রাজশাহীর তানোর উপজেলার রাতোইল গ্রামে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু ৬০টি পরিবার সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়লেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি সন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বন করে থানা পুলিশ আদিবাসী যুবকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা গ্রহণ করে অনেককে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান করছে। এই ৬০টি পরিবারের তরুণী মেয়েরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাতোইল গ্রামে আদিবাসী কৃষক অনিল মারান্ডীর বাড়ি সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেও পুলিশ কোনো মামলা নেয়নি। জিডি লিপিবদ্ধ করার পর সন্ত্রাসীদের পক্ষে নেওয়া মামলায় বকুল নামের এক আদিবাসী যুবককে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, থানা পুলিশ চলছে বিএনপির এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কথায়। ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পরও ঐ ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের পক্ষে থানা পুলিশকে ব্যবহার করছেন। আদিবাসী পরিবারগুলো অভিযোগ করে জানায়, বেলঘড়িয়া গ্রামের সন্ত্রাসী জলিল, কটা, নবী, মাইনুল, নজরুল মেম্বার, তাহসেন ও সুরমানসহ কয়েক ব্যক্তি রাতোইল গ্রামে এসে আমিন, কোব্বাদ ও রিয়াজের কাছে প্রতিদিন রাতে মদ ও তাড়ি খায়। পরে মাতাল অবস্থায় তারা আদিবাসী তরুণীদের ঘরে ঢুকে যাচ্ছেতাই করে। জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টাও চালায় এরা। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় আদিবাসী পরিবারগুলোর ওপর সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয় এবং বিক্ষুব্ধ আদিবাসী মণ্ডল ও গৃহস্বামীদের হয়রানি করতে থাকে। এরই জের ধরে সন্ত্রাসী জলিল তার দোসরদের নিয়ে ৩০ এপ্রিল রাত ৮টায় আদিবাসী কৃষক অনিলের বাড়ির বেড়া ভেঙে ভিতরে ঢুকে অনিলের স্ত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘটনায় বাধা দেওয়ায় অনিলের ওপর আক্রমণ করা হয়। অনিলের পরিবারের অন্য পুরুষরা সমবেত হয়ে জলিলকে আটকে দেয় এবং বেঁধে রেখে জলিলের ভাইদের খবর দেয়। জলিলের ভাইরা খবর পেয়ে এসে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে জলিলকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরদিন জলিল আদিবাসী পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার ঘোষণা দেয়। এই ঘটনার চারদিন পর রাতে অনিলের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার বিচার চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজের কাছে গেলে তিনি উল্টো সন্ত্রাসীদের পক্ষ নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতঃপর অনিল থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে পুলিশ একটি জিডি করে তাকে থানা থেকে বিদায় করে দেয়। পরদিন সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় এক আদিবাসী যুবককে। এই গ্রামের আদিবাসী পরিবারগুলো বলছে, সন্ত্রাসীদের ভয়ে আর টিকতে পারছি না। কোথায় গেলে জানমালের নিরাপত্তা পাবো এটা জানতে পারলে আমরা সেখানেই যাবো।

ভোরের কাগজ , ১১ মে ২০০২

মন্তব্য করুন