‘মা, আমার নামে তারা যে বদনাম উঠিয়েছে, তাতে আমি এ পৃথিবীতে থাকতে পারছি না। আমি একটা খারাপ মেয়ে, আমি নাকি খুব খারাপ। আমাকে কেউ বিশ্বাস করে না। কেউ না, তুমি ছাড়া।’ আত্মহত্যার আগে এমন শব্দে মায়ের কাছে একটি চিরকুট লিখে গেছে বরগুনার এক স্কুলছাত্রী (১৩)।

অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর গলায় ওড়া প্যাঁচানো ঝুলন্ত লাশ আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে বরগুনা শহরের একটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে যৌন হয়রানি ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বাড়ির মালিকের ছেলে জামাল হোসেনকে (২৭) আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ভাড়া বাসায় আসার পর থেকেই বাড়ির মালিকের ছেলে জামাল হোসেন কিশোরী ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতেন। সে বাথরুমে গোসলে গেলে জামাল প্রায়ই উঁকি দিতেন এবং আপত্তিকর ইঙ্গিত করতেন। বিষয়টি ওই কিশোরী জামালের মা ও স্ত্রীকে জানায়। এরপর থেকে কিশোরীকে দেখলেই জামালের আপত্তিকর কথাবার্তা ও ইঙ্গিত করা বেড়ে যায়। পরিচিতজনদের মাধ্যমে জামাল কিশোরীর সম্পর্কে অপবাদ ছড়াতে থাকেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা মনে করছেন, উত্ত্যক্ত ও অপমান করা সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ওই কিশোরী। আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে গেছে সে। সেখানেও তাকে দেওয়া অপবাদ সহ্য করতে না পারার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী বলেন, গত শনিবার বাথরুমে ওই কিশোরী গোসল করার সময় জামাল উঁকি দিয়ে দেখলে পানি ছুড়ে মারে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জামাল অশ্লীল গালি দেন এবং কিশোরীর নামে তাঁকে জড়িয়ে বদনাম রটিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

স্কুলছাত্রীর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামালের উত্ত্যক্ত করার কারণেই আমার মাইয়াডা আত্মহত্যা করেছে। আমার মেয়ের কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় নাই। এখন আমার মাইয়াডা তো চইলা গেল, এখন নিশ্চয়ই সবাই বিশ্বাস করবে। জামালের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করলে আমার মেয়েকে জামাল মারধরও করত।’ তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন ধরে তাঁর মেয়ে ও জামালকে জড়িয়ে প্রতিবেশীরা অনৈতিক সম্পর্কের কথা বলাবলি করছিল। তিনি গতকাল রোববার রাতে বাড়ির মালিক আবুল বাশারকে (জামালের বাবা) মুঠোফোনে তাঁর ছেলের এই বিষয়গুলো জানান। পরে আবুল বাশার গ্রামের বাড়ি থেকে এসে জামালকে শাসন করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তার আগেই তাঁর মেয়ে তাঁদের ছেড়ে চলে গেল।

বাড়ির মালিক আবুল বাশারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মেহেদী হাছান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা একটি চিরকুট পেয়েছেন। লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে, এটা হত্যা, নাকি আত্মহত্যা। তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় কিশোরীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগে স্থানীয় এলাকাবাসী জামাল নামের একজনকে আটক করে আমাদের কাছে দিয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

প্রথম আলো

মন্তব্য করুন