হুসেন, আবুল -বাংলাপিডিয়া
২. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ও আবুল হুসেন -হাবিব রহমান
৩. আবুল হুসেন পরিচিতি
৪. মুসলিম সাহিত্য সমাজ এর বার্ষিক অধিবেশন: সভাপতিদের অতিভাষণ, হাবিব রহমান সম্পাদিত
৫. আবদুল হক: সাহিত্য-সাহিত্যিক দর্শন
৬. একটি পুরোনো বিতর্ক সংগ্রহ, সংকলন ও পূর্বলেখ -কালি ও কলম
৭. শাশ্বত বঙ্গ -আবদুল ওদুদ

নতুন লেখার নোটিফিকেশন পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

কপিরাইট সংক্রান্ত

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা ভালো লাগলে, গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে, কিংবা অপছন্দ করলে নিজে বকা দিয়ে অন্যকে বকা দেয়ার সুযোগ করে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। লেখার শুরুতে এবং শেষে ফেসবুকসহ ডজনখানেক এপসে শেয়ার দেয়ার অপশন আছে। চাইলে কপি করেও শেয়ার দিতে পারেন। কিন্তু দয়া করে নিজের নামে অথবা জনাবা সংগৃহীত ভাইয়ের নামে, কিংবা মিস্টার কালেক্টেড এর নামে চালিয়ে দিবেন না। মূল লেখক এবং ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করবেন। এবং দোহাই লাগে, এখান থেকে কপি করে নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন না।

মন্তব্য করুন