অব্যাহত নির্যাতনের শিকার হয়ে এবং ভয়ে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সহস্রাধিক মানুষ এখন ঘরছাড়া হয়ে যশোরে আশ্রয় নিয়েছে। বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত সংখ্যালঘুরা একই আতঙ্কে সদরে তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। এদিকে নৌকায় ভোট দেওয়ায় পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধ্যবানিয়ারী গ্রামে কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারে গতকাল রোববার হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: যশোর অফিস জানায়, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১০হাজার মানুষ এখন বাড়িঘর ছাড়া। নির্বাচনের পর থেকে কালিগঞ্জ পৌরসভাসহ ১৬টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ পর্যন্ত শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত সংখ্যালঘুরা বরগুনা সদরে তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রতিদিন ছুটে আসছে। নির্বাচনের পর থেকে তাদের নিজ নিজ এলাকায় বিএনপি সমর্থকদের অব্যাহত হামলার শিকার এবং সম্ভাব্য হামলার ভয়ে ভীত হয়ে তারা ছুটে আসছে এখানে। বরগুনা শহর এবং সদর উপজেলার খাজুরতলা, গৌরীচন্না, বদরখালী, কুমড়াখালী গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আশ্রিতের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এসব আশ্রিত সংখ্যালঘু জেলার পাথরঘাটা, আমতলী, বামনা উপজেলা ছাড়াও ঝালকাঠি, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ, বরিশাল, গৌরনদী , কোটালীপাড়া ও মুন্সিগঞ্জ এলাকা থেকে ছুটে এসেছে বলে জানা যায়। তারা বরগুনায় অবস্থানরত তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে বরগুনার স্থানীয় অনেক সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার যারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ছিল তারাও রয়েছে। গতকাল রোববার মির্জাগঞ্জ এলাকা থেকে আসা এরকম একটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি কর্মীদের অব্যাহত হামলা, লুটপাট এবং নির্যাতনে তারা ভীতসন্ত্রস্ত। আমতলী থেকে আসা অপর একটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও বিএনপি নেতা ভিপি মজিবরের ক্যাডাররা তাদের মারধর ও মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করায় তারা বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে। পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধ্যে বানিয়ারী গ্রামের কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারে গতকাল রোববার সকালে ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় কয়েকটি দুর্গা প্রতিমাও ভাংচুর করা হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে। এ হামলার সুবিচার দাবি করে স্থানীয় জনতা মিছিল সহকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে। হামলায় আহত শেফালী রানীকে স্থানীয় কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ হামলার পর বানিয়ারিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্বরূপকাঠী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, স্বরূপকাঠীর সংখ্যালঘুরা দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনোত্তর সহিংসতার কারণে ভীতসন্ত্রস্ত। দুর্গা পূজার আনন্দ-উদ্দীপনা তাদের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে না। সবার ভেতরে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রথম আলো, ১৫ অক্টোবর ২০০১