বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার এক গ্রামে সংখ্যালঘু আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশ কিছু পরিবারকে সামাজিকভাবে পুরোপুরি এক ঘরে করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
সামাজিকভাবে বয়কট করার ফলে তারা সেখানে চলাফেরা করতে পারছেন না, দোকানপাট থেকে কিছু কিনতে পারছেন না। এমনকি জমিতে সেচের পানি পর্যন্ত দিতে পারছেন না। তারা এক ধরণের নিরাপত্তাহীন পরিবেশের মধ্যে বাস করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন।
এই আহমদদিয়া পরিবারগুলো থাকেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মহেষাখোলা গ্রামে। ১৯৯২ সাল থেকে গ্রামটির কিছু মানুষ আহমদিয়া সম্প্রদায়ে যোগ দিতে শুরু করেন। গ্রামে সব মিলিয়ে এখন ১১টি আহমদদিয়া পরিবার আছে। সম্প্রতি সেখানে তারা একটি মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নিলে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তার বিরোধিতা করে।
এরপর নানা ঘটনার পর থানায় সমঝোতা বৈঠকও হয়ে। এরপরেও এলাকার একদল ব্যক্তি সেখানে আহমদিয়াদের বয়কটের ঘোষণা দেয় বলে অভিযোগ করছেন ওই এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা খালেদ হোসেন সবুজ।
তিনি বলেন, “২১শে ফেব্রুয়ারি তারা ঢাকঢোল পিটিয়ে বয়কটের ঘোষণা দিলো। বললো ওদের কাছ থেকে কিছু বিক্রি করা যাবেনা, ওদের কাছ থেকে কিছু কেনা যাবেনা। ওদের ফসলে পানি দিবেন না।”
গ্রামটিতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের যারা বসবাস করছেন তারা বলছেন প্রকাশ্যে বয়কটের ঘোষণা দেয়ায় নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়েই সংকটে পড়েছেন তারা।
বিবিসিকে একজন বলেন, “এখন আমার পানি বন্ধ, দোকান বন্ধ, ঢাকঢোল পিটিয়ে বলছে এ গ্রামে ওদের কাছে কিছু বিক্রি করা যাবেনা, ক্ষেতে খামারে পানি দেয়া যাবেনা। দু রাত বাড়ির বাইরে ছিলাম।”
একজন নারী বলছেন রাস্তাঘাটে চলতে দিচ্ছেনা, গাড়ির সমস্যা, চিকিৎসার সমস্যা। শাশুড়ির বাড়িতেও থাকতে পারছিনা মায়ের কাছেও যেতে পারছিনা।”
আরেকজন বলেন ,”সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত।”
আর মাতব্বর শ্রেণীর যাদের বিরুদ্ধে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ তৎপরতায় নেতৃত্ব দেবার অভিযোগ উঠেছে তাদের একজন আনিসুর রহমান।
আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে তাদের এমন পদক্ষেপের কারণ কি ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার জমিতে আমি হাঁটতে দিবোনা এতে কারও বাধা দেয়ার অধিকার নেই তো। সবাই মিলে আমরা একমত হয়েছি যে তারা কারও ব্যক্তিগত জায়গায় চলতে পারবেনা। সরকারি রাস্তায় বাধা নেই। কোন দোকানদার যদি মাল না বেচে তাহলে কার কি করার আছে।”
আহমদিয়া বিরোধী এসব তৎপরতা কিংবা তাদের একঘরে করে রাখার পেছনে ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করছেন এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিকই আছে।
স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলছেন দু দফা সমঝোতা বৈঠকের পরও অভিযোগ আসছে।
তিনি বলেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কারণ তার মতে এ বিষয়টি সামাজিক সমস্যা তাই এর আইনগত সমাধানের সুযোগ কম।
তবে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন স্থানীয় প্রশাসন শক্ত ব্যবস্থা নিলেই ওই এলাকায় এ সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে উস্কানি ও হুমকি দেয়ার মতো ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে।