ধামরাইয়ে গ্রাম্য সালিশে ধর্ষণের বিচার না পাওয়ার অপমানে বিষপাণে আত্মহত্যা করেছেন এক বিধবা নারী (৩৫)। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার সূয়াপুর ইউনিয়নের রৌহারটেক গ্রামে ওই নারীর নিজ বাড়িতে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

 

নিহত শামেলা বেগম (৩৫) ধামরাইয়ের সুয়াপুর ইউনিয়নের রৌহারটেক গ্রামের বাসিন্দা। তার তিনটি সন্তান রয়েছে। অপরদিকে অভিযুক্ত ইমাম আশরাফুলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায় বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসীরা জানান, নিহত শামেলা বেগমের স্বামী দুবছর আগে মারা যায়। তাদের ঘরে তিনটি সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে একই গ্রামের মসজিদের ঈমাম মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বিধবা ওই নারীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে তোলেন লম্পট ইমাম আশরাফুল। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে কিছুদিন ধরেই আশরাফুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন শামেলা বেগম। বুধবার দুপুরে শামেলা মসজিদের ভেতরে গিয়ে এলাকার মুসল্লিদের উপস্থিতিতে তাকে বিয়ে করার জন্য ইমামকে চাপ দিলে সবার সামনে তাকে মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেয় আশরাফুল। পরে ভুক্তভোগী শামেলা বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোহরাবের কাছে বিষয়টি জানিয়ে তাকে ধর্ষণের বিচার চাইলে চেয়ারম্যান তাকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন।

স্থানীয় সেলিম হোসেন বলেন, মসজিদের ইমাম আশরাফুল বিয়ে করার কথা বলে ওই নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মেলামেশা করে আসছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় কয়েক দিন পূর্বে গ্রাম্য মাতবর ও মসজিদের সেক্রেটারি জাহিদ এবং দলিল লেখক শরীফ হোসেন ইমাম আশরাফুল ইসলামের বিচার করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে কোনো বিচার না করে ইমামকে নিজেদের জিম্মায় রেখে দেয়। পরে ওই ইমামের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন, দলিল লেখক শরীফ হোসেন, মাতবর ইউসুফ আলী, পাগলা মিয়াসহ কয়েকজন ইমামকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন। এ খবর শোনার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিধবা শামেলা বেগম তার ঘরের দরজা লাগিয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

জানা যায়, ঘটনাটি ধামাচাপা দিকে ওই মাতবররা পুলিশকে না জানিয়ে গোপনে লাশ দাফন করতে চান। এমন সংবাদ জানতে পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

সূয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার রহিম মিয়া বলেন, মাতবররা যদি সঠিক বিচার করতো তাহলে বিধবা মহিলা আত্মহত্যা করত না। তারা ইমামকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) নুর মোহাম্মদ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। শামেলার মৃত্যুর কারণ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ঘটনা সত্য প্রমাণিত হলে ইমাম আশরাফুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

দেশ রূপান্তর

মন্তব্য করুন