সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত মৌন মিছিলপরবর্তী এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা সন্ত্রাস ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেছেন। দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন, হুমকি, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের প্রতিবাদে রবিবার বিকালে এ মৌন মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি অফিস প্রাঙ্গন থেকে আইনজীবীদের একটি বিশাল মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাব প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে ব্যারিস্টার শওকত আলী খানের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর বর্বরোচিত হামলা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। নির্বাচনের পূর্ব থেকেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে। তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদের উস্কানিমূলক বির্তকিত বক্তব্যের ফলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেছে। বক্তারা তাদের বিচার দাবি করেন। বক্তারা বলেন, নির্বাচনের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের অর্থ তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া, তাদের এ দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ‘৭১-এর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নির্যাতনকে হার মানিয়েছে। সরকারপ্রধান, স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রীর উষ্কানি ও নেতিবাচক বক্তব্যের জন্য এসব হচ্ছে। একদিকে নারী ধর্ষণ ও লুটতরাজের রাজত্ব কায়েম হয়েছে, অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্ষক ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্যাতনের খবরের সত্যতা তলিয়ে দেখতে উল্কার মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন। ধর্ষক ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে ছুটে বেড়ালে তিনি সংখ্যালঘু নির্যাতন দেখবেন কিভাবে? তিনি বলেছেন , পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যম অতিরঞ্জিত করে এসব গুজব ছড়াচ্ছে। তাঁর এ বক্তব্যে সন্ত্রাস ও নির্যাতন-নিপীড়ন বেড়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পূর্ন ব্যর্থ। তাই সন্ত্রাসী ও ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করা হয়। বক্তারা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ জাতিহত্যার পর্যায়ে পড়ে। দেশের সকল মানবাধিকার সংগঠনসহ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনগণকে মানবতাবিরোধী এ জঘন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহবান জানানো হয়। সমাবেশে মত প্রকাশ করা হয়, এই ভয়াবহ সন্ত্রাস দেশে একটি ফাসিবাদী শক্তির জন্ম দিয়েছে। এ থেকে সন্ত্রাসে মদদদানকারী ক্ষমতাসীনরা একদিন নিজেরাই রেহাই পাবে না। তাই দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহবান জানানো হয়। এই সন্ত্রাসের মূল কারণ উদঘাটনের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত, অপরাধীদের শাস্তি দান ও নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত আইনজীবি সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট সাহারা খাতুন, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এডভোকেট সালাম তালুকদার, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, এডভোকেট ওজায়ের ফারুক, এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, এডভোকেট আবদুল হালিম, এডভোকেট আবু সাঈদ, এডভোকেট আব্দুল মান্নান পাঠান, এডভোকেট শামসুল হক টুকু, এডভোকেট সৈয়দ আহমেদ প্রমুখ। আগামী ২৮ অক্টোবর সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি আন্দোলন আয়োজিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের গণসমাবেশে সকলকে অংশগ্রহণ করার আহবান জানানো হয়।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১৬ অক্টোবর ২০০১