(এমপি), যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. শাহীন চাকলাদার কেশবপুর থানার ওসিকে থানা ভবনে বোমা মেরে এক পরিবেশবাদী আইনজীবীকে ফাঁসানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

 

শাহীন চাকলাদার ও ওসি মো. জসিম উদ্দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সারা দেশে এনিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঢাকা ট্রিবিউন সম্প্রতি ক্লিপটির একটি অনুলিপিও পেয়েছে।

সূত্র জানায়, কেশবপুরে একটি ইটভাটা নিয়ে অভিযোগ দায়েরের জন্য আইনজীবী সাইফুল্লাহকে “শিক্ষা দেয়ার” জন্য শাহীন চাকলাদার ওসি জসিমকে পরামর্শ দেন।

সাদা পোশাকের পুলিশ অফিসার দিয়ে যেকোনও ইট ভাটাতে বোমা মেরে সাইফুল্লাহকে সে ঘটনায় “ডাকাতির উদ্দেশ্যে বোমা মারার অভিযোগে” অভিযুক্ত করার পরামর্শ দেন শাহীন চাকলাদার।

আওয়ামী লীগের এই সাংসদকে সেই অডিও ক্লিপটিতে ইটভাটা সম্পর্কিত হাইকোর্টের আদেশকে বিদ্রূপ করতেও শোনা গিয়েছে।

সূত্রমতে, শাহীন ও ওসি জসিমের ওই ফোনালাপ কয়েক সপ্তাহ আগে হয়েছিল।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি জসিম বলেন, “আমার মনে নেই। আপনারা [সাংবাদিকরা] বার বার একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন কেন? আমি প্রতিদিনই এমপি’র সাথে অনেক বিষয়ে কথা বলি। আমার সব কিছুই মনে নেই।”

শাহীন চাকলাদার ১৪ই জুলাই, ২০২০ সালে যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

যাকে ফাঁসাতে এতো আয়োজন, সেই আইনজীবী সাইফুল্লাহ  বলেন, “কেশবপুর উপজেলার উত্তর সাতবাড়িয়া গ্রামের মেসার্স সুপার ব্রিকস নামের ইটভাটাটি আমার বাড়ির পাশে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বলে আমি গ্রামবাসীকে সংগঠিত করে আন্দোলন শুরু করি। পরবর্তীতে এ আন্দোলনের খবর স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাতে প্রকাশ হয়। পত্রিকার সংবাদ দেখে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা) নামে একটি এনজিও জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে। এরপর বেলা কর্তৃপক্ষ আমাকে নেটওয়ার্ক মেম্বার নির্বাচিত করে। এবং আমি তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে যোগ দেই।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১২ ডিসেম্বর কেশবপুর থানার ওসি আমাকে থানায় ডাকেন। এরপর বলেন, আপনি যে ভাটার বিপক্ষে কাজ করতেছেন এটাতো এমপি মহোদয় চান না। তো আপনি ওখান থেকে সরে আসেন। নইলে আপনার ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি বলি, স্যার আমি তো ভাটার পিছনে নই। আসলে আমি ওই বেলার নেটওয়ার্কিং মেম্বার হওয়াতে এগুলো কাজ করতে হয়। পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে হয়। তখন ওসি স্যার আমাকে বলেন- আগেতো আপনার নিজের জীবন, আপনি এগুলোর মধ্যে জড়াচ্ছেন কেন? আপনি ওখান থেকে সরে আসেন, তা না হলে কিন্তু চাকলাদার সাহেব আমারে দিয়ে হোক বা অন্য থানার ওসি দিয়ে হোক আপনাকে ফাঁসিয়ে দেবে।”

সাইফুল্লাহ বলেন, “আমি থানাতে ছিলাম। রাত ১০টার দিকে আমি রেজোয়ানা আপাকে (বেলার প্রধান) স্থানীয় সাংবাদিকদের ফোন করে বিষয়টি জানাই। আপা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করলে ওসি সাহেব আমাকে রাতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল। এই পর্যন্তই আমি জানি। এখন অডিও ক্লিপের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে, সেটি আমি নিজে শুনিনি।”

ঢাকা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন