রাঙামাটি শহরে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া এক চাকমা কিশোরীকে তার ফুফা ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শহরের ভেতর একটি ভাড়াবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত জুয়েল চাকমা বিজিবি সদস্য ও চুয়াডাঙায় কর্মরত রয়েছে বলে জানা গেছে। ছুটিতে নিজ বাড়িতে এসে স্ত্রী ঘরে না থাকার সুযোগে রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে কিশোরীর দাবি। বাড়ি দূরে হওয়ায় কিশোরীটি ওই বাড়িতে ফুপুর কাছে থাকতো।
এ বিষয়ে থানায় মামলা না দিয়ে শহরের বনরূপা এলাকায় নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি এনজিও অফিসে ৫ লাখ টাকায় ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, বিজিবি সদস্য জুয়েল চাকমা সম্পর্কে ফুফা হয়। গত ২৫ মার্চ ছুটি কাটাতে চুয়াডাঙা থেকে রাঙামাটিতে নিজ ভাড়া বাড়িতে আসে তার ফুফা। নিজেদের বাড়ি দূরে হওয়ায় সে ফুফু ও ফুফাতো বোনের সঙ্গে থাকতো। ফুফু চাকরির কারণে সেদিন বিলাইছড়িতে অবস্থান করছিল। ফলে বাসায় তারা তিন জন ছিল। সেদিন রাত ১০টার দিকে রাতের খাবার শেষে ফুফা চুয়াডাঙা থেকে আনা বেলের জুসের সঙ্গে কিছু একটা শরবত বানিয়ে মিশিয়ে পান করায়। তবে এটি পান করার সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘোরানো শুরু করে।
কিশোরী আরও জানায়, সে রাতে তাকে এভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ধর্ষণ করে তার ফুফা। পরদিন পাশের বাড়িতে তার স্কুল শিক্ষিকার কাছে ঘটনাটি জানায় সে এবং তার মা বাবাকে খবর দেয়। এ ঘটনার জন্য জুয়েলের শাস্তি দাবি করে সে।
ওই স্কুলশিক্ষিকা জানান, বিষয়টি জেনে মেয়েটিকে তার বাবা-মায়ের কাছে এ কথা খুলে বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
অভিযুক্ত জুয়েল চাকমার কাছে জানতে চাইলে তার দাবি, ‘এটি পারিবারিক সমস্যা, পারিবারিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।’
ভুক্তভোগীর মা বলেন, আজ রবিবার (২৮ মার্চ) রাতে রাঙামাটি শহরে চম্পক নগর মোড়ে একটি বেসরকারি এনজিও অফিসে সালিশ হয়। সালিশে জুয়েল তার দোষ স্বীকার করে সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আমার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর দায়িত্বভার গ্রহণ করে। মেয়ের নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতি মাসে তাতে ৬ হাজার টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জুয়েল।
তিনি বলেন, একদিকে আত্মীয় আর আমরাও গরিব মানুষ। পরিবারের অন্যদের চাপ ছিল, তাই মেনে নিয়েছি।
তবে ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, সে এ বিচার মানে না। জুয়েল চাকমার শাস্তি চায় সে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান এই সালিশে কাগজ লেখালেখি করেছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীর মা।
জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যারা নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে তারাই এটি করেছে। আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে মাত্র। ওখানে নারী নেত্রী সুগন্ধী চাকমা ও অনীতা দেব বর্মণ ছিল বলে শুনেছি।
নারীনেত্রী সুগন্ধী চাকমা বলেন, মেয়ের পরিবার মামলা করতে রাজি হয়নি। যেহেতু তারা উভয়ে আত্মীয়। আমরা তো কোনও সমাধান দিতে পারি না। আমরা শুধু রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারি মাত্র। ওখানে মেয়ের দাদু উপস্থিত ছিল, তিনিই সমাধান দিয়েছেন। যেটি হলো মেয়েটি অন্য কোথাও থাকবে আর মেয়েটির লেখাপড়ার জন্য প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, এ ধরনের ঘটনায় কোনও অভিযোগ থানায় আসেনি।