সুনামগঞ্জে একটি শ্মশানঘাটের একাংশের ২০ শতক জমি ভুয়া দলিলে দখলের অভিযোগ উঠেছে একজন মুসলমান ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। শ্মশানঘাটের জমির একপাশে বালু-পাথর রেখে বিক্রি করছেন দখলদার নাসির উদ্দিন। বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও জমিটি দখলমুক্ত করতে পারছেন না শ্মশানঘাটের দায়িত্বে থাকা লোকজন।
স্থানীয় ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস ও শ্মশানঘাটের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের ধোপাখালী এলাকার নিজগাঁও মৌজায় জেলা প্রশাসকের ৩৩ শতক জায়গায় শ্মশানঘাট করা হয়। এর পাশেই ৫ নম্বর খতিয়ানের ২, ৩ ও ৪ নম্বর দাগে শান্তিপদ রায় ও হরিপদ রায়ের ২২২ শতক জমি ছিল। ১৯৫৮ সালে এই জমির ৩ ও ৪ নম্বর দাগ থেকে ৭৬ শতক এবং ২ নম্বর দাগ থেকে ৪৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এই জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং হাওর উন্নয়ন বোর্ড ব্যবহার করছে। ১৯৬৮ ও ৬৯ সালে লাশকাটা ঘরের জন্য হরিপদ রায় ও শান্তিপদ রায়ের আরও ১০ শতক জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। ১৯৭৩ সালে হরমুজ আলীসহ কয়েকজনের কাছে পাউবো ও শ্মশানঘাটের মাঝখানের ৪৬ শতক জমি বিক্রি করেন হরিপদ রায় ও শান্তিপদ রায়।
হরমুজ আলী পরে দুই ধাপে স্থানীয় নাসির উদ্দিনের কাছে ১৬ দশমিক ৫০ শতক, সুলতান আহমদসহ কয়েকজনের কাছে ১৪ দশমিক ২৫ শতক জমি বিক্রি করেন। এই ৩০ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি তাদের গ্রহীতার দখলেই আছে। এর বাইরে হরিপদ রায় ও শান্তিপদ রায়ের আরও ৪৫ শতাংশ জমি ছিল। এই জমি মৌখিক ঘোষণা দিয়ে শ্মশানঘাটের জন্য রেখেছিলেন হরিপদ রায় ও শান্তিপদ রায়।
রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুড়ারবন্দের শামছুল ইসলামকে এক একর ৩৫ শতাংশ জমি ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন। অথচ ভুয়া দলিল করে নাসির উদ্দিন শ্মশানঘাটের জমি দখলে রেখেছেন। খরিদ দেখিয়ে নামজারিও করে নেন নাসির উদ্দিন। এ ঘটনায় ২০১৫ সালে শ্মশানঘাট পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ভুয়া দলিলকারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিলেট অফিসে অভিযোগ দেওয়া হয়।
জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, শ্মশানঘাটের জমির ভুয়া দলিলকারী দু’জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দুদক। এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করেছেন নাসির উদ্দিন। মামলাটি এ পর্যায়েই আছে।
শ্মশানঘাট পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান দাস বলেন, ‘আমরা বাধা দেওয়ার পরও নাসির উদ্দিন শ্মশানঘাটের জমির একাংশে বালু-পাথর রেখে ব্যবসা করছেন। বালু-পাথর বহনকারী ট্রাক-ট্রাক্টরে শ্মশানঘাটের প্রবেশ পথের সড়ক ও দেয়াল ভেঙে দিচ্ছে। বিষয়টি আমরা শ্মশানঘাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি পৌরসভার মেয়রকে জানিয়েছি।’