ফেনীর সোনাগাজীতে শিক্ষার্থীদের যৌন নির্যাতন ও সেই তথ্য গোপন রাখতে শিক্ষার্থীদের পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁইয়ে শপথ করানোর অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা তাকে আটকে সোনাগাজী মডেল থানায় সোপর্দ করেছে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম ইয়াসিন আরাফাত। তিনি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের রহমানিয়া মাদানিয়া হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষক।
জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের চাদপুর গ্রামের এক ব্যক্তি তার ১২ বছর বয়সী ছেলেকে রহমানিয়া মাদানি হাফেজী মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। গত দেড় বছর ধরে শিশুটি মাদরাসার হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করছে। মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক নোয়াখালী জেলার সুবর্নচর উপজেলার বাসিন্দা হাফেজ ইয়াসিন আরাফাত ওই শিশুকেসহ কয়েকজন ছাত্রকে গত এক বছর ধরে ধারাবাহিক যৌন নির্যাতন করেছেন। নির্যাতনের শিকার ছাত্ররা মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমানকে জানালেও তিনি কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করেননি।
যৌন নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রের বাবা জানান, তার ছেলেসহ আরও কয়েকজন ছাত্রকে বহুবার যৌন নির্যাতন করেন শিক্ষক ইয়াসিন। গত ১৮ জানুয়ারি রাতে শিক্ষক তার ছেলেকে সর্বশেষ যৌন নির্যাতন করেন। পরে ভোর রাতে তার ছেলে মাদরাসা থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষক তাকে ধরে এনে হোস্টেলে আটক রেখে কাউকে না জানানোর জন্য কোরআন শরীফ ছুঁইয়ে শপথ করায়। পরে ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যান।
তিনির আরও জানান, ঘটনার পর মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমানকে সবকিছু অবহিত করলেও তিনি কোন ব্যাবস্থা নেননি। পরে সোমাবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবুর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলে তিনি গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে মঙ্গলবার সকালে পরিষদে হাজির করেন। সবার উপস্থিতিতে ওই শিক্ষক তার অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেও চেয়ারম্যান তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু বলেন, ওই শিক্ষক তার অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেও বিষয়টি আমার এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করি। এর আগেও ছাত্রদের শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ এনে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কয়েকজন ছাত্রের অভিভাবক পরিষদে লিখিত অভিযোগ করেন। ভবিষ্যতে একই অপরাধ পুনরায় করবেন না মুচলেকা দিলে তাকে সতর্ক করা হয়।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মাইন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যৌন নির্যাতনের শিকার ছাত্রের বাবা থানায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।