মুক্তচিন্তা আন্দোলনস্বতন্ত্র ব‍্যক্তিত্বআবদুল রহীম | জোয়ারের উল্টোমুখী স্রোত

আবদুল রহীম | জোয়ারের উল্টোমুখী স্রোত

মানুষ বরাবরই স্বাধীনচেতা। নরকের ভয় আর স্বর্গের লোভ দিয়ে কতক্ষণ আটকে রাখা যায়? যেমন আবদুল রহীমকে আটকে রাখা যায়নি উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের সেরা সময়েও। তিনি খুব বেশি 'দরিদ্র' 'অসহায়' ছিলেন না যে মনের সুখে ধর্ম ত্যাগী হবেন। কিন্তু বুদ্ধিতে তিনি যথেষ্ট ধনী ছিলেন, তাই যা নেই তার উপর ভরসা করার যুক্তি খুঁজে পাননি।

আবদুল রহীম | জোয়ারের উল্টোমুখী স্রোত

মানুষ বরাবরই স্বাধীনচেতা। নরকের ভয় আর স্বর্গের লোভ দিয়ে কতক্ষণ আটকে রাখা যায়? যেমন আবদুল রহীমকে আটকে রাখা যায়নি উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের সেরা সময়েও। তিনি খুব বেশি 'দরিদ্র' 'অসহায়' ছিলেন না যে মনের সুখে ধর্ম ত্যাগী হবেন। কিন্তু বুদ্ধিতে তিনি যথেষ্ট ধনী ছিলেন, তাই যা নেই তার উপর ভরসা করার যুক্তি খুঁজে পাননি।

ব্রিটিশ বাংলার কলকাতায় একদিকে যখন রাজা রামমোহন রায় হিন্দু ধর্মের কুসংস্কার ভাঙছিলেন, অন্যদিকে মুসলমান সমাজেও যুক্তিবাদী বুদ্ধিজীবী হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলেন আবদুল রহীম। অথচ যুক্তিবাদী রহীম প্রথম জীবনে ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ধার্মিক, পরবর্তীকালে ধর্মীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখায় পরিচিতি লাভ করলে তার ভেতরের মানসিকতায় বিশাল পরিবর্তন আসে।

আবদুল রহীমের জন্ম কলকাতা থেকে প্রায় ১৬শ কিলোমিটার দূরে উত্তর ভারতের গোরাখপুর শহরে এক তাঁতি পরিবারে। তার শিক্ষা জীবন ছিলো বেশ সাফল্যমণ্ডিত। তিনি লক্ষ্ণৌ ও দিল্লির প্রখ্যাত মাদ্রাসায় শিক্ষালাভ করে আরবি এবং ফারসি ভাষায় অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী হন।

ধার্মিক এবং শরিয়তের বিধিবিধান অনুযায়ী জীবনযাত্রা চলতে থাকলেও রহীমের জ্ঞানতৃষ্ণা ছিলো প্রবল। জ্ঞানের দুর্নিবার আগ্রহ তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় আরবি ও ফারসি ভাষায় রচিত বিভিন্ন ধর্মীয় দর্শনের সাথে। তিনি ধীরে ধীরে ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত হতে শুরু করেন। বিভিন্ন ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করার ফলে মুতাজিলা দার্শনিকদের যুক্তিবাদী চিন্তার প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন এবং শেষ পর্যন্ত প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। ফলে তিনি তিনি ‘দাহরি’ অর্থাৎ ‘নাস্তিক’ হিসেবে পরিচিত হন। কিন্তু আবদুল রহীম নিজেকে মুক্তমনা যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে পরিচয় দেন।

১৮১০ সালে কলকাতায় আগমন করেন আবদুল রহীম। তখন তিনি হিন্দু সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টারত রাজা রামমোহন রায়ের পরিচয় জানতে পারেন। এরপর তিনি ইংরেজী ভাষা শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেন। এই ভাষার মাধ্যমে সমকালীন ইউরোপীয় সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হন; যার ফলে তাঁর নিজস্ব যুক্তিবাদী চিন্তা আরও দৃঢ় হয়।

কলকাতায় নতুন এক বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠি গড়ে ওঠে যার কেন্দ্রে ছিলেন আবদুল রহীম। তারা আবদুল রহীমের মতো নিজেদের নাস্তিক পরিচয় না দিলেও উদার ও সংস্কারপন্থী ছিলেন এবং ধর্মবিশ্বাসকে যতটা সম্ভব যুক্তির আলোকে গ্রহণ করার চেষ্টা করতেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আল-ওবায়দী (১৮৩২-১৮৮৫)। তিনি ঢাকা মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর কর্মরত ছিলেন। ওবায়দী তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, তিনি দর্শন ও বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রথম পাঠ গ্রহণ করেন তাঁর মহান শিক্ষক আবদুল রহীমের কাছ থেকে। ওবায়দুল্লাহ নিজেও ছিলেন বহুভাষাবিদ, যুক্তিবাদী, উদারপন্থী শিক্ষাবিদ ও সংস্কারক।

এমন অনেক মানুষের মনে আলোর বাতিকা জ্বালানো আবদুল রহীম ১৮৫৩ সালে কলকাতাতেই মৃত্যু বরণ করেন।

নতুন লেখার নোটিফিকেশন পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

কপিরাইট সংক্রান্ত

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা ভালো লাগলে, গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে, কিংবা অপছন্দ করলে নিজে বকা দিয়ে অন্যকে বকা দেয়ার সুযোগ করে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। লেখার শুরুতে এবং শেষে ফেসবুকসহ ডজনখানেক এপসে শেয়ার দেয়ার অপশন আছে। চাইলে কপি করেও শেয়ার দিতে পারেন। কিন্তু দয়া করে নিজের নামে অথবা জনাবা সংগৃহীত ভাইয়ের নামে, কিংবা মিস্টার কালেক্টেড এর নামে চালিয়ে দিবেন না। মূল লেখক এবং ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করবেন। এবং দোহাই লাগে, এখান থেকে কপি করে নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন না।

মন্তব্য করুন