প্রবন্ধদয়া করে আপনার ভোটটি পচাবেন না

দয়া করে আপনার ভোটটি পচাবেন না

ভোট দিন। ভালো, সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, মানবতার পক্ষের মানুষকে ভোট দিন। মার্কা দেখবেন না, দলের আকার দেখবেন না, দলের বয়স দেখবেন না। প্রার্থীর জেন্ডার, উচ্চতা, গায়ের রং, পরনের কাপড় দেখবেন না। তিনি আপনার, সমাজের, দেশের জন্য সত্যিকার অর্থে কাজ করবেন কীনা, তা দেখুন।

দয়া করে আপনার ভোটটি পচাবেন না

ভোট দিন। ভালো, সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, মানবতার পক্ষের মানুষকে ভোট দিন। মার্কা দেখবেন না, দলের আকার দেখবেন না, দলের বয়স দেখবেন না। প্রার্থীর জেন্ডার, উচ্চতা, গায়ের রং, পরনের কাপড় দেখবেন না। তিনি আপনার, সমাজের, দেশের জন্য সত্যিকার অর্থে কাজ করবেন কীনা, তা দেখুন।

‘ভোট’ এবং ‘পচা ভোট’ দু’টো একসাথে আসে। কিন্তু যাবার সময় ‘ভোট’ একা একা চলে যায়। পচা ভোটটি থেকে যায় পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত। দুই নির্বাচনের মাঝখানের সময়টা আপনার পচা ভোট আপনাকে নানানভাবে যন্ত্রনা দিবে, বেদনা দিবে। আঘাতে আঘাতে হৃদয়ে ঘা করে দিবে। ফলে আপনি কষ্ট পাবেন, মন খারাপ করবেন। দাঁত দিয়ে দাঁত কামড়াবেন, হাতের চামড়া দিয়ে কপালের চামড়া ঘষবেন। কিন্তু পচা ভোটটি আর ভালো হবে না, পচাই রয়ে যাবে। তাই ভোট পচাবেন না। ভোট পচানো ভালো নয়।

ভোট কিভাবে পচে?
নানানভাবে পচে। ভোট দিতে গিয়ে ব্যালট পেপারে সীল না মেরে পছন্দের মার্কায় চুমু খেয়ে বাক্সে রেখে আসলে ভোট পচে। চুমু না খেয়ে সীল মারলেন, কিন্তু বাক্সে না রেখে স্মৃতি হিসেবে পকেটে করে বাড়িতে নিয়ে আসলেন -ভোট পচে গেলো। পকেটে করে নিয়ে আসলেন না, বাক্সেই রাখলেন; কিন্তু সীল মারার সময় দুই মার্কার মাঝখানে মারলেন। কোন মার্কায় মারলেন বুঝা যাচ্ছে না। ব্যস, ভোট পচে গেলো। আবার এমনও হতে পারে, বাজার সদাইর লিস্ট পড়তে পড়তে বুথে ঢুকে ব্যালট পেপারের পরিবর্তে সদাইর লিস্টে সীল মেরে চলে আসলেন। এসব করলে আপনার ভোটকে পচানোর হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। ভোট পচবেই।

ইদানিং ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর কথা শোনা যাচ্ছে। তার মানে সীল মারার ঝামেলাটা নেই। কিন্তু ভোট পচার রিস্ক এখনো আছে। এই রিস্কটা একটু ভেজালের রিস্ক। কারণ বেশিরভাগ ভোটার ভোট পচার এই থিওরিটা ঠিকমত বোঝে না। লোকজন মনে করে সে যে মার্কায় ভোট দিয়ে এসেছে, সেই মার্কা না জিতলে ভোট পচে যায়। আসলে কি তাই? আপনি একজন নাগরিক হিসেবে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন, পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিলেন। তার মানে আপনার ভোটাধিকার রক্ষা হলো। স্বাধীনভাবে নিজের সমর্থনও জানানো হলো। তবুও বলছেন ভোট পচে গেলো। এ কেমন কথা! এটা অত্যন্ত খারাপ কথা। নিজের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা নাই, স্বাধীনভাবে সমর্থন জানাতে পেরে ভালো লাগা নাই। খুবই হতাশার কথা।

ব্যালটের ঝামেলা না থাকলেও ভোট পচে। আসুন দেখি কিভাবে পচে।

ভোট না দিলে ভোট পচে
ভোট ঘরে জমিয়ে রাখার জিনিস না। এটা যথা সময়ে যার প্রাপ্য, তাকে দিয়ে দিতে হয়। দেয়ার মত কেউ না থাকলে, তুলনামূলক দাবিদারকে দিতে হয়। তাও যদি না থাকে, তাহলে কী আর করবেন, ভোট আপনার, সিদ্ধান্তও আপনার। বাধ্য হলে কিছু করার নেই। তবুও বলছি, শুনুন। আপনার আমার ভোট সাধারণত লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাতে ঘুরপাক খায়। জ-বর্গীয় দুই পার্টি না হলেও প্রথম দুইটা দলই ঘুরে ফিরে আমাদের ভোট পায়। এখন এই দুই দল বা চার দলের প্রার্থী পছন্দ হয়নি বলে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকবেন, এটা অনুচিত। আরো প্রার্থী আছে, দেখেশুনে একজনকে ভোট দিন।

টাকা বা ভয় খেয়ে ভোট দিলে ভোট পচে
টাকার বিনিময়ে নিজের অধিকার বিক্রি করবেন না। একদিনের অল্প কয়টা টাকার লোভে পরবর্তী কয়েকবছর আপসোস আর বাঁশ একসাথে খাওয়ার বন্দোবস্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। টাকা খাবেন না এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকবেন না। অবশ্য খুব ভালো হয়, যে আপনাকে টাকা দিতে চাইবে, টাকা নিয়ে ভোট দিবেন না। এক্ষেত্রে ঝুঁকিও আছে। যদি একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা খান, তাহলে ভোট কাকে দিয়েছেন, তা সবচে কাছের মানুষকেও বলবেন না। বোঝেনইতো, অসৎ লোকের টাকার মায়া বেশি। সুতরাং আপনারও উচিত নিজের হাড্ডির মায়া করা। মায়া খান, ভয় নয়। আশাকরি আপনি যে বুথে ভোট দিতে যাবেন, সে বুথে গোপনীয়তা থাকবে। সুতরাং কাকে ভোট দিচ্ছেন কেউ দেখবে না। ভোট দিয়ে সব পোলিং এজেন্টের দিকে একবার করে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যান।

অসৎ, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, মানবতাবিরোধীদের ভোট দিলে ভোট পচে
এদেরকে কেন ভোট দিবেন? এরা আপনার কী সেবা করবে? আপনি যদি তাকে ভোট দেন, প্রথমে সে আপনার ভোটটা তার পৃষ্ঠপোষকদের কাছে বেচে দিবে। তারপর আপনার চামড়া বেচবে। এরপর মাথা। শেষে কংকালটাও বেচে দিবে। ঘরভিটেসহ অন্যান্য জমিজমা কখন বেদখল হয়ে যায়, তা তো টেরই পাওয়া যায় না। এদেরকে ভোট দিলেও আপনার জানমাল হারানোর ভয় আছে, না দিলেও আছে। তাই তাদেরকে ভোট না দেয়াটাই ভালো। কারণ ভোট পেলে সে ক্ষমতা পাবে, আর ওই দুষ্ট লোকটা ক্ষমতা পাওয়া মানে আপনার সব ক্ষমতা লুট হয়ে যাওয়া।

জেতার সম্ভাবনা বিচার করে ভোট দিলে ভোট পচে
পণ করলেন কোনভাবেই নিজের ভোট পচাবেন না। তাই কেবল জনমত বুঝে সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থীকে ভোট দিলেন। ওই প্রার্থী ভালো কী মন্দ, তা বিবেচনায় আনলেন না। তার মানে আপনার ভোটটি দেয়ার আগেই পচে গেলো। দেয়ার পর পচা ভোটটি আবার পচলো। নিজের ভোটইতো, এতবার পচাবেন কেন? অন্যরা কাকে ভোট দিবে, তা না ভেবে নিজ বিচার বিবেচনা প্রয়োগ করুন। জীবনে উন্নতি করবেন। আর যদি সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থীকে ভোট দেন, তাহলে তার বিজয়ের আনন্দ বাড়ানো ছাড়া আর কোন পরোপকার, স্ব-উপকার হবে না।

ভালো প্রার্থী জেনেও তাকে ভোট না দিয়ে অন্য কাউকে দিলে ভোট পচে
জানলেন, দেখলেন, বুঝলেন অমুক প্রার্থী ভালো, কিন্তু ভোট দিলেন না। ভোট দিলেন যার পালে ভেড়া বেশি তাকে। নিজেও পালের একজন হলেন। শেইম! এটা খুবই লজ্জাজনক কাজ। পচা ভোটের মাঝে এটাই হলো সবচে বেশি পচা। ‘আমি যাকে ভোট দিয়েছি, সে জিতেছে’ এই আনন্দের চেয়ে নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারা বেশি আনন্দের। এটা বুঝতে হবে। অন্যের ইচ্ছায়, অন্যের মতে, অন্যের প্ররোচনায়, অন্যের ভয়ে ভোট দিবেন না। যাকে ভালো প্রার্থী মনে হবে তাকে ভোট দিন।

কিভাবে নিজের ভোটকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করবেন?

খু্বই সহজ। সৎ, ন্যায়বান, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন, সুশিক্ষিত, শান্তিপ্রিয় প্রার্থীকে ভোট দিন। সে কোনো দলের না হলেও তাকে ভোট দিন। তার দল এর আগে কখনো ক্ষমতায় না আসলেও ভোট দিন। তার দল কখনো একটি আসনে জয়ী না হলেও ভোট দিন। সে নতুন প্রার্থী হলেও সমস্যা নেই, সব প্রার্থীই একসময় নতুন থাকেন। যদি মনে করেন আপনার ভোট ও তার নিজের ভোট ছাড়া ওই প্রার্থী কোন ভোট পাবে না, তবুও তাকেই ভোট দিন। একজন সৎ, ন্যায়বান, মানবিক মানুষের মার্কায় আপনার একমাত্র ভোটটি বিজয়ী প্রার্থীর লক্ষ লক্ষ ভোটের চেয়ে বেশি গৌরবের। গৌরব হাতছাড়া করবেন না।

আমার এক ভোটে আর কী আসে যায়?

এরকম ভাববেন না। এরকম ভাবনা অন্যায়। একটি একটি করেই লক্ষ ভোট। আপনার ভোট ছাড়া লক্ষ ভোট পূর্ণ হবে না। এই একটি ভোট না থাকলে লক্ষ ভোট থাকবে না। একজন মানুষ একটি ভোটের মালিক, একাধিক নয়। তাই একটি ভোটই সবচে বেশি মূল্যবান। একটি ভোটের যদি মূল্য না থাকে, তাহলে লক্ষ কোটি ভোটেরও কোন মূল্য নেই।

তাই ভোট দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন না। ভোট দিন। ভালো, সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, মানবতার পক্ষের মানুষকে ভোট দিন। মার্কা দেখবেন না, দলের আকার দেখবেন না, দলের বয়স দেখবেন না। প্রার্থীর জেন্ডার, উচ্চতা, গায়ের রং, পরনের কাপড় দেখবেন না। তিনি আপনার, সমাজের, দেশের জন্য সত্যিকার অর্থে কাজ করবেন কীনা, তা দেখুন।

আপনি জগনণ। জনগণ ‘সবই’ জানে, ‘সবই’ বোঝে। আপনিও জানেন কোন প্রার্থী ভোট পাওয়ার যোগ্য, কোন প্রার্থী যোগ্য না। জেনে শুনে বুঝে নিজের মূল্যবান ভোটটি বদমাশের হাতে তুলে দিবেন না।

ভোট না দিলে কোন বাল ছেঁড়া যাবে?

কিছুই ছেঁড়া যাবে না। মানে ছেঁড়ার মত কিছু হাতের কাছে পাবেন না। গণতন্ত্রে ভোট আর আন্দোলন হচ্ছে জনগণের প্রধান অস্ত্র। দুঃশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের মানুষ আন্দোলন করতে ভুলে গেছে। ওটা স্বাধীনতার আগে হয়েছে। এরপর বিভিন্ন সময় কেবল পৃথক দু’টি পরিবারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য কিছু মানুষ আন্দোলন করেছে, প্রাণ দিয়েছে, মান দিয়েছে। ইদানিং তাও বন্ধ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। প্রথমটি অতীতের দায়মোচন, দ্বিতীয়টি সরকারের তালগাছবাদী নীতির ফল, এবং তৃতীয়টি আন্দোলন ভুলে যাওয়া বুড়োদের জন্য ছোটদের হালকা লজ্জার নজরানা।

দুর্নীতি, দুঃশাসন বৈষম্য, নিপীড়নের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন নাই। মানে গণতন্ত্রের এক অঙ্গ হারিয়ে গেছে। বাকি আছে ভোট। গত নির্বাচনে দেখেছেন, সেটাও অর্ধেক খেয়ে দিয়েছে। বিনা নির্বাচনে সংসদের অর্ধেক আসন ভরে গেছে। আপনি ভোট দেয়ার দাবি থেকে সরে গেলে বাকি আসনগুলোও এভাবে ভরবে। এরপর দেখবেন রাজনৈতিক দলগুলো আসন ভাগাভাগি করে নিয়ে আপনার সামনে পেছনের চামড়া লাল করে দিচ্ছে। আপনার মনোনয়ন না নিয়েই তারা আপনাকে শাসন করবে।

নতুন লেখার নোটিফিকেশন পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

কপিরাইট সংক্রান্ত

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা ভালো লাগলে, গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে, কিংবা অপছন্দ করলে নিজে বকা দিয়ে অন্যকে বকা দেয়ার সুযোগ করে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। লেখার শুরুতে এবং শেষে ফেসবুকসহ ডজনখানেক এপসে শেয়ার দেয়ার অপশন আছে। চাইলে কপি করেও শেয়ার দিতে পারেন। কিন্তু দয়া করে নিজের নামে অথবা জনাবা সংগৃহীত ভাইয়ের নামে, কিংবা মিস্টার কালেক্টেড এর নামে চালিয়ে দিবেন না। মূল লেখক এবং ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করবেন। এবং দোহাই লাগে, এখান থেকে কপি করে নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন না।

মন্তব্য করুন