কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ধর্ষণের শিকার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (৮ মার্চ) এই ঘটনায় ভুক্তভগী শিশুর বাবা বাদী হয়ে ধর্ষণ, অপহরণ ও জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর অভিযোগে মূল অভিযুক্ত মুস্তাক (৩০) ওরফে মুন্নুসহ ৫ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন।

 

অন্য আসামিরা হলেন – মুন্নুর ভাই মো. মানিক (৪০), মো. রশিদ (৫৬), মো. শুকুর (৪৯) ও বোন মনোয়ারা খাতুন (৩৩)।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই পারিবারিক কাজে বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিলেন ভুক্তভোগী শিশুর মা। এই সুযোগে ফাঁকা বাড়িতে একা পেয়ে অভিযুক্ত মুন্নু (৩০) ওই শিশুকে ধর্ষণ করেন। পরে এই ব্যাপারে কাউকে জানালে পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যা করা হবে বলে ভুক্তভোগী শিশুকে ভয় দেখান মুন্নু। এইভাবে ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ওই শিশুকে ধর্ষণ করেন তিনি।

এক পর্যায়ে ওই শিশু গর্ভবতী হয়ে পড়ে। তার পরিবারের লোকজন ধর্ষণের বিষয়ে জানতে না পারলেও চালচলনে অসঙ্গতি দেখে তাদের সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই শিশুর গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হয় তার পরিবার। বাধ্য হয়ে তখন পরিবারের সবাইকে সবকিছু জানায় ওই শিশু।

শিশুটির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরের দিন নিজের বাড়ির সামনে থেকে ওই শিশুকে তুলে নিয়ে যান অভিযুক্ত মুন্নু ও তার পরিবার লোকজন।

পরে খোকসা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের পরিবার কল্যাণ সহকারী আরেনা খাতুন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স শেফালী বেগমের সহযোগিতায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে জোরপুর্বক শিশুটির গর্ভপাত ঘটানো হয়। এতে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে শিশুটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

পরে এই ঘটনায় অভিযুক্তদের আসামি করে কুমারখালী থানায় এজাহার দায়ের করেন ভুক্তভোগীর বাবা। তবে, অজ্ঞাত কারণে অবৈধভাবে গর্ভপাতে সহায়তা করা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই দুই কর্মীকে এজাহারে আসামি করা হয়নি। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই এভাবেই অবৈধ গর্ভপাতে সহায়তা করে অসৎভাবে টাকা উপার্জন করছেন ওই দুই নারী স্বাস্থ্যকর্মী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সামনে ওই শিশুর গর্ভপাতের ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স শেফালী বেগম ও পরিবার কল্যাণ সহকারী আরেনা খাতুন। তবে, তারা এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন সাংবাদিকদের।

খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক প্রেমাংশু বিশ্বাস বলেন, “ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার সাথে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়ার স্টাফ নার্স শেফালী বেগম জড়িত থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, “সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই স্বাস্থ্যকর্মী যদি এই ঘটনার সাথে সত্যিই জড়িত থাকেন তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, “অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এই ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় নেওয়া হবে।”

ঢাকা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন