লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ইশাতুন উলুম কওমি নুরানি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মো. শিবলুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এক ছাত্রকে (১৪) যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। থানায় ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত হওয়া ওই শিক্ষক পলাতক।

 

১৭ জুন বৃহস্পতিবার রাতে রায়পুর থানার ওসি আবদুল জলিল ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেন।

ওসি জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মো. শিবলু উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের পূর্ব কেরোয়া গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

এ ঘটনায় বুধবার রাতে নির্যাতনের শিকার কিশোরের বাবা বাদী হয়ে অভিযুক্ত ওই মাদ্রাসাশিক্ষকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে রায়পুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে এবং ছাত্রের মা ও নানা জানান, প্রায় চার বছর আগে ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে ভর্তি হয় ভিকটিম ও তার শিশু ছোট ভাই। ভিকটিম ২০ পারা পর্যন্ত কোরআন মুখস্ত করে। গত চার মাস ধরে মধ্য রাতে মাথা ও শরীর ম্যাসেজ করার কথা বলে ভিকটিমকে কক্ষ থেকে কৌশলে ডেকে যৌন হয়রানি করে আসছে শিক্ষক শিবলু। রমজানের ছুটি শেষে বাড়িতে যায় ভিকটিম। পরে সে আর ফিরতে চাইছিল না। পরে অভিভাবকদের চাপাচাপিতে ভিকটিম শিক্ষকের যৌন হয়রানির ঘটনা খুলে বলে। পরে মাদ্রাসার প্রধানের কাছে অভিযোগ দেন কিশোরের নানা ও বাবা। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্রসহ তার ছোট ভাইকে এ মাদ্রাসা থেকে সদর উপজেলার মান্দারি বাজার এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল মাদারিস বটতলিতে ভর্তি করা হয়েছে।

সেখানেই সোমবার দুপুরে শিবলুসহ পাঁচ বন্ধু ভিকটিমকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে দস্তখত ও বক্তব্য ভিডিও করে নেয়। এ ঘটনা জানতে পেরে আবারও লুধুয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা উল্টো ঘটনাটি মিথ্যা এবং বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় কেরোয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম (সামু) এমন কলঙ্কজনক ঘটনার কঠোর শাস্তির দাবি করেন।

এদিকে অভিযুক্ত হাফেজ মাওলানা মো. শিবলুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে তার ভাই জাফর আহাম্মদ বলেন, আমার ভাই নির্দোষ। এটি প্রমাণ করতেই ওই কিশোরের বক্তব্য নিতে মান্দারি এলাকার ওই মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। তা ছাড়া শিবলু বিবাহিত। তার দুই কন্যাসন্তান রয়েছে।

ইশাতুন উলুম নুরানি ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা মো. আবদুল্লাহ বলেন, কিশোর ছাত্রের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় শিক্ষক শিবলুকে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিশোরের অভিভাবকের কাছে আমরা অনুতপ্ত হয়েছি। অন্য কিছু বলতে পারবো না। শুনেছি, থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে।

এ ঘটনার লিখিত অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। এর আগে কিছুই বলা যাবে না।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন