১৫ দিন পার হয়ে গেলেও চৌগাছা উপজেলার মালিগাতি গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর পুলিশ এবং সন্ত্রাসীদের চালানো বর্বরতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে নির্যাতিতদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনার পর গোটা মালিগাতি গ্রামের মানুষের মাঝে নতুন করে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। মুখ ফুটে কেউ স্বীকার না করলেও পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেকেই জমিভিটা বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। আর এমনটিই নাকি চাচ্ছেন ঐ এলাকার ক্ষমতাসীন দলের নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রু তার জের ধরে গত ২৬ জানুয়ারি পার্শ্ববর্তী গ্রামের বিএনপি কর্মী আবু বকর তার দলবল নিয়ে মালিগাতি গ্রামের শান্তিরাম মণ্ডলের জমি দখল করে নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে শান্তিরামের ছেলেরা বাধা দেয়। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে মারামারি বেধে গেলে গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী সলুয়া পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। কিন্তু পুলিশ এসে কোনো বাছবিচার না করেই জমি দখলকারীদের পক্ষাবলম্বন করে এবং গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে ভয়ে পুরুষেরা আত্মগোপন করলে পুলিশ বাড়ির মহিলাদেরও প্রহার করে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, শেষ পর্যন্ত মহিলারা ৪ পুলিশকে ধরে একটি ঘরে আটকিয়ে রাখে। তারা কৈফিয়ত চায় কোনো কারণ ছাড়াই তাদের ওপর হামলা করা হলো কেন? এদিকে ৪ পুলিশকে আটকে রাখার খবর পেয়ে ফাঁড়ি থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সন্ত্রাসীরা। যারা সরকারি দল করে বলেই এলাকার লোকজন জানে। পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা একযোগে গ্রামে প্রবেশ করে নির্বিচারে প্রহার ও গুলিবর্ষণ করে। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। নারী-পুরুষ-শিশু কেউ সন্ত্রাসী ও পুলিশের নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি। এ ঘটনার পর থেকেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ঐ গ্রামটিতে সন্ত্রাসী ও পুলিশ আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ত্রাসী ও পুলিশি বর্বরতার পর গ্রামবাসী থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি। বরং পুলিশ উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যে কারণে গ্রামের সাধারণ ঐ সমস্ত মানুষ ভয়ে বাড়ি থাকতে পারছে না। আবার তারা সন্ত্রাসীদের ভয়ে বউ-ঝি ফেলে আত্মগোপনও করতে পারছে না। এ অবস্থায় এক প্রকার উভয় সংকটের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে তারা। এদিকে অভিযোগ উঠেছে একটি মহল চাচ্ছে গ্রামটিতে বসবাসরত হিন্দুরা এলাকা ছেড়ে চলে যাক। সে লক্ষ্যেই তারা বিভিন্নভাবে তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। কারো কারো জমিও তারা লিখে নিয়েছে। নির্যাতন সহ্য করেও তারা ভয়ে এ সমস্ত ঘটনা প্রকাশ করতে পারছে না। চৌগাছার মালিগাতিতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন সন্ত্রাসীরা বহাল তবিয়তে, পুলিশ উল্টো নির্যাতিতদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে যে কারণে অনেকে আবাসভূমি বিক্রি করে চলে যাওয়ারও চিন্তা-ভাবনা করছে। ঐ সমস্ত হিন্দু চলে গেলে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি হয় জবর দখল অথবা নামমাত্র মূল্যে কিনে নেবে। এ সমস্ত অভিযোগের ব্যাপারে মালিগাতি গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়নি। তবে তারা যে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে আতঙ্কিত তা স্বীকার করেন। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
ভোরের কাগজ, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০২