নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বরিশালের উজিরপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় ওই নারী মিতু অধিকারীকে রিমান্ডে নেয়া হয়।

ইতোমধ্যে আদালতের নির্দেশে ওই নারীর শারীরিক পরীক্ষা করে জখম, নির‌্যাতনের চিহ্ন ও নির‌্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক থেকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

মেডিকেল রিপোর্টের পর বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির পক্ষ থেকে সার্কেল এসপি কাজী মো. সোহাইবের নেতৃত্বে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা আগামী ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জান।

এদিকে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে অভিযুক্তদের কঠোর বিচার দাবি করেছেন আসামির স্বজন, আইনজীবী ও মানবাধিকার নেতারা। তবে আসামির এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

মামলা, থানা পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৭ জুন মৃতের ভাই বরুণ চক্রবর্তী উজিরপুর মডেল থানায় শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। যেখানে মিনতি বিশ্বাস ওরফে মিতু অধিকারীসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়।

ওই মামলার আসামি হিসেবে মিনতি বিশ্বাস ওরফে মিতু অধিকারীকে (৩০) গ্রেফতার করে পুলিশ। থানা পুলিশের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলি আদালত মিতুর ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই মিতুকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তাকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে এর কারণ জানতে চান আদালত। মিতু আদালতের কাছে তাকে শারীরিক নির‌্যাতনের অভিযোগ করেন পুলিশের বিরুদ্ধে।

আদালত একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে তার দেহ পরীক্ষা করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পান। এরপর আদালত আইন অনুযায়ী মিতু অধিকারীর বিবৃতি লিপিবদ্ধ করেন। পাশাপাশি আদালত তার যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং তাকে নির‌্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে।

মিতুর ভাই উত্তম অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বোনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর তাকে রিমান্ডের নামে থানায় নিয়ে শারীরিক এবং যৌন নির‌্যাতন করে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. মাইনুল এবং এক নারী কনস্টেবল। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে এবং চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

মিতুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান বলেন, পুলিশ রিমান্ড চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে সতর্কতার সঙ্গে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ মিনতিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক এবং স্পর্শকাতর স্থানে নির‌্যাতন করেছে। যা যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শামিল।

আবার আদালত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠালে সেখানেও পুলিশ প্রভাব খাটিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে তিনি এ ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

তবে থানায় রিমান্ডের সময় মিতু অধিকারীকে শারীরিক কিংবা যৌন নির‌্যাতন করার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান।

এছাড়া রিমান্ডে নারী আসামিকে নির‌্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।

এদিকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে মিতু অধিকারীকে চিকিৎসা ও অন্যান্য (শারীরিক ও যৌন নির‌্যাতন) বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি শেবাচিম পরিচালকের।

তবে সূত্র জানিয়েছে, মিতু অধিকারীর শরীরে ও যৌন নির‌্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার কারণে রোববার সরকারে পুলিশের পক্ষ থেকে ২ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত ১০টায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মিতু অধিকারীকে। পরে তাকে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। সেখানে কয়েক ঘণ্টার চিকিৎসা প্রদান শেষে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

মন্তব্য করুন