কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনাটির কথা অকপটে স্বীকার করেছে চার বখাটে। ২৮ জুলাই রবিবার আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। ধর্ষকরা মহেশখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাজিব কুমার বিশ্বাসের কাছে প্রদত্ত জবানিতে ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন। ধর্ষকরা বলেছেন, তারা ঘটনার রাতে একে একে ১৫ জন বখাটে তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন। ধর্ষণের সময় তরুণী তৃষ্ণা মিটানোর জন্য ধর্ষকদের হাতে পায়ে ধরে পানি চাইলেও এক ফোটা পানিও তারা দেননি-এমন কথাও স্বীকার করেছেন।

আদালতে দেয়া জবানিতে তারা বলেছেন, পরবর্তীতে ধর্ষণের ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে স্থানীয় নারী ইউপি মেম্বার খতিজা বেগম এবং মেম্বার লিয়াকত আলীও মূখ্য ভুমিকা পালন করেছেন। এমনকি নারী ইউপি মেম্বার খতিজা বেগম ঘটনা ধামা চাপা দিতে ধর্ষকদের নিকট থেকে নগদ ৭৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। সেই সাথে লিয়াকত আলী মেম্বারও ধর্ষকদের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা নেন। দুই ইউপি মেম্বার বর্তমানে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন।

পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৭ জুলাই শনিবার গ্রেফতার করেন ৩ জন ধর্ষককে। গ্রেফতার হওয়া ধর্ষকরা হচ্ছেন, ওসমান, লাইনম্যান রশিদ ও করিম। তারা সবাই স্থানীয় বখাটে। গ্রেফতারের পর পরই তারা পুলিশের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করেন। এর আগে গ্রেফতার হওয়া বখাটে মনু মিয়াকেও নেয়া হয় রিমান্ডে। তারা ৪ ধর্ষকই আজ আদালতে জবানবন্দিতে প্রত্যেকেই ওই তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেন। ঘটনার পর ধর্ষকের সংখ্যা ১৪ জন বলে বলা হলেও আজ প্রদত্ত জবানবন্দীতে ধর্ষকরা নিজেরাই স্বীকার করেছেন তারা একে একে ১৫ বখাটে তরুণীকে ধর্ষণ করে। থানার ওসি জানান, মামলার পর গ্রেফতার হওয়া দুই ইউপি মেম্বারকেও রিমান্ডে নেয়া হবে।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর জানিয়েছেন, দ্বীপের কালারমারছড়া ইউনিয়নের পরিষদের কতিপয় মেম্বার ও ধর্ষকরা মিলে টানা ৫ দিন ধরে তরুণী গণধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। ধর্ষিতা তরুণী চট্টগ্রাম শহরের এক ব্যক্তির ঘরে গৃহপরিচারিকার হিসাবে ছিলেন। তার মা থাকেন মহেশখালীর মাতার বাড়িতে। মাকে দেখার জন্য চট্টগ্রাম শহর থেকে মহেশখালী দ্বীপে এসেই গত ৭ জুলাই সন্ধ্যায় কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী নামক এলাকায় দুর্বৃত্তদলের কবলে পড়ে যায়। দুর্বৃত্তরা পাহাড়ের একটি ঘরের বাসিন্দাদের বের করে দিয়ে সারারাত ধরে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের পর তরুণীটি মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নারী মেম্বার শামীমা বেগমের ঘরে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। গ্রেফতার হওয়া নারী মেম্বার খতিজা বেগম ও লিয়াকত আলী ধর্ষিতাকে থানায় পুলিশের কাছে যেতে বারণ করেন। শামীমার বাড়িতে তরুণীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। ধর্ষকের দলটি ইউপি মেম্বারদের ঘিরে ঘটনার বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্য চাপ দেয়। সেই সাথে ধর্ষকের দল আপস মীমাংসার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলে ধর্ষিতাকে ইউপি মেম্বারের ঘর থেকে বাইরে যেতে বাঁধা দেয়।

পুলিশ গত ১২ জুলাই এমন জঘন্য ঘটনাটির কথা জানতে পেরে মাতার বাড়ির নারী মেম্বারের ঘর থেকে ধর্ষিতা তরুণীকে উদ্ধার করেন। থানার ওসি বলেন, আসলে ধর্ষকের দলটি ধর্ষিতার আলামত নষ্ট করার চিন্তা হয়তোবা মাথায় রেখে হুমকি-ধমকির মাধ্যমে তরুণীটিকে থানায় না আসার ব্যবস্থা করেছিলেন। ওই দিনই দুই ইউপি মেম্বার সহ ৬ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় থানায়।

কালের কণ্ঠ

 

মন্তব্য করুন