বাংলাদেশে কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার অভিযোগে এক হিন্দু ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

 

দু’হাজার সতের সালে রাঙ্গামাটির লংগদু থানায় ইসলামের নবী এবং ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি করে দেয়া এক ফেসবুক পোষ্টের জের ধরে হওয়া মামলায় এই রায় দিয়েছে আদালত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে পোষ্ট দেবার অভিযোগে এটি বাংলাদেশে হওয়া দ্বিতীয় রায়। গত মাসেই এ ধরণের প্রথম রায়েও এক ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ বাজারে একটি দর্জি দোকানে কাজ করতেন সুজন দে। ২০১৭ সালে ১০ই মে বিকেলে মাইনীমুখ বাজারের সেই দোকানের সামনে থেকে পুলিশ সুজন দে’কে গ্রেপ্তার করে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগের দিন ওই ব্যক্তি ফেসবুকে ইসলামের নবী এবং ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে একটি স্ট্যাটাস দেন বলে অভিযোগ ছিল।

পরদিন বাজারের মজসিদ থেকে মুসুল্লিরা একত্রিত হয়ে ওই ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে মিছিল করে এবং স্লোগান দেয়।

লংগদু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মোঃ নুর  বলছিলেন, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ পেয়ে এবং স্থানীয়ভাবে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সে সময় সুজন দে’কে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, “মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আছে যে, সুজন দে তার ফেসবুকে ইসলামের নবী এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে এবং কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, তখন এলাকায় এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরপর ওইদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

সুজন দে’র বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিলুপ্ত হওয়া ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়েছিল।

পুলিশ বলছে, মামলাটি তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৩০শে আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।

আর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত ২০১৭ সালের ২৬শে অক্টোবর সুজন দের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ঐ মামলায় সুজন দে’কে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম বলেছেন, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

ফেসবুকে ইসলামের অবমাননার অভিযোগ এনে বিক্ষোভের সময় ভোলায় চারজন নিহত হয়েছে।

তিনি বলেন, “আসামি সুজন দে ‘জানা-অজানা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তিমূলক পোষ্ট দেয়, এবং ওই আইডি তার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে খোলা হয়েছে, সেটা প্রমাণ হয়েছে।

ওই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন, সে কারণে আদালত তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো একমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে।”

মি. ইসলাম জানিয়েছেন, রায় ঘোষণার পর সুজন দে’কে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার পরিবারের কোন সদস্য আদালতে ছিলেন না। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুজন দে আপিল করবেন কি না জানা যায়নি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশে ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দায়ের মামলায় এটি দ্বিতীয় রায়।

এ নিয়ে পরপর দুই মাসে একই ধরণের দুইটি রায় এলো।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করা হলেও, ওই আইনের অধীনে হওয়া মামলাগুলো এই আইন অনুযায়ী-ই বিচার হবার বিধান রাখা আছে আইনে।

বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্মকে অবমাননা করে দায়ের হওয়া এখনো প্রায় ২০টির মত মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বাংলাদেশে ফেসবুকে ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ এনে স্থানীয় পর্যায়ে বড় ধরণের সহিংসতার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল কক্সবাজারের রামুতে, এরপর একে একে প্রায় একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, রংপুরে এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে ভোলায়।

বিবিসি বাংলা । ডিডব্লিউ বাংলা  । সময় নিউজ টিভি

 

মন্তব্য করুন