গাইবান্ধা শহরের ফকিরপাড়া হযরত শাহ বাঙ্গাল (র:) হাফিজিয়া কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল্লাহ ওই মাদ্রাসার এক ছাত্রকে বলাৎকার করেছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো তার বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হয়েছে। ওই ছাত্রের পিতা আবুল কালাম আজাদ ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দোষী ব্যক্তির শাস্তি ও প্রতিকার দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তার ছেলে জোনায়েদ আনাম ওই মাদ্রাসার কিতাব বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় গত বছরের ১২ আগস্ট রাতের বেলায় শিক্ষক আব্দুল্লাহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে বলাৎকার করে। পরে নির্যাতিত ছাত্র মাদ্রাসার সুপার ও কমিটির কয়েকজন সদস্যের কাছে নির্যাতক শিক্ষক আব্দুল্লাহর বিচার দাবি করে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও বিচার না পেয়ে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জুনায়েদ আনামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তাকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জোর করে একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে নির্যাতক শিক্ষকের নির্দেশে তার বন্ধু মাওলানা ইলিয়াছ জুনায়েদ আনামকে শারীরিক নির্যাতন করে। ওই ছাত্রের বাম কানে থাপ্পর মারার কারণে সে গুরুতর আহত হয় ও সে কানে কম শুনতে পায়। এখনও তার চিকিৎসা চলছে। পরবর্তীতে এক শালিসে মাওলানা ইলিয়াস তাকে থাপ্পর মারার কথা স্বীকার করে। সেসময় কয়েকজন ছাত্র বৈঠকে ঘটনার সাক্ষী দিলে মাদ্রাসার সুপার জোবায়ের আহম্মেদ তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে জঙ্গি বানিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়।
এদিকে বলাৎকারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিথ্যা, ভিত্তিহীন বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জোনায়েদ আনামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করা হয় এবং তার কাছে গোপনে জামাতি টুপি জঙ্গিবাদী বই পুস্তক রেখে তাকে জঙ্গি প্রমাণের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, বলাৎকারের ঘটনায় মাদ্রাসা সুপারের উপস্থিতিতে স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে একটি শালিস বৈঠক হয়। সে বৈঠকে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইকবাল অনুপস্থিত থাকলেও তাকে চাঁদাবাজির মামলার সাক্ষী করা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মাদ্রাসার সুপার জোবায়ের আহম্মেদের বিরুদ্ধেও একাধিক ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ রয়েছে। এব্যাপারে জিল্লুর রহমান আহবায়ক এবং ইমদাদুল হক, নজরুল ইসলাম, মনোয়ারুল হক, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল ওয়াহেদ ও ওমর ফারুক সেলুকে সদস্য করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে সুষ্ঠ তদন্ত করে বলাৎকারের অভিযোগের সত্যতা পায় এবং কুরআন সুন্নাহর আলোকে বিধি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির কাছে প্রদত্ত তদন্ত রিপোটে সুপারিশ করে। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, তার ছেলের থানায় দেয়া অভিযোগ বলাৎকারকারী শিক্ষকসহ সুপার জোবায়ের আহম্মেদ সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে ভুল বুঝিয়ে মামলা নিতে নিরুৎসাহিত করে। এজন্য তিনি বলাৎকারকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ, শিক্ষক জয়নাল আবেদীন, সুপার জোবায়ের আহম্মেদ এবং তাদের সহযোগী ইলিয়াসের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিচার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানান।