ভূমিকা

রাষ্ট্রের বহুমাত্রিক পক্ষপাতদুষ্টতা এবং নাগরিকের অধিকারের প্রতি অন‍্যায় অবজ্ঞা মানবাধিকার পরিপন্থী। দেশের স্ব-বিরোধী সংবিধান নাস্তিকদের অধিকার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। রাষ্ট্র একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মত আচরণ করে। শুরুতেই রাষ্ট্র ধর্মহীন নাগরিকদের গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। রাষ্ট্র ভয়াবহ মাত্রায় ধার্মিক। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্র নির্লজ্জভাবে সংখ‍্যাগরিষ্ঠ ধর্মগোষ্ঠীর হয়ে কাজ করে। তৃতীয়ত সংখ‍্যাগরিষ্ঠ ধর্মের সেসকল দল বা গোষ্ঠীর পক্ষ নেয়, যারা সহিংস। ধর্মের প্রশ্নে রাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্বের বহু ধাপ ও পর্যায়। বলা যায় এই বিষয়ে চতুর্থমাত্রিক বৈষম‍্যে পিষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশ।

অধিকার কোন দান বা দয়া নয়। নাগরিকের অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠা করাই রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান দায়িত্ব। এ দায়িত্ব বেমালুম অস্বীকার করে যাচ্ছে পক্ষগুলো। এটা মানবাধিকারের বিপক্ষে ভয়াবহ অপরাধ। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অধিকারের প্রশ্নে আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও দাবি রয়েছে।

দাবি সমূহ

১. সংবিধানকে ধর্মমুখী না করে গণমুখী করতে হবে।

  • ক) সংবিধানে ধর্ম পালনের স্বাধীনতার পাশাপাশি ধর্ম পালন না করার অধিকার স্পষ্ট করতে হবে।
  • খ) রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ বাদ দিয়ে রাষ্ট্রকে সকল ধর্ম ও মতের মানুষের উপযোগী করতে হবে।
  • গ) রাষ্ট্র নিজে ধর্ম পালন করবে না, কাউকে ধর্ম পালনে উদ্বুদ্ধ কিংবা বাধাসৃষ্টি করবে না। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় আচার-রীতি পালন বন্ধ করতে হবে।
  • ঘ) সংবিধান থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী সকল আইন বিলোপ করতে হবে।
  • ঙ) সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের ধারা পুনর্বহাল করতে হবে।

২. বাংলাদেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিচারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

  • ক) তালিকা করে নাস্তিকদের হত‍্যা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের নখদর্পনে ঘোষণা দিয়ে এমন হত‍্যাযজ্ঞের যথাযথ বিচার চাই। পাশাপাশি যারা ধর্মানুভূতি কাজে লাগিয়ে মানুষকে হত‍্যার আহ্বান জানায়, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
  • খ) সাংবিধানিক পদে আসীন থাকা যত ব‍্যক্তি ধর্মের নামে মানুষ হত‍্যায় প্রত‍্যক্ষ উস্কানি ও প্রশ্রয় দিয়েছে, বিশেষ আইনে তাদের বিচার করতে হবে।
  • গ) ধর্মীয় সহিংসতায় হত‍্যা, নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগ, উচ্ছেদ ও দখলের ঘটনাসমূহের বিচার ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. বিজ্ঞানমুখী বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে।

  • ক) মাদ্রাসা শিক্ষা ব‍্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটিয়ে সাধারণ শিক্ষা ব‍্যবস্থার সাথে একীভুত করতে হবে। এতিমখানার নামে বেসরকারি মাদ্রাসাগুলোকে বিদ‍্যালয়ে রূপ দিয়ে সম্পূর্ণরূপে সমাজকল‍্যাণ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতার আওতায় আনতে হবে।
  • খ) মাদ্রাসা শিক্ষায় সম্পৃক্ত ইতিমধ‍্যে পিছিয়ে পড়া বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার সত‍্যিকার মান উন্নয়নে কার্যকর উদ‍্যোগ নিতে হবে।
  • গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষার স্থলে ধর্মীয় ইতিহাস ও ধর্মীয় সংস্কৃতি বিষয়ক পাঠদানে গুরুত্বারোপ করতে হবে। কয়েকটি ধর্মের নামে পৃথক পৃথক বই না রেখে বাংলাদেশে প্রচলিত সব ধর্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে একটি একক বইয় প্রণয়ন করতে হবে।
  • ঘ) বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ্য বই থেকে ধর্মীয় ব্যক্তিদের জীবনচরিত বাদ দিতে হবে।
  • ঙ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় পোশাক এবং ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে বাধ‍্য করা বন্ধ করতে হবে।

৪. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকরভাবে সাধারণ আইনের আওতায় আনতে হবে।

  • ক) যুগোপযোগী ধর্মীয় উপাসনালয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। শহর এবং গ্রাম ভেদে প্রতি কয় কিলোমিটারে একটি উপাসনালয় প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করে অতিরিক্ত উপাসনালয়গুলো বন্ধ করতে হবে।
  • খ) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শব্দযন্ত্রের ব‍্যবহার সাধারণ শব্দদূষণ আইনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
  • গ) ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে ভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষদের প্রতি আক্রমণের উস্কানি দেয়া বন্ধে আইনের কার্যকর প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
  • ঘ) খাস জমি অথবা অন্যের মালিকানাধীন জমি দখল করে নির্মিত সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ের পৃথক তালিকা প্রকাশ করে ওই সব স্থাপনা বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

আমরা মনে করি উপরে উল্লেখিত দাবিসমূহ পূরণ করলে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ‍্যকে জন্ম নেয়া বৈষম‍্যহীন স্বপ্নের বাংলাদেশ নতুন এক গৌরবজ্জ্বল অধ‍্যায়ে পদার্পন করবে। যার মাধ‍্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটি উদার মানবিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে

10,324ভক্তমত

মুক্তচিন্তা আন্দোলন

গত সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত