ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় শালিসকারীরা মিমাংসার নামে সময় ক্ষেপন করছে। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। পরে এ প্রতিবেদক পুলিশকে অবহিত করলে ১ মার্চ রবিবার রাতে ছাত্রীকে থানায় এনে মামলা নেওয়া হয়েছে।
ওই স্কুল ছাত্রী জানায়, প্রায় এক বছর আগে সিংদই গ্রামের আব্দুল কাদিরের কলেজ পড়–য়া পুত্র ইমরানের সাথে তার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। সর্ম্পকের সুযোগ নিয়ে ইমরান তাকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিত। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি সে। গত ছয় মাস আগে এক রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরের বাহিরে এলে ইমরান তাকে মুখ বেধে পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের কথা কাউকে প্রকাশ না করতে ভয় দেখায় ইমরান। এক পর্যায়ে অন্তসত্তা হয়ে পড়লে বিয়ের জন্য ইমরানকে চাপ দেয়। অন্তঃসত্ত্বার কথা শুনে সে বিয়ে করার কথা বলে ২৫ জানুয়ারি নান্দাইল হাসপাতালের কাছে একটি প্যাথলজিতে হাসনা আক্তার নামে এক নারীকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে জোর পূর্বক গর্ভপাত করায়। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি ইমরানের এক চাচার মাধ্যমে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। গর্ভপাতের ঘটনাটি গোপন রাখলে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিলেও এখন মানুষের কাছে বলে বেড়াচ্ছে যত টাকাই খরচ হয় বিয়ে করবে না।
ওই ছাত্রীর মামা বাহার উদ্দিন বলেন, আমার ভাগিনি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ১০ শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারের দরিদ্রতার কারণে আমার বাবা নুর ইসলাম তাকে বাড়িতে রেখে পড়াশুনা করাতো। আমরা গরিব মানুষ। আইনের আশ্রয় নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাসিম উদ্দিন ঘটনাটি মিমাংসার উদ্যোগ নিয়েছেন। গর্ভপাতের ঘটনাটি স্বীকার করে ইমরানের বাবা আব্দুল কাদির বলেন, বাচ্চা নষ্ট করার সময় আমি ছিলাম না। আমার পরিবারের অন্যরা ছিল। এখন মিমাংসার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সাবেক চেয়ারম্যান হাসিম উদ্দিন যেভাবে বলে সেভাবেই কাজ করবো। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান বকুল বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অনুষ্ঠিত এক শালিস বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ছেলে মেয়ের বিয়ে দেওয়া হবে। সে সময় তিনিও উপস্থিত ছিলেন। মিমাংসার দ্বায়িত্ব নেওয়া সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাসিম উদ্দিন বলেন, আমি দ্বায়িত্ব নিয়েছি মিমাংসার জন্য। দুই জনকে বিয়ে পড়িয়ে দিব। কিভাবে বিয়ে দিবেন মেয়ের তো বয়স ১৮ হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিশ্চিুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, রাতের আধারে একাধিক শালিসকারী মোঠা অংকের টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল।
নান্দাইল মডেল থানার ওসি মনসুর আহম্মদ বলেন, আপনার মাধ্যমে (প্রতিবেদক) ঘটনাটি জেনে রবিবার রাতে ইমরানকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ পাঠাই। ইমরানের পুরো পরিবার গাঁ ঢাকা দিয়েছে। পরে ছাত্রীটিকে থানায় নিয়ে আসি। তখন ছাত্রীর মা বাদী হয়ে ইমরান ও গর্ভপাত ঘটানো প্যাথলজির হাসনা আক্তারসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।