কুমিল্লার ঘটনার পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে, জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা, মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।

সংঘর্ষের পর হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনজনের লাশ আসার কথা জানিয়েছেন কর্তব্যরত এক চিকিৎসক। তবে সংঘর্ষে কারও নিহত হওয়ার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।

১৩ অক্টোবর বুধবার সকালে কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

দুপুর নাগাদ কুমিল্লায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও পাশের জেলা চাঁদপুরে সন্ধ্যার পর মন্দিরে হামলা হয় বলে হাজীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রুহিদাস বণিক জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ৮টার পর উপজেলার মনিনাগ এলাকা থেকে একটি মিছিল এসে মন্দিরে (লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া) হামলা চালায়।”

বাজারের ওই মিন্দর ছাড়াও আরও কয়েকটি স্থানে মন্দিরে হামলা হয়েছে বলেও জানান রুহিদাস।

হামলাকারীদের পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় পুলিশ গুলি ছোড়ে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, “আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এর মধ্যেই রাত ৮টার দিকে হতাহত কয়েকজনকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুলতান মাহমুদ বলেন, “তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। মৃতদেহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।”

ওই তিনজন হলেন- হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল এলাকার আল আমিন রাজু (১৮), রান্ধুনিমুড়ার ইয়াসিন হোসেন হৃদয় (১৪) ও হাজীগঞ্জ বিজনেস পার্কের শ্রমিক বাবলু (২৮)।

হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসএম শোয়েব আহমেদ চিশতী বলেন, “৮-১০ জন গুরুতর আহত অবস্থায় এসেছে। তাদের কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড (জেলা হাসপাতালে) করা হয়েছে।”

তিনজনের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগে মারা গেছে নাকি পরে, সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি চিকিৎসকরা।

সংঘর্ষে নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে না পারলেও ১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জের ওসি হারুন।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, “মৃত্যুর কথা শুনেছি। তবে কয়জন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও।”

কতটি মন্দির আক্রান্ত হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তা-ও এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।”

পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি

সহিংস পরিস্থিতিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

একই সঙ্গে বুধবার রাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানিয়েছেন।

হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ রাতে বলেন, “হাজীগঞ্জ বাজারের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মন্তব্য করুন