পঞ্চগড়ে তেঁতুলিয়া উপজেলায় এক নারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে রবিউল ইসলাম রুবেল নামে এক মাদরাসা শিক্ষককে বহিষ্কার করার সংবাদ প্রকাশ করায় পঞ্চগড়ে বাংলাটিভির সাংবাদিক ডিজার হোসেন বাদশারের ওপর সন্ত্রাসী হামলার হয়েছে।
এ ঘটনায় পঞ্চগড় সদর থানায় একজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক।
অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলায় সাংবাদিক মহলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নসহ ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত আটকের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
রোববার (১৪ নভেম্বর) রাত ৯টার পরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের শতরংপাড়া গ্রামে কালভাটের উপর সড়ক এ ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম রুবেল জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের পূর্ব বামনপাড়া (সেন্টার নামক) এলাকার আব্দুল গফ্ফারের ছেলে। তিনি একসময় জামাতে ইসলাম ছাত্র শিবিরের সদস্য থাকলেও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক আন্দোলন তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর শাখার সদস্য। এদিকে সাংবাদিক ডিজার হোসেন বাদশা বাংলা টিভির পঞ্চগড় প্রতিনিধি হওয়ার পাশাপাশি সনামধন্য পাথর-বালি ব্যবসায়ী পঞ্চগড় পাথর বাজার ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী।
থানার লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে তেঁতুলিয়া উপজেলায় এক নারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে রবিউল ইসলাম রুবেল নামে এক মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন সাংবাদিক ডিজার হোসেন বাদশা। এরপর বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে হামলার জন্য আগে থেকে ওৎ পেতে থাকেন রুবেল। একই দিন রাতে সংবাদের কাজ শেষে পঞ্চগড় শহর থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রাতে মোটরসাইকেলে রওনা হলে সতরংপাড়া গ্রামে কালভাটের উপর পৌঁছালে অভিযুক্ত বহিষ্কৃত মাদরাসা শিক্ষক রুবেল ২-৩ জনকে নিয়ে কালভাটের উপর চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর হামলা চালায়। একসময় সাংবাদিক বাদশা মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে দুইজন তার গলায় থাকা মাফলার টেনে গলা টিপে ধরে। পরে রুবেল তাকে মারধর করেন। এসময় রুবেল সাংবাদিকের পকেটে ব্যবসায়ীক কাজে রাখা নগদ অর্থ নিয়ে নেয়। তখন সড়কে লোকের আগম দেখতে পেতে ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায় তারা। মারধরের কারণে আহত হন ওই সাংবাদিক। পরে স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে সাংবাদিক বাদশা সাক্ষীদের নিয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় উপস্থিত হয়ে রাতেই লিখিত অভিযোগ করে।
সাংবাদিক ডিজার হোসেন বাদশা বলেন, নারীকে উত্ত্যক্ত করার দায়ে মাদরাসা শিক্ষক রুবেলকে বহিষ্কার করার খবর প্রকাশের জেরে হত্যার জন্য আমার ওপর এই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে রুবেল। যখন আমাকে তারা গতিরোধ করে মারধর করে তখন রুবেলকে চিনতে পারলেও অপর দুই-তিনজনকে চিনতে পারিনি। ঘটনার প্রায় আধাঘণ্টা আগে আমি আমার ব্যবসার এক গ্রাহকের পাঠানো টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তুলি। বাড়ি যাওয়ার সময় রুবেলসহ তার সহযোগীরা মারধর করে আমার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এ ঘটনায় পঞ্চগড় সদর থানায় অভিযোগ করেছি। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও আমার টাকা উদ্ধারসহ তাদের বিচার দাবি করছি।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা হলে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) বেশ কয়েকজন মাদরাসাছাত্রকে বলাৎকারসহ ও অবৈধ সম্পর্ক করে বিয়ে করাসহ গত ১০ নভেম্বর (বুধবার) এক নারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ভজনপুর এলাকার মাদরাসা থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার পর অপর আরেকটি মাদরাসা থেকে শনিবার (১৩ নভেম্বর) রুবেলকে বহিষ্কার করার নিউজ করা হয়। যে কারণে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটে।