টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই শিশু শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন ও মাথার চুল কেটে বিকৃতি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করে মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) বিকেলে নির্যাতিতা শিশুর বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেছেন তিনি।
অপরদিকে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই মাদ্রসার সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় পাল্টা থানায় অভিযোগ করেছেন।
৪ অক্টোবর উপজেলার বহেড়াতৈল ইউনিয়নের বেতুয়া পশ্চিম পাড়া বিশ্ব নবী (সা.) হাফেজিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মো. তৈয়ব আলী আকন্দ ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক (হুজুর)। তার বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায়।
অভিযোগকারী বাবুল হোসেন জানান, তার ১০ বছর বয়সী ছেলে বিজয় হোসেন প্রায় দুই বছর ধরে ওই হেফজ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। রোববার (৪ অক্টোবর) তার ছেলে মাদ্রাসায় গেলে মাথা ন্যাড়া না করার অপরাধে ওই মাদ্রাসার প্রধান হুজুর ব্লেড দিয়ে ছেলের মাথার চুল বিকৃত করে দেন। একই সময় তাঁর ছেলের বন্ধু জাকারিয়ার মাথার চুলও একই কায়দায় বিকৃত করা হয়। এ সময় ওই হুজুর তাদেরকে শারীরিক নির্যাতনও করেন।
শিক্ষার্থী বিজয় হোসেন জানায়, মাথার চুল ছোট করে কাটলেও ন্যাড়া না করার অপরাধে বড় হুজুর একটি ব্লেড হাতে নিয়ে মাথার মাঝ বরাবর রেখা টেনে ন্যাড়া করে দেন। পরে দুই কানমলে এক পর্যায়ে ঘাড়ের ওপর ক্যারাতে স্টাইলে আঘাত করেন। হুজুর কখনো আমাদেরকে বেত দিয়ে পেটান না। সব সময় ঘাড়ের মধ্যে ক্যারাতে স্টাইলে মারধর করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মুফতি মো. তৈয়ব আলী আকন্দ জানান, প্রতি মাসেই শিক্ষার্থীদের চুল ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। ওইদিন দুইজনের ন্যাড়া করার প্রস্তুতিকালে নামাজের সময় হওয়ায় তিনি মসজিদে চলে যান। নামাজের পর ন্যাড়া করার জন্য ওই দুই ছাত্রকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওরা বিকৃত মাথা নিয়েই বাড়িতে চলে যায়। পরে ওই গ্রামের কিছু লোকজন ওই দুই ছাত্রের মাথার বিকৃত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আমার সম্মানহানি করেন। এক পর্যায়ে গ্রামের কিছু মানুষ আমার ওপর হামলাও চালায়।
সখীপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এএইচএম লুৎফুল কবির জানান, নির্যাতিতা শিশুর বাবা সখীপুর থানায় এসে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম আরেকটি পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন। দুটি অভিযোগই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। উভয়পক্ষের অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমাউল হুসনা লিজা জানান, অভিভাবক শিশুকে নিয়ে তার কার্যালয়ে এসেছিলেন। পরে এ বিষয়টি সখীপুর থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।