নিজের অফিস রুমে ডেকে নিয়ে ১০ বছরের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে মাদ্রাসার এক অধ্যক্ষকে গণপিটুনি দিয়েছেন স্থানীয় জনতা। শুক্রবার (০৫ জুলাই) সকালে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা মাওলানা আবুল খায়ের বেলালী নামের ওই অধ্যক্ষকে গণপিটুনি দিয়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এদিকে শনিবার (৬ জুলাই) মধ্যরাতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল খায়ের বেলালীর ধর্ষণের বর্ণনা তুলে ধরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া। স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ধর্ষণের পর অভিযুক্ত এই অধ্যক্ষ কোরআন শরীফ হাতে দিয়ে শিশুদের শপথ করাতেন কাউকে কিছু না বলার জন্য।
তিনি আরও জানান, গত একবছরে এই মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আরও মোট ৬ শিশুকে ধর্ষণ করেছে যাদের বয়স ৮ থেকে ১১ এর মধ্যে।
স্ট্যাটাসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া লেখেন, “কী লিখব আর কীভাবে লিখব, ভাষা পাচ্ছি না। তিনি একজন দাওরায়ে হাদীস, (সিলেট বালুরচর কওমী মাদ্রাসা হতে) মাওলানা, একজন বক্তা, একজন ইমাম, শুক্রবারে জুমআর নামাজের খতিব। মাওলানা(!!!) আবুল খায়ের বেলালী। শুক্রবারে তার বয়ান শুনার জন্য আধাঘণ্টা আগে মুসল্লিগণ এসে অপেক্ষা করেন মসজিদে।
কেন্দুয়ার আঠারবাড়ি এলাকায় মা হাওয়া (আ:) কওমী মহিলা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক (মুহতামিম) যে মাদ্রাসায় রয়েছে প্রায় ৩৫ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রী যাদের ১৫ জন আবাসিক। সেখানে তিনিও আবাসিক। সময় সুযোগ বুঝে তিনি কলিংবেল চাপেন আর ওনার পছন্দমত একজন কোমলমতি ছাত্রীর ডাক পড়ে তার গা-হাত-পা টিপে দেবার জন্য। আর এক পর্যায়ে তিনি সেই অবুঝ শিশুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন,(. . . . .) এবং শেষে আবার কোরআন শরীফ হাতে দিয়ে শপথ করান কাউকে কিছু না বলার জন্য, বললে কিন্তু আল্লাহ তোমাকে দোযখের আগুনে পোড়াবেন। ভয়ে কোমলমতি ছাত্রীরা কাউকে কিছু বলেন না। কিন্তু আজ এক সাহসী বীরাঙ্গনা সেই ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয়, বলে দেয় তার বড় বোনসহ বাড়ির সবাইকে সেই যন্ত্রনার মুহূর্তগুলোর কথা।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় আটক হন সেই হুজুররূপী ধর্ষক। থানায় আটক থাকা অবস্থাতেই আরো একজন শিশুশ্রেণীর ছাত্রীর অভিযোগ জমা পড়ে। দুইটি ধর্ষণ মামলা হয়েছে তার নামে (কিছু অনলাইন পত্রিকায় ধর্ষণের চেষ্টার কথা বলা হয়েছে)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাই, গত একবছরে আরো মোট ৬জন ছাত্রীর সাথে তিনি অনুরূপ কুকর্ম করেছেন যাদের সবারই বয়স ৮ থেকে ১১ এর মধ্যে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু আলামত জব্দ করি সাথে সেই ”কলিংবেল” টি ও যা আদালতে উপস্থাপন করা হবে। হুজুরকে রিমান্ডে আনা হবে।”
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগীসহ মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে শুক্রবার ওসি রাশেদুজ্জামান বলেন, মাদ্রাসা চলাকালীন সময় অধ্যক্ষ বেলালী ১০ বছরের এক ছাত্রীকে ডেকে তার অফিস রুমে নিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর পাশের ক্লাসে থাকা শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের রুমে যাওয়া তাদের সহপাঠীর চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পায়। এগিয়ে গেলে অধ্যক্ষের কুকর্ম দেখে ফেলে বাকি শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে ঘিরে মাদ্রাসায় শুরু হয় তুলকালাম। পরে স্থানীয়রা ছুটে এসে ঘটনা জানতে পেরে অধ্যক্ষকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন।