দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে আদিবাসীদের জমিজমা দখল করতে বাধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষের মারধরে পাঁচ আদিবাসী নারী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছেন আদিবাসীরা।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চককাঁঠাল এলাকার প্রায় ৬ বিঘা জমি পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে চাষাবাদ করে আসছিলেন বধিবুড়া মাহাতোর ছেলে রামকৃষ্ণ মাহাতো। পরে রামকৃষ্ণের ছেলে ফটিক মাহাতো ও মন্টু মাহাতো ওই জমিগুলো চাষাবাদ করছিলেন। চলতি বছরে তারা ওই জমিগুলোতে বোরো ধান রোপণ করেছেন। একই সঙ্গে একটি জমিতে কলাবাগান ও একটি জমিতে প্রায় ২০টি আমগাছ রোপণ করেছেন তারা।

সম্প্রতি ওই জমিগুলো ক্রয়সূত্রে মালিকানা দাবি করেন খোদাতপুর কলোনির খালেকের ছেলে মাহাতাব ও আফতাব হোসেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের মা জয়বুন্নেছা এই জমিগুলো বধিবুড়ার কাছ থেকে ১৯৬৩ সালে ক্রয় করেছেন। পরে মাহাতাব ও আফতাব এই জমিগুলো গত বছর ২৮ জুন কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মৃত সলিমউদ্দিনের ছেলে নুর ইসলাম, মৃত নেসার আলীর ছেলে আশরাফ আলী ও বদিউজ্জামান, মৃত বাহার আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাকসহ ১৯ জনের কাছে বিক্রি করে দেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই ১৯ জন তাদের লোকজনসহ আদিবাসীদের জমি দখল করে টিনশেডের ছাউনির ঘর তুলতে থাকে। এ সময় তারা ওই জমিতে রোপণ করা আমগাছ ও কলাগাছ কেটে ফেলে এবং আদিবাসীদের চারটি ঘরের বেড়া (বাঁশের তৈরি প্রাচীর) ভাঙচুর করে। এ সময় ফটিক মাহাতোর স্ত্রী অমলা মাহাতোসহ প্রতিবেশীরা বাধা দিতে গেলে ওই লোকেরা তাদের মারধর করে। এতে অমলা মাহাতো, রাধিকা মাহাতো, শ্যামলী, মিরুবালা ও পদবালা আহত হন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদিবাসীরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

মন্টু মাহাতোর ছেলে জিতেন মাহাতো বলেন, এই ঘটনায় আমার কাকা ফটিক মাহাতো বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগেও আমাদের বিষয়টি নিয়ে ৩ জানুয়ারি সালিশ হয়েছে। পরের দিন আবারও বসার কথা থাকলেও বিবাদীরা আর বসেননি। পরে পুলিশ বিবাদীদের ওই জমিতে আসতে নিষেধ করে। এই হিসেবেই আমরা জমিতে ধান রোপণ করি। বসবাসের চারটি ঘর ছিল সেগুলোর বাঁশের চাটাইয়ের প্রাচীর ভাঙচুর করেছে ওই ১৯ জন।

জিতেন মাহাতোর ভাতিজা প্রশান্ত মাহাতো বলেন, এই ঘটনায় আমাদের পাঁচ নারী আহত হয়েছেন। তাদের নাম জানতে চাইলেও নাম বলতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, তারা চরের লোকজন। বাড়িও ঠিকভাবে জানি না, নামও জানি না। তবে তারা এই জমিগুলো নিজেদের বলে দাবি করছেন। অথচ এই জমিগুলো আমাদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মৃত সলিমউদ্দিনের ছেলে নুর ইসলাম বলেন, আমরা কাগজপত্র দেখেই জমিগুলো কিনেছি।

ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন বলেন, যেহেতু বিষয়টি জমি-সংক্রান্ত এবং আদিবাসী-সংক্রান্ত, তাই গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হবে।

সমকাল

মন্তব্য করুন