এ সময় ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দিন ও তাঁর ছেলে কাফি উদ্দিন ধর্ষিতাকে বিচারের নামে মারধর করেন

বান্দরবানের লামা উপজেলায় এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের অভিযোগে গত মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত একটার সময় নূর হোসেন নামের একজনকে আটক করছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈশাখী মেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে স্থানীয় নুর হোসেন ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল যোগে এই নারীকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অংহারীপাড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে জনৈক থোয়াই সাছিং মারমার ঘরে বসে উভয়ে চোলাই মদ পান করেন। এরপর বদুঝিরি এলাকার নূর হোসেন, বড় ছনখোলা এলাকার নূর মোহাম্মদ ও কুমারী এলাকার মো. রুবেলসহ ৪-৫ জন জোর করে তাকে মদ পান করিয়ে ধর্ষণ করেন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে অংহারিপাড়ার শ্মশান সংলগ্ন তামাক ক্ষেতে গণধর্ষণের এই ঘটনা ঘটে।

ওইদিন বিকেল পাঁচটার দিকে পাশের এলাকার লোকজন এই নারীকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ সময় ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দিন ও তার ছেলে কাফি উদ্দিন তাকে বিচারের নামে মারধর করেন। সেই নারী শারীরিক ভাবে অসুস্থ হলেও তাকে ঘটনার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়নি।

আরো জানা গেছে, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ধর্ষকদের পক্ষ অবলম্বন করে তিন জন জনপ্রতিনিধি ইউনিয়নের ৮নং ইউপি সদস্য মো. সহিদুজ্জামান, ৭ নং ওয়ার্ডের কামাল উদ্দিন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য আনাই মারমা তাকে ইয়াংছা বাজারে নিয়ে প্রকাশ্যে বিচার বসায়।

এই ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৮ নং ইউপি সদস্য মো. সহিদুজ্জামান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ঘটনার পর কোন বিচার করিনি, মেয়েটিকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি, পরে শুনলাম তাকে রাতে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে।

ওই নারী বলেন, মেম্বাররা কোনো অভিযোগ না শুনে সাদা কাগজে টিপসই নিয়ে বলেন, যা হয়েছে এখানেই শেষ, কোনো অভিযোগ করবে না। তারা নূর হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও রুবেলকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। পরে আমি মায়ের কাছে চলে যাই।

এই ব্যাপারে মারধরের ও বিচারের ঘটনায় অভিযুক্ত ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কামাল উদ্দিনের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে ধর্ষণের শিকার নারীর মা তার মেয়ের ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভিকটিম ও অভিযুক্ত নুর হোসেন থানা হেফাজতে রয়েছেন।

ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে কিছুদিন আগে তার স্বামী ছেড়ে চলে যান। ওই নারী এখন এক সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন।

এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, ভিকটিম ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকারের পাশাপাশি মামলা করতে চাচ্ছেনা। তবে ভিকটিম ও অভিযুক্ত নুর হোসেনকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। ভিকটিম অভিযোগ করার সাথে সাথে মামলা নেওয়া হবে।

ঢাকা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন