কক্সবাজারে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তিনদিন ধরে ‘দলবদ্ধ র্ধষণের’ অভিযোগে ঈদগাঁও থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মাইক্রোবাসটির চালকসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঈদগাঁও থানার ওসি আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, গত ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে কিশোরীর নানার দায়ের এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভূক্ত হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো: কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের খোদাইবাড়ী এলাকার মো. ইদ্রিসের ছেলে জাফর আলম ওরফে খোরশেদ (৫৫) এবং ইসলামাবাদ ইউনিয়নের অলিয়াবাদ এলাকার মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে আহম্মদ উল্লাহ (২৬)। এদের মধ্যে আহম্মদ উল্লাহ মাইক্রোবাসটির চালক এবং জাফর আলম ওরফে খোরশেদ ঈদগাঁও মাইক্রোবাস চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
মামলার অন্য আসামিরা হলো: ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মেহেরঘোনা এলাকার ছাব্বির আহাম্মেদের ছেলে জলাল ওরফে টুক্কুইল্ল্যা (১৯) এবং ইসলামাবাদ ইউনিয়নের খোদাইবাড়ী এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে জাফর আলম (৪০)।
ভূক্তভোগী কিশোরীর (১৫) বাড়ি মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সুতুরিয়া এলাকায়। তার নানার বাড়ি একই উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ধলঘাট পাড়ায়।
এজাহারের বরাতে ওসি আব্দুল হালিম বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি বিকালে ভূক্তভোগী কিশোরী পার্শ্ববতী এলাকার এক বান্ধবীর ছোট ভাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাড়ি থেকে বের হয়। পথিমধ্যে স্থানীয় ধলঘাট এলাকার স্থানীয় একটি লন্ড্রি দোকানে সামনে পৌঁছালে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস তার (ভূক্তভোগী কিশোরী) সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে ৩ জন লোক ওই কিশোরীর মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেয়। এসময় সে চিৎকার করার চেষ্টা করে। এসময় অপহরণকারীরা তার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। পরে ওইদিনই (২৮ জানুয়ারি) তাকে মাইক্রোবাসটি যোগে চট্টগ্রামের বহদ্দার হাটের মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে নিয়ে আসা হয়। এসময় তার হাত-পা বেঁধে গাড়িটির পিছনের সিটে ৩ জন মিলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরদিন (২৯ জানুয়ারি) রাতে মাইক্রোবাসটি করে ওই কিশোরীকে ঈদগাঁও ফরিদ আহমদ কলেজ মাঠে নিয়ে আসে। সেখানে তারা ৩ জন মিলে আবারো তাকে (কিশোরী) ধর্ষণ করে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে আব্দুল হালিম বলেন, ওইদিন (২৯ জানুয়ারি) রাতে কিশোরীটিকে তুলে আনার বিষয়টি অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে জাফর আলম ওরফে খোরশেদকে অবহিত করে। পরে রাতেই তাকে ঈদগাঁও বাজারের ডিসি রোডের মমতাজ মার্কেটের দু’তলায় অবস্থিত স্থানীয় মাইক্রোবাস চালক সমিতির অফিসে নিয়ে যায়। ওই কিশোরীকে মার্কেটটির দু’তলার আরেকটি কক্ষে জোরপূর্বক ঢুকানোর চেষ্টা করে। এসময় কিশোরী চিৎকার করলে স্থানীয় বাজারে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা শুনতে পান। এতে পুলিশের উপস্থিতি অন্যরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে জাফর আলম ওরফে খোরশেদকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ওসি।
আব্দুল হালিম আরো বলেন, গ্রেপ্তার আসামিসহ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে ঈদগাঁও থানায় নিয়ে আসে। পরে তার চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ-ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে ওই কিশোরীকে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থার সেফ হোমে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কিশোরীর নানা বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে ঈদগাঁও থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পুলিশ মামলাটি নথিভূক্ত করেছে। পরে অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাসটির চালক আহম্মদ উল্লাহ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলাটির তদন্ত নিজেই করছেন জানিয়ে ওসি বলেন, মামলাটি নথিভূক্ত করার পরপরই পুলিশ তদন্তকাজ শুরু করেছে। রবিবার (৩১ জানুয়ারি) ঘটনার তদন্তের জন্য তিনি মহেশখালীর ধলঘাটায় গিয়েছেন। সেখানে তিনি ওই কিশোরীর আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই কিশোরীর খোঁজ-খবর নিয়ে যা জেনেছি, মেয়েটির মা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেছেন। এখন বাবার ঘরে সৎ মায়ের কাছেই থাকেন। ওই কিশোরী সম্প্রতি বাবার বাড়ি ফিরেছেন প্রায় এক বছর পর। মা মারা যাওয়ার পর থেকে ওই কিশোরী কিছুদিন নানার বাড়ি, কিছুদিন খালার বাড়ি আবার কিছুদিন অন্য নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে থেকেছেন। এক প্রকার ভাসমান মানুষের মত সে জীবন কাটাচ্ছিলো।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় ঘটনার তদন্তের জন্য চট্টগ্রামের বহদ্দার হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন বলে জানিয়ে ওসি বলেন, ঘটনাটি এখন তদন্তের পর্যায়ের। তদন্তের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘটনার প্রকৃত চিত্রের ব্যাপারে কোন তথ্য সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানান আব্দুল হালিম।