আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সন্ত্রাসীরা গতকাল কেরানীগঞ্জের কাঁচা রুহিতপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বাড়ি দখল করে নিয়েছে। সাতটি পরিবারের বসতঘরে ঝুলিয়ে দিয়েছে তালা। সন্ত্রাসীদের ভয়ে ওই সাতটি পরিবার এখন ঘরছাড়া। জানা গেছে, ইস্পাহানি কলেজের সাবেক ভিপি সেলিম আহমেদ ও সাবেক জিএস ফারুকের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী গোপাল চন্দ্রের বাড়ির ৫৪ শতাংশ জমি দখল করে সাতটি বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বাড়ির মালিক গোপাল চন্দ্র সরকার জানান, এই সম্পত্তির ব্যাপারে আপত্তিপূর্ব অবস্থা বজায় রাখার জন্য আদালতের নির্দেশ রয়েছে। সেলিম ও ফারুক জাল দলিল করে বাড়ি দখল করেছে। অন্যদিকে সেলিম ও ফারুকের পক্ষে বলা হচ্ছে, তারা আদালতের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে বাড়িটি দখল করেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, গোপাল চন্দ্রের পক্ষে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। কিন্তু পুলিশ বলেছে গোপালচন্দ্র থানায় লিখিত কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। গোপাল চন্দ্র সরকারের পৈত্রিক ভিটা এই বাড়ি। আড়াইশ’ বছর ধরে তাদের পরিবার এখানে বাস করে আসছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে এলাকার জালিয়াত চক্রে নেতা হিসাবে পরিচিত সেলিম-ফারুকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা বাড়িটি দখল করে নেয়। তারা বাড়ির অনেক গাছ কেটে ফেলে এবং বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে চারদিকে বেড়া দেয়। সেলিমের লোকজন বাড়ির সাতটি পরিবারের লোকজনকে গালিগালাজ করে এবং ধানের গোডাউন ও দর্জি কারখানা দখল করে তালা লাগিয়ে দেয়। ঢাকার চতুর্থ সাবজজ আদালত ৫ মে ১৯৯৮ সালে গোপাল চন্দ্র সরকারের বাড়ির জায়গার ওপর ১৪৪ ধারা জারি করেন। আদালত এই সম্পত্তি দখলজনিত প্রশ্নে লিখিত আপত্তিপূর্ববর্তি অবস্থা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষের প্রতি আদেশ দিয়ে উভয় পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। সাবেক চেয়ারম্যানদের বক্তব্য রুহিতপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহিম ও আবদুল জলিল মাস্টার জানান, সেলিম ও ফারুক আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিরীহ গোপাল চন্দ্রের বাড়ি দখল করেছে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাদের আদালতের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার আহ্বান জানাই। তারা আমাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে জোরপূর্বক গোপাল চন্দ্রের বাড়ি দখল করে। ফারুক ও সেলিমের পক্ষে বক্তব্য সেলিম ও ফারুকের একজন সহযোগী বলে, তারা আদালতের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে জমি দখল করেছে। অপরদিকে গোপাল চন্দ্র বলেন, সেলিম জাল দলিল করে তাদের সম্পত্তি দখল করেছে। গোপাল চন্দ্রের ছেলে থানা বিএনপি সভাপতি হাজী নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে সমাধান করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রুহিতপুর গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এদিকে কেরানীগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার এসআই আলী আহম্মেদ জানান, গোপাল চন্দ্র সরকার মামলা দায়েরের জন্য থানায় এলেও শেষ পর্যন্ত মামলা দায়ের করেননি। পরে আসার কথা বলে তিনি চলে যান। মামলা করতে চাইলে পুলিশ যে কোন সময় তার মামলা গ্রহণ করবে। ডিউটি অফিসার জানান সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে বলে তিনি গোপাল চন্দ্র সরকারের কাছে শুনেছেন। ওসি মোবারক আলী খান জানান, তিনি দখল-বেদখল, হামলা, লুটপাটের কোন অভিযোগ পাননি। গোপাল চন্দ্রের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসআই শহীদের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
যুগান্তর, ১৯ জানুয়ারি ২০০২