জামালপুর সদর উপজেলায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের পর তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সকালে শাওন (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাওন সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে।
গৃহবধূ ১৮ নভেম্বর (সোমবার) রাত সাড়ে নয়টার দিকে জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বসে বর্বরোচিত ওই ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বেশকিছু ধরে প্রতিবেশী শাওন (২৫), ছানোয়ার হোসেন (৩৫) ও রফিজ উদ্দিন (৪০) তাঁকে অশোভন প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। তিনি এতে রাজি না হয়ে স্বামী ও শ্বশুরকে ওই তিনজনের বিষয়টি বলে দেন। এতে তাঁরা তিনজন ক্ষুব্ধ হন। ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) রাত ৮টার দিকে এই তিনজন তাঁকে জোর তরে ঘরের সামনে থেকে তাকে ধরে নিয়ে ছানোয়ারের বাড়ির পেছনে নিয়ে ধর্ষণ করে এবং গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। খবর পেয়ে তাঁর স্বামী তাঁকে ওই তিন যুবকের কাছ থেকে রক্ষা করতে যান। তাঁকে ছেড়ে দিতে ওই তিন যুবককে তাঁর স্বামী অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই যুবকেরা তাঁর স্বামীকে মারধর করে সেখান থেকে নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর তাঁরা তাঁকে বলেন, ‘তোর স্বামী আত্মহত্যা করেছে।’
গৃহবধূ আরও জানান, ১৬ নভেম্বর (শনিবার) সকালে পুলিশের আসার খবর পেয়ে তাঁরা আমার বাঁধন খুলে ছানোয়ারের বাড়ির একটি কক্ষে বন্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে আমাকে উদ্ধার করে ও আমার স্বামীর লাশ নিয়ে যায়।’
গৃহবধূ বলেন, ‘আমাকে গণধর্ষণ ও ব্যাপক মারধর করার ঘটনা আমি পুলিশকে জানাই। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুতে আমি পুরো হতভম্ব ছিলাম। পরে ওই দিন পুলিশ স্বামীর লাশের সঙ্গে আমাকেও নিয়ে যায়। কিন্তু তাঁরা আমার কোনো অভিযোগ গ্রহণ করেননি। আমার স্বামীকে হত্যা ও আমাকে গণধর্ষণের কোনো গুরুত্বই দেননি পুলিশের এসআই মো. গোলজার আলম। পরে বাধ্য হয়ে এই প্রেসক্লাবে আসি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
প্রেসক্লাবে সাংবাদিকেরা ওই গৃহবধূকে গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। ওই গৃহবধূ জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। পরে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছানোয়ার, শাওন ও রফিজের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত দুজনকে আসামি করে গণধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে একটি মামলা হয়।
জামালপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান জানান, ওই গৃহবধূর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে না-কি তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে। ১৮ নভেম্বর (সোমবার) রাতে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সকালে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাওনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।