দেশের কয়েকটি স্থানে নির্মানাধীন পূজামণ্ডপে তাণ্ডব ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। অব্যাহত রয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা-নির্যাতন। বিভিন্ন স্থানে এর প্রতিবাদে মৌন মিছিল, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে নাটোরের নলডাঙায় নির্মাণাধীন একটি পূজামণ্ডপ তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা সদরের গোপালগঞ্জ ‘সার্বজনিন দুর্গামন্দির ও ধর্মীয় পাঠাগারে’ সোমবার রাতে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তারা প্রতিমা ভাংচুর ও আয়োজকদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায়ও দুর্গা প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সারাদেশে নির্বাচন পরবর্তী অব্যাহত এই তাণ্ডবের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ফরিদপুর শহরে এক বিশাল মৌন মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। জেলার ভাঙ্গায় আজিমনগর গ্রামে নির্যাতনের শিকার এক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর প্রাণনাশসহ নানা ধরনের হুমকি অব্যাহত রেখেছে নির্যাতনকারীরা। এমনকি হুমকি দিয়ে ঐ পরিবারের মেয়ে কলেজ ছাত্রীকে উপর্যুপরি ধর্ষণের ঘটনাকেও অস্বীকার করতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন, লুটপাট, ধর্ষণের প্রতিবাদে মঙ্গলবার কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একই সাথে এই ঘটনা এড়িয়ে যাবার জন্য বর্তমান বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন পরিষদ নেতৃত্ববৃন্দ তারও নিন্দা জানিয়েছেন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতেও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বরগুনার পাথরঘাটায় ১০টি সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। হোগলাপাশা গ্রামে ধর্ষিত হয়েছে এক হিন্দু তরুণী। শরীয়তপুরে নৌকায় ভোট দেয়ার কারণে মঙ্গলবার কোটপাড়া বাজারে ৪ জনকে মারপিট করেছে। সংখ্যালঘুদের শান্তি, ̄ ও সমঅধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামে মুখে কালো কাপড় বেঁধে আধ ঘন্টা স্থায়ী মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ, সচেতন নাগরিক সমাজ, চবি শিক্ষক সমিতি, মহিলা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, এডাবসহ বিভিন্নসংগঠন এ কর্মসূচীতে অংশ নেয়। বিকাল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কর্মসূচী পালনকালে প্রেসক্লাব থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। নাটোর থেকে সংবাদদাতা জানান, সোমবার গভীর রাতে নলডাঙার থানার (পুলিশী থানা) পূর্ব মাধবনগর গ্রামে নিবারণ চন্দ্রের বাড়িতে নির্মাণাধীন পূজামণ্ডপটি ভেঙে তছনছ করে দেয়া হয়। পূজামণ্ডপ ভেঙে দেয়ায় স্থানীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসব নিয়ে তাদের মধ্যে আশঙ্কা কাটছে না। রংপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কাউনিয়ায় মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের পর মঙ্গলবার জেলার সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃত্ববৃন্দ ঘটনাস্থল ঘুরে এসে অবিলম্বে ওই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে ঐ এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। জামালপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দুর্গোৎসবের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিম্নবিত্ত কিছু জেলে পরিবারের।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১৭ অক্টোবর ২০০১