টাঙ্গাইলের সখীপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোচ সম্প্রদায়ের নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুন) সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ ও ‘বাংলা আদিবাসী যুব ফোরাম’ নামের দুটি সংগঠনের ব্যানারে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই ও সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে’র সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ।
সমাবেশে উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পর্যটন কেন্দ্রের নামে সিন্ধুকছড়িতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিবাসীদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ বন্ধ করা, মধুপুরে গারো অধিবাসীদের প্রাচীন মাংরুদাম (শ্মশান)-এর ওপর সীমানা প্রাচীর ও গেস্ট হাউজ নির্মাণ বন্ধ করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করা, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করা ও তাদের নামে হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা বন মামলা প্রত্যাহার করা।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “১২ জুন ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। সেই একই তারিখে ২০২১ সালে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একজনের বাড়ি-ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শুধু তার বাড়ি-ঘরই নয় তার জমিও দখল করে নেওয়া হয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলের নামে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে দফায় দফায় আদিবাসীদের ভূমি দখল করা হচ্ছে। চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল মানুষ চায়নি৷ শুধু নির্মাণের রাজনীতির নামে এসব ভূমি দখল করা হচ্ছে। প্রতি মাসেই আদিবাসী নারীদের ধর্ষণের ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। আমি এই নিপীড়ন ও দখলের রাজনীতির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই সব ঘটনাকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পার পাওয়া যাবে না। এসব আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পায়তারা, তাদেরকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র।”
আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াং ম্রু বলেন, “যেখানে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করছেন, সেখানে আমাদের আদিবাসীরা ভূমি লুণ্ঠনের শিকার হচ্ছেন, তাদের ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গত ১০ জুন কোচ নারী ধর্ষণের সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু তারা উন্নয়নের নামে আমাদের উচ্ছেদ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের চিড়িয়াখানার পশু-পাখিদের মতো দেখার জন্য তারা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মারা যাওয়ার পর যে শ্মশান সেখান থেকেও আমাদের উচ্ছেদের পায়তারা চলছে। আদিবাসীরা এই দেশের নাগরিক। আর দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সম্মানের সাথে এই রাষ্ট্রে বাস করার অধিকার রয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হলে আমরা কঠোর হবো।”
এসময় সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুবাইয়াত ফেরদৌস। এছাড়াও আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও আদিবাসী যুব ফোরামের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ ঘুরে আবার শাহবাগ গিয়ে শেষ করেন।
মিছিলে উপস্থিতরা ‘আমার বোন লাঞ্ছিত কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভূমি বেদখল কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন।