দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃত্ববৃন্দ বলেছেন, দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতনের ব্যাপারে সরকার যে ভাষায় কথা বলছে তা বাস্তবকে আড়াল করার ভাষা। এই ভাষা বন্ধ করে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সংখ্যালঘুদের ব্যাপকহারে দেশত্যাগ অনিবার্য। বিভিন্ন উপদ্রুত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরে গতকাল রোববার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জিয়াউদ্দিন তারেক আলী। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোশারফ হোসেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন, ড. আবদুল গফুর, খুশী কবির, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, অজয় রায় প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত মাস তিনেক যাবৎ সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতনের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। বাগেরহাট, ফরিদপুর, বরগুনা প্রভৃতি জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে যেসব ঘটনার কথা জানা গেছে তাকে নিঃসন্দেহে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলা যায়। এতে বলা হয়, সারা দেশে যেভাবে সহিংসতা ও নারী লাঞ্ছনা হয়েছে তাঁতে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা, অপমান বোধ দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে তাদের আস্থা ফিরানো না গেলে তাদের ব্যাপকহারে দেশত্যাগ কেউ ঠেকাতে পারবে না। নেতৃত্ববৃন্দ বলেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির কাজে সরকার কিংবা বিরোধী দল কারোরাই উদ্যেগ নেই। তাঁরা অবিলম্বে নির্বাচিত সাংসদদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংখ্যালঘু নির্যাতনের সর্বশেষ রূপ হচ্ছে- পূজা নিয়ে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বলা হচ্ছে⎯ পূজা করতেই হবে। সব ব্যবস্থা আমরা করব। কোথাও বলা হচ্ছে, মিছিল করে স্থানীয় এমপি অথবা ইউএনওর কাছে গিয়ে পূজার জন্য বরাদ্দ সরকারি অনুদান আনতে হবে। নেতৃত্ববৃন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, পূজার পরও এই সন্ত্রাস চলবে। তখন হয়তো বলা হবে⎯ ‘ব্যাটা পূজা করিসনি কেন, কিংবা পূজা করেছিস কেন?’ সংবাদ সম্মেলনে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন প্রতিরোধে সাধারণ নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয়।
প্রথম আলো, ২২ অক্টোবর, ২০০১