ঝিনাইদহে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এক পুলিশের হাতে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও মিরাজ জামান রাজ নামের দুই সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সময় পুলিশ তাদের ব্যবহার করা মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। ৪ জুলাই রোববার দুপুর দেড়টার সময় ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই মোড়ে ঘটনাটি ঘটে।

 

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ আজকের পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টাল জাগো নিউজের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি এবং সাপ্তাহিক দুরন্ত প্রকাশের সম্পাদক মিরাজ জামান রাজ।

সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জানান, চলমান লকডাউনে বাস্তবায়নে পুলিশের সাথে স্কাউট সদস্যরা কাজ করছেন। রোববার দুপুরে স্কাউটদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন করার জন্য পাগলা কানাই মোড়ে যাই। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের অনুমতি নিয়ে এক স্কাউট সদস্যের ভিডিও বক্তব্য নেয়া শুরু করি।

‌‘এসময় খানজাহান আলী নামে এক কনস্টেবল হঠাৎ উপস্থিত হয়ে বলেন পুলিশের কোনো ভিডিও নেয়া যাবে না। তখন পুলিশকে জানিয়েছি আমরা তো আপনাদের বক্তব্য বা ভিডিও নিচ্ছি না, স্কাউট সদস্যদের বক্তব্য নিচ্ছি। এ কথা বলার পরই আমার হাতে থাকা ফোনটি কেড়ে নেন। এসময় আমার সাথে থাকা অপর সাংবাদিকের ফোনও কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করে দেন।’

সাংবাদিক মিরাজ জামান রাজ বলেন, ‘পাগলা কানাই মোড়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ কনস্টেবল খানজাহান আলী হঠাৎ আমাদের হাতের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এরপর বলেন, ‘আপনারা কীসের সাংবাদিক!’ প্রেসক্লাবের সদস্য বললে তিনি বলেন, ‘কীসের প্রেসক্লাব! যা পারেন করেন দেখি কী করতে পারেন।’

ঘটনার পরপরই বিষয়টি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতিকে অবহিত করেন দুই সাংবাদিক। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন দুই সাংবাদিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার (এসপি) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঘটে। জাগো নিউজের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানান এবং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকও ফোন করেছিলেন। ওই সাংবাদিক ছবি তুলছিলেন আর কনস্টেবল মনে করছেন জিজ্ঞেস না করেই ছবি তোলা হচ্ছে। এ সময় কনস্টেবল সাংবাদিকের মোবাইলটি কেড়ে নেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর এবং প্রেসক্লাবের সিনিয়ররা আসার পর কনস্টেবল মোবাইলটি ফেরত দেন।’

কনস্টেবলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে এসপি বলেন, ‘কনস্টেবলকে ডাকা হয়েছে। তার বক্তব্য শুনব এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকলে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এই সংকটের মুহূর্তে মাঠে আমরা পুলিশ-সাংবাদিক একসঙ্গে কাজ করি, সবাই খুব প্রেসারে আছেন।’

তিনি বলেন, ‘ওই কনস্টেবল থানার নন, তিনি পুলিশ লাইনের ফোর্স। করোনার কারণে তাকে মাঠে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি মাত্রই পুলিশে নিয়োগ পেয়েছেন। থানা পুলিশের যারা মাঠে কাজ করেন, তারা সাংবাদিকদের বিষয়টি বুঝতে পারেন।’

এদিকে, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক ঝিনুক পত্রিকার সম্পাদক মো. ইসলাম উদ্দিন কনস্টেবল খানজাহান আলীর হাতে দুই সাংবাদিকের হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন।

ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান টিপু বলেছেন, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও মিরাজ জামান রাজ কর্মরত অবস্থায় পুলিশ সদস্য কর্তৃক যে হয়রানির শিকার হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমি। ঘটনাটি জানা মাত্রই আমি পুলিশ সুপারকে (এসপি) অবহিত করি এবং এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কনস্টেবল খানজাহান আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।

বিডি জার্নাল

মন্তব্য করুন