দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের চিত্র স্বচক্ষে দেখে এসে তার বর্ণনা দিলেন সচেতন নাগরিক সমাজের ক’জন প্রতিনিধি। রবিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেদের সফরের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে তাঁরা বলেন, ব্যাপক সহিংসতা ও নারী নির্যাতনের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনের মধ্যে যে ভয়, অপমানবোধ ও আত্মধিক্কার জন্মেছে, তা দূর করে নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস ফেরানো সম্ভব না হলে ব্যাপকহারে দেশত্যাগ অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি শেষ পর্যন্ত এমনটি যদি ঘটে তবে তা আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা, সমাজ ব্যবস্থা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে মারাত্মক বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা তারেক আলী। এছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড. আনিসুজ্জামান, পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও অজয় রায়। অন্যান্যদের মধ্যে উপিস্থিত ছিলেন, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন,খুশী কবির, মেজবাহ কামাল, ড. মোশারফ হোসেন প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে একাধিক প্রতিনিধি দল দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন সফরের মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্যে সংগ্রহ করেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে যে, এবারের নির্বাচনের পর থেকেই দেশজুড়ে পরাজিত রাজনৈতিক দলের লোকজন ও সংখ্যালঘু হিন্দু সমাজের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। একটি বিশেষ দলকে ভোট দেয়ার অপরাধে নানা স্থানে হিন্দুদের ভিটামাটি ছাড়া করে তাদের সম্পত্তি গ্রাসের পাঁয়তারা চলছে। এছাড়া চলছে চাঁদাবাজি, লুটপাট, বাড়িঘর ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, সশস্ত্র হামলা, হত্যা এবং নারী নির্যাতন। ভোলায় এ অবস্থা শুরু হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা হাতে নেয়ার পর পর। দেশব্যাপী তা লাগামহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ে নির্বাচনের পর থেকে। অত্যাচারিতরা মনে করেন যে, সাধারণ মুসলমানরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। এসব করছে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট পূর্বকথিত সন্ত্রাসীরা। এ রকম সংকটমুহূর্তে কোন রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসেনি এবং প্রতিবেশীরা অনেক সময় আক্রান্তদের আশ্রয় দিলেও সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধের সাহস পায়নি। প্রশাসনও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরং আইনী ব্যবস্থা এসময় ছিল নিশ্চল। এসব ব্যাপারে নবগঠিত সরকারের পক্ষ থেকে বার বার আশ্বস্ত করা হলেও গ্রামঞ্চলে সন্ত্রাসীদের শাসনে রাখা যাচ্ছে না এবং পরিস্থিতির মোকাবেলায় নিম্ন পর্যায়ের প্রশাসন উদ্যেগী হচ্ছে না। তাঁরা বলেন, সরকারের কোন কোন পর্যায় থেকে এসব ঘটনাকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলা হলেও বাস্তবে তা নয়। হয় তাঁরা সব জেনেও না জানার ভান করছে, অথবা প্রকৃত সত্য তাঁদের জানতে দেয়া হচ্ছে না। তাঁরা বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপির উচিত নির্যাতিতদের কাছে অবস্থান করা। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে কোথাও নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কাছাকাছি তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অবিলম্বে এসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের বিচার করা, নির্যাতিতদের তাদের বাসস্থানে বহাল করা এং তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
দৈনিক জনকণ্ঠ, ২১ অক্টোবর ২০০১