ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে কিশোরী তাকমিনকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে প্রথমে ধর্ষণ, পরে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে প্রেমিক মসজিদের মোয়াজ্জিন আশিকুল হক। পরে আশিক ফজরের আজান দেয় এবং ইমামতিও করে।

 

এ হত্যাকাণ্ডে গফরগাঁও থানায় করা মামলার প্রধান আসামি আশিকুলকে ২৯ মার্চ রবিবার দুপুরে পৌর এলাকার মহিলা কলেজ রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর আগে গ্রেপ্তার মাহফুজুর রহমান ২৭ মার্চ শুক্রবার বিকালে জেলা আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইমাম হোসেনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

২৩ মার্চ (সোমবার) রাতে ১৬ বছর বয়সী কিশোরী তাকমিনকে গভীর রাতে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে যায় আশিকুল হক। মুঠোফোনে কিশোরী তাকমিনকে আশিকুল জানায়, আজ রাতেই তারা পালিয়ে যাবে। আশিকুলের ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ি থেকে শতাধিক গজ দূরে একটি জামে মসজিদের কাছে যায় তাকমিন। সেখানে যাওয়ার পরপরেই তাকমিনকে ধর্ষণ করে আশিকুল।

পূর্ব থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল আশিকুলের দুই বন্ধু মাহফুজ ও আরিফ। ধর্ষণ শেষে তাকমীনের হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ওই দুই বন্ধু আর আশিকুল তার মাথার পাগড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে তাকমিনকে। পরে আশিকুল, মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের লাশ মসজিদ সংলগ্ন একটি জামগাছের ডালে তাকমীনের ওড়না দিয়েই ঝুলিয়ে রাখে। আশিকুল ওই মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দেয়ার সময় হলে আশিকুল যথারীতি আজানও দেয়। মুসল্লিরা মসজিদে এলে ফজরের জামাতে আশিকুল ইমামতিও করে। এ সময় মুসল্লিদের সাথে আশিকুলের বন্ধু মাহফুজ ও আরিফ নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষেও স্বাভাবিক ছিল তিন ‘খুনিই’।

লোমহর্ষক এ ঘটনাটি ঘটে ২৩ মার্চ রাতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাড়াভরট গ্রামে। নিহত তাকমিন পাড়াভরট গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুল মতিনের মেয়ে।

পরে ২৪ মার্চ সকালে পুলিশ পাশের আঠারদান জামে মসজিদ সংলগ্ন একটি জাম থেকে ঝুলন্ত তাকমিনের লাশ উদ্ধার করে।

এর আগে ভোরে ফজর নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তাকমীনের লাশ একটি জামগাছের ডালের সঙ্গে ঝুলন্ত দেখতে পান। কিশোরীর লাশটি গাছের ডালের সাথে ওড়না দিয়ে গলা বাঁধা ছিল। তাকমীনের পরিধেয় বস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল। তার পা মাটিতে ছিল। সেখানে একটি মুঠোফোন পড়ে ছিল। মুসল্লিরা লাশটি দেখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েলের মাধ্যমে পুলিশকে অবগত করেন।

তাকমীন হত্যার তিন দিন পর মুঠোফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে এ খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে মাহফুজ ওরফে ইছামুদ্দিন (১৮) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। মাহফুজ উপজেলার রাওনা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র।

গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা প্রধান আসামি আশিকুলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি। পলাতক অপর আসামি গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

ঢাকা টাইমস

মন্তব্য করুন